বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫ এএম, নভেম্বর ৩০, ২০২০

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

জালিয়াতির মাধ্যমে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠা প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকা মহানগর আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার আদালত এ পরোয়ানা জারি করেছেন। আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কপিটি সংযুক্ত করেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলে আজ সোমবার চিঠি পাঠানো হবে বলে দুদক সূত্র নিশ্চিত করেছে। দুদক সূত্র জানায়, পিকে হালদারকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনতে গত মাসে দুদকের মানি লন্ডারিং শাখা থেকে একটি চিঠি ইন্টারপোলে পাঠানো হয়। এরপর তারা কিছু বিষয়ে জানতে চিঠিটি ফেরত পাঠায়। পিকে হালদার সপরিবার কানাডায় আছেন। ইন্টারপোলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দুদককে জানান, পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হলে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ সংযুক্ত করে দিতে হবে। এরপর দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। দুদকের একজন মধ্যমসারির কর্মকর্তা বলেন, ‘পিকে হালদারকে দেশে ফেরত আনা এবং তাঁর পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আনতেই আমরা ইন্টারপোলে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু চিঠির সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কপিও চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।’ দুদক সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রাথমিক অনুসন্ধানে কানাডা, সিঙ্গাপুর ও ভারতের বিভিন্ন শহরে পিকে হালদারের পাচার করা ৬৫০ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে। শুধু কানাডার টরন্টোতেই মার্কেট, বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাড়ির শোরুম, চেইন শপসহ প্রায় ৩০০ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদকের অনুসন্ধানসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পাশাপাশি সিঙ্গাপুরে ১০০ কোটি, ভারতে ১৫০ কোটি ও আমিরাতে ১০০ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় জালিয়াতি করে চারটি লিজিং কম্পানি থেকে হাতিয়ে নেওয়া পিকে হালদারের হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য-প্রমাণও পেয়েছে দুদক। অবৈধ ক্যাসিনো কাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান করতে গিয়ে নাম আসে পিকে হালদারের। অনুসন্ধানে দেশ থেকে শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য-প্রামাণ পায় দুদক। গত জানুয়ারিতে ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করলেও দুদকের অধিকতর তদন্তে দেশ-বিদেশে আরো শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসে। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে নেওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে। অনুসন্ধানসংশ্লিষ্ট দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, পিকে হালদার দেশের একটি অর্থপাচারকারী সিন্ডিকেটের সঙ্গে মিলে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাচার করেছেন। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা, ফাস ফাইন্যান্স থেকে দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা, পিপলস লিজিং থেকে তিন হাজার কোটি টাকা এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গত মাসের শেষের দিকে পিকে হালদারের বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য হাইকোর্ট থেকে আদেশ জারির খবর পেয়ে তিনি পিছুটান দেন। দুদক সূত্রে জানা গেছে, পিকে হালদারের দুর্নীতির সঙ্গে নানাভাবে জড়িত এমন ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বিএফআইইউ ও দুদক।
Link copied!