অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় কারাবন্দি টেকনাফ থানা থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায়ও শ্যোন এরেস্ট দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল দুপুর দেড়টায় এই আদেশ দেন চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত। এরপর প্রদীপ কুমার দাশকে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পথে শোরগোল উঠে আদালত প্রাঙ্গণে। এখানে আইনজীবীদের একটি অংশ ওসি প্রদীপকে লক্ষ্য করে ধর ধর খুনি ধর বলে শোরগোল করেন। এর আগে সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয় ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে। এই মামলায় তার স্ত্রী চুমুকি কারণও আসামি। কিন্তু দুদকের মামলা দায়েরের পর তিনি আত্মগোপনে চলে গেছেন।
আদালতের পেশকার নুরুল ইসলাম জানান, সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে দুদকে দাখিলকৃত সমপদ বিবরণীতে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সমপদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার সমপদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে শ্যোন এরেস্ট দেখানোর আবেদনের শুনানি ছিল। আদালত এই আবেদন আমলে নিয়েছেন। পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ সেপ্টেম্বর।
এর আগে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে গত ২৩ আগস্ট ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দীন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। সেই মামলায় ২৭ আগস্ট মহানগর সিনিয়র সেপশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে প্রদীপ কুমার দাশকে শ্যোন এরেস্ট দেখানোর আবেদন জমা দেয়া হয়। সোমবার আদেশের শুনানির জন্য সময় নির্ধারিত ছিল।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. কামাল উদ্দিন বলেন, দুদকের মামলায় সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে আদালতে হাজির করার জন্য গত শনিবার দুপুরে কক্সবাজার কারাগার থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। সেখানে সাধারণ হাজতির মতোই সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন তিনি। তাকে ডিভিশন দেয়া হয়নি। সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় কারাগারে রাখা হয় তাকে। হাতকড়া লাগিয়ে সোমবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়। প্রায় ছয়ফুট উচ্চতার প্রদীপ হেলমেট পরেও মাথা নিচু করে সহকর্মী পুলিশ সদস্যদের ভিড়ে মুখ লুকিয়ে ছিলেন। এজলাসে প্রবেশ করার সময় তাকে দেখতে ভিড় করে উৎসুক আইনজীবী ও আদালতে আসা লোকজন।
তবে প্রদীপের উপর আইনজীবীদের একটি অংশ ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায়। এ সময় প্রদীপ সিএমপি’র পাঁচলাইশ থানায় ওসি থাকাকালে এক আইনজীবীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা স্মরণ করেন আইনজীবীরা। এক পর্যায়ে প্রদীপকে এজলাস থেকে নিয়ে যাওয়ার পথে আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে পৌঁছাতেই আইনজীবীদের ওই অংশ ধর ধর, খুনি ধর বলে শোরগোল করেন।
প্রদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর সারোয়াতলী গ্রামের মৃত হরেন্দ্র লাল দাশের ছেলে। চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা আরসি চার্চ রোডে তাদের নিজস্ব একটি আবাসিক ভবন আছে। সেই ভবনে তার স্ত্রী চুমকি কারণ সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন। গত ৩১শে জুলাই দিনগত রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় অভিযুক্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১০ পুলিশ সদস্য কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন। ওই মামলার তদন্ত করছে র্যাব।