বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১

মঙ্গলবার নিষেধাজ্ঞা, সোমবারই দেশ ছেড়েছেন বসুন্ধরা এমডি

প্রকাশিত: ০২:২৪ পিএম, এপ্রিল ২৭, ২০২১

মঙ্গলবার নিষেধাজ্ঞা, সোমবারই দেশ ছেড়েছেন বসুন্ধরা এমডি

রাজধানীর গুলশানে একটি ফ্ল্যাট থেকে তরুণীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার সায়েম সোবহানের বিদেশযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে আবেদন করে পুলিশ। পরে আদালত পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। আরও পড়ুন: বসুন্ধরার এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ডিএমপির ডেপুটি কমিশনার (গুলশান বিভাগ) সুদীপ কুমার চক্রবর্তীও এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশ যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে আদালতে আবেদন করে। একই সঙ্গে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে যাতে সায়েম সোবহান দেশ ছাড়তে না পারেন। তবে বিমানবন্দর বিমান চলাচল সুরক্ষা ও পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে সায়েম সোবহান আনভীর একটি কার্গো ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করেন। খবর: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর আগে সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকায় একটি ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ ২১ বছরের এক তরুণীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। নিহত মোশারাত জাহান মুনিয়া কুমিল্লার বাসিন্দা মৃত শফিকুর রহমানের মেয়ে। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি রাজধানীর একটি কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। গুলশান পুলিশ জানায়, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী ওই তরুণীর বোন নুসরাত জাহান। সোমবার সন্ধ্যার পর গুলশান-২-এর ১২০ নম্বর রোডের ১৯ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান (মুনিয়া) নামের এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান। তাঁদের বাড়ি কুমিল্লার উজির দিঘিরপাড়। এক লাখ টাকা ভাড়ায় মাস দুয়েক আগে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন মোসারাত। আরও পড়ুন: তরুণীর আত্মহত্যা: বসুন্ধরার এমডির বিরুদ্ধে মামলা গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী গতকাল রাতে বলেন, ঠিক কী কারণে তরুণী আত্মহত্যা করলেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। রাতেই তাঁরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করেছেন। বাদী মামলার এজাহারে বলেন, মোসারাত জাহান (২১) মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। দুই বছর আগে মামলার আসামি সায়েম সোবহান আনভীরের (৪২) সঙ্গে মোসারাতের পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে তাঁরা বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় দেখা করতেন এবং সব সময় মোবাইলে কথা বলতেন। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালে মোসারাতকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে আসামি রাজধানীর বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। সেখানে তাঁরা বসবাস করতে শুরু করেন। ২০২০ সালে আসামির পরিবার এক নারীর মাধ্যমে এই প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে। এরপর আসামির মা মোসারাতকে ডেকে ভয়ভীতি দেখান এবং তাঁকে ঢাকা থেকে চলে যেতে বলেন। আসামি কৌশলে তাঁর (বাদী নুসরাতের) বোনকে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন এবং পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন। এজাহারে আরও বলা হয়, সবশেষ গত ১ মার্চ মোসারাতকে প্ররোচিত করেন আসামি। তিনি বাসা ভাড়া নিতে বাদী নুসরাত ও তাঁর স্বামীর পরিচয়পত্র নেন। ফুসলিয়ে তিনি মোসারাতকে ঢাকায় আনেন। তিনি গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কে বাসা (ফ্ল্যাট-বি-৩) ভাড়া নেন। ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে আসামি ও তাঁর (বাদীর) বোনের স্বামী-স্ত্রীর মতো ছবি তুলে তা বাঁধিয়ে রাখা হয়। আসামি বাসায় এলে কক্ষটি পরিপাটি করে রাখা হতো। বাদী নুসরাত এজাহারে বলেন, বোনের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসামি তাঁকে বিয়ে করে বিদেশে স্থায়ী হবেন। কারণ, দেশে থাকলে আসামির মা–বাবা আসামিকে কিছু না করলেও তাঁর বোনকে মেরে ফেলবেন। গত ১ মার্চ থেকে আসামি মাঝেমধ্যে ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করতেন। বাদী এজাহারে বলেন, ২৩ এপ্রিল মোসারাত তাঁকে ফোন করে বলেন, আনভীর তাঁকে বকা দিয়েছেন। বলেছেন, কেন তিনি (মোসারাত) ফ্ল্যাটের মালিকের বাসায় গিয়ে ইফতার করেছেন, ছবি তুলেছেন। ফ্ল্যাটের মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। এ ছবি ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রীর বান্ধবী ‌পিয়াসা দেখেছেন। তিনি তাঁর (আসামির) মাকে সবকিছু জানিয়ে দেবেন। এজাহারে বলা হয়, আসামি মোসারাতকে বলে, তিনি দুবাই চলে যাচ্ছেন, সে যেন কুমিল্লায় চলে যায়। আসামির মা জানতে পারলে তাঁকে (মোসারাত) মেরে ফেলবেন। এজাহারে নুসরাত বলেন, দুদিন পর ২৫ এপ্রিল মোসারাত তাঁকে ফোন করেন। ওই সময় তিনি কান্নাকাটি করে বলেন, আনভীর তাঁকে বিয়ে করবেন না, শুধু ভোগ করেছেন। আসামিকে উদ্ধৃত করে মোসারাত বলেন, আসামি তাঁকে বলেছেন, তিনি (মোসারাত) তাঁর শত্রুর সঙ্গে দেখা করেছেন। মোসারাতকে তিনি ছাড়বেন না। মোসারাত চিৎকার করে বলেন, আসামি তাঁকে ধোঁকা দিয়েছেন। যেকোনো সময় তাঁর বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাঁরা (বাদী নুসরাতের পরিবার) যেন দ্রুত ঢাকায় আসেন। এজাহারে আরও বলা হয়, নুসরাত তাঁর আত্মীয়স্বজন নিয়ে বেলা দুইটার দিকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় রওনা দেন। আসার পথে বারবার মোসারাতের ফোনে ফোন করেন, কিন্তু তিনি আর ফোন ধরেননি। গুলশানের বাসায় পৌঁছে দরজায় নক করলে ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিচে নেমে আসেন। তাঁরা নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষ থেকে বাসার ইন্টারকমে ফোন করেন। পরে ফ্ল্যাটের মালিকের নম্বরে ফোন দিলে মিস্ত্রি এনে তালা ভেঙে ঘরে ঢোকার পরামর্শ দেন। মিস্ত্রি ডেকে তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার পর তিনি দেখেন, তাঁর বোন ওড়না পেঁচিয়ে শোয়ার ঘরের সিলিংয়ে ঝুলে আছেন। এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, পুলিশ এসে ওড়না কেটে মোসারাতের মৃতদেহ নামায়। আলামত হিসেবে আসামির সঙ্গে ছবি, আসামির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে লেখা ডায়েরি ও তাঁর ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশ সূত্র বলছে, আসামির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় ২৬ এপ্রিল বেলা ১১টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টার মধ্যে যেকোনো সময় মোসারাত মারা যান। বাদী নুসরাত মামলার আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।    
Link copied!