শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এমডি মাজেদে শেষ কর্ণফুলী গ্যাস

প্রকাশিত: ০১:৪৪ পিএম, অক্টোবর ২, ২০২২

এমডি মাজেদে শেষ কর্ণফুলী গ্যাস

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) এমডি বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মাজেদ ও তাঁর সঙ্গে যোগসাজশকারী কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে পেট্রোবাংলার উচ্চ পর্যায়ের একাধিক তদন্তে। তাঁদের বিরুদ্ধে নতুন গ্যাস সংযোগ পাইয়ে দেওয়া, বিচ্ছিন্ন লাইনে পুনঃসংযোগ, লোড বাড়ানোসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, যা প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্বল করে ফেলেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যরা হলেন- জ্বালানি খাতের এই প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (বিপণন-উত্তর) মো. শফিউল আজম খান, মহাব্যবস্থাপক (বিপণন-দক্ষিণ) আমিনুর রহমান ও মহাব্যবস্থাপক (কোম্পানি সচিব) মো. ফিরোজ খান। বলা হয়, তাঁরা মানেননি পদোন্নতির নিয়ম, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা। পরিচালনা পর্ষদকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নেয় এই চক্র। কার্যসিদ্ধির জন্য নিজেদের লোকদের দিয়ে নীতিনির্ধারণী কমিটি গঠন, যোগ্য ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে পছন্দের সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক পদে দায়িত্ব দেওয়া, তদন্ত কমিটির মাধ্যমে অপছন্দের কর্মকর্তাদের হয়রানিসহ নানা অন্যায় কাজে জড়ান তাঁরা। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে দায়ী করা হলেও এই চারজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ আমলে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দেয়। এরই মধ্যে অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে পেট্রোবাংলা। কেজিডিসিএলের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে পেট্রোবাংলা প্রথমে পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী আলী মো. আল মামুনকে (এখন অবসরে) তদন্তের দায়িত্ব দেয়। সেই তদন্তে অধিকাংশ অভিযোগের সত্যতাও মেলে। আলী মো. আল মামুনের প্রতিবেদনে ৯টি বিষয়ের বেশ কিছু কার্যক্রমে গুরুতর অনিয়মের কথা বলা হয়। এই অনিয়মগুলো আরও বিশদভাবে খতিয়ে দেখতে এবং দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আরেকটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে দেয় পেট্রোবাংলা। চার সদস্যের এই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন পেট্রোবাংলার পরিচালক প্রকৌশলী আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ। কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে গত এপ্রিলে পেট্রোবাংলায় একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে এমডিসহ চারজনকে অনিয়ম-দুর্নীতির হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর আগেও দুদকের তদন্তে কেজিডিসিএলের নিয়োগ ও পদোন্নতির জালিয়াতি ধরা পড়ে। ২০১৪-১৫ সালের দিকে নিয়োগ পরীক্ষায় ৩৭ প্রার্থী ফেল করলেও তাঁদের সহকারী ব্যবস্থাপক পদে চাকরি দেওয়া হয়। জোচ্চুরি করে দুই ছেলেকে কেজিডিসিএলে নিয়োগ দেন ওই সময়ের এমডি। জালিয়াতি ধামাচাপা দিতে ওই নিয়োগ কার্যক্রমের নথিও সংরক্ষণ করা হয়নি। ওই সময় দুদক তদন্তে নেমে নিয়োগ পরীক্ষার কোনো কিছুই খুঁজে পায়নি। সংযোগ বাণিজ্য: তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি বিধি ও নিয়মকানুন নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করে সংযোগ বাণিজ্যের মাধ্যমে পকেট ভরেছেন ওই কর্মকর্তারা। মেসার্স মোস্তফা পেপার কোম্পানির শিল্প ও ক্যাপটিভ খাতে ৫ কোটি টাকার বিল বকেয়া থাকায় গত বছরের ৭ জুন গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কেজিডিসিএল। এর পর পরীক্ষা করে কারখানাটির ক্যাপটিভ খাতের মিটারে ত্রুটি পাওয়া যায়। পরীক্ষাটি করা হয় সংযোগ বিচ্ছিন্নের আরও ছয় মাস পর, আর মিটার পরীক্ষার আগে পুনঃসংযোগের জন্য নির্ধারিত কমিটি বাতিল করা হয়। পরে পরীক্ষণ ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে শুধু মার্কেটিং বিভাগের লোকদের দিয়ে নতুন কমিটি করে এমডির নেতৃত্বাধীন চক্র। এতে মিটারে অবৈধ হস্তক্ষেপের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে সহজেই পুনঃসংযোগের সুপারিশ মেলে। ত্রুটিযুক্ত মিটারের কারণে জরিমানাসহ বকেয়া আদায় না করে উল্টো কারখানাটিতে পুনঃসংযোগ দেয় সিন্ডিকেট। গ্যাস বিপণন নীতিমালা ২০১৪ অনুসারে জরিমানাসহ বকেয়া আদায় না করে আবার সংযোগ দেওয়া যায় না। এ জন্য তদন্ত কমিটি এমডি এম এ মাজেদ, জিএম শফিউল আজম খান, নথি উপস্থাপনকারী কর্মকর্তা মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. ফিরোজ খান ও ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) বাসুদেব বিশ্বাসকে দায়ী করে। এ ছাড়া একই কারখানার ৯০০ কিলোওয়াটের জেনারেটরে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া তড়িঘড়ি করে নতুন গ্যাস সংযোগ দিয়েছে একই সিন্ডিকেট। কমিটি এজন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মাজেদ, মহাব্যবস্থাপক শফিউল আজম খান ও নথি উপস্থাপনকারী সৈয়দ মোরশেদ উল্লাহ, সৌমেন ব্যানার্জী ও প্রকৌশলী শামসুল করিমকে দায়ী করেছে। বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই ডায়মন্ড সিমেন্টকে ক্যাপটিভ খাতে নতুন সংযোগ দিয়েছে ওই চক্র। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডায়মন্ড সিমেন্টের গ্যাস সংযোগের আবেদনের পর তা ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর কেজিডিসিএলের ১৬০তম বোর্ড সভায় তোলা হয়। ওই সভায় সেই প্রস্তাব অনুমোদন পায়নি। পরে আর বোর্ড সভায় না তুলে ব্যবস্থাপনা সিন্ডিকেট নিজেরাই গত ৫ ডিসেম্বর ডায়মন্ড সিমেন্টকে গ্যাস সংযোগ দিয়ে দেয়। তদন্ত কমিটি এই অনিয়মের জন্য এমডি এম এ মাজেদ, জিএম শফিউল আজম এবং নথি উপস্থাপনকারী কর্মকর্তা কবির আহমেদ, প্রজিত বড়ূয়া ও শামসুল করিমকে দায়ী করে। আল রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্সকে গ্যাস সংযোগ দিতে ২০২১ সালে ২৩ ডিসেম্বর ডিমান্ড নোট ইস্যু করে কেজিডিসিএল। এই সংযোগের অনুমোদনের বিষয়টি গত ২৮ ডিসেম্বরের বোর্ড সভায় তোলা হয়। তবে বোর্ড সভায় তোলার আগেই ডিমান্ড নোট ইস্যুর অভিযোগটি তদন্ত করে পরের সভায় উত্থাপন করতে বলেন কেজিডিসিএলের চেয়ারম্যান তৎকালীন জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, অভিযোগ প্রমাণ হলে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাকে এই দায় নিতে হবে। তবে পর্ষদ সভার কার্যবিবরণীতে চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় তদন্তের বদলে যাচাই-বাছাই লেখা হয়। পরে তদন্ত না করেই আল রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্সকে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। আবার কোম্পানির জোন-১-এর ডেসপাস বইয়ের পাতা পাল্টে ফেলে আল রাজীর বদলে জালালাবাদ সিএনজির ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দেওয়ার ভুয়া এন্ট্রি বসানো হয়। এসব অনিয়মের জন্য তদন্ত কমিটি এমডি এম এ মাজেদ, কোম্পানি সচিব ফিরোজ খান ও জিএম শফিউল আজমকে দায়ী করে। সায়মা সামিরা টেক্সটাইল মিলের (সাদ মুছা গ্রুপ) ক্যাপটিভ খাতের সংযোগের আবেদন ১৬০তম বোর্ড সভায় অনুমোদন পায়নি। পরে ১৭৫তম বোর্ড সভায় তোলা হলে কোম্পানিটি গ্যাস সংযোগের অনুমোদন পায়। তবে গ্যাস সংযোগ অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি সভার নির্দেশনা অনুযায়ী হয়নি। এই অনিয়মের জন্য তদন্ত কমিটি এমডি এম এ মাজেদ, কোম্পানি সচিব ফিরোজ খান ও জিএম শফিউল আজমকে চিহ্নিত করে। জিন্স এক্সপ্রেসের শিল্প ও ক্যাপটিভ খাতে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। নিয়ম অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে পুনঃসংযোগ না নিলে সেটি স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করে পাইপলাইন অপসারণ করতে হয়। তবে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছর পাইপলাইন ওই কোম্পানিতেই পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এক বছরের মধ্যে সংযোগ বাতিল করার কথা থাকলেও তিন বছর পর ওই কোম্পানিকে পুনঃসংযোগ দেওয়া হয়। এই পুরো অনিয়মের সঙ্গে জিএম আমিনুর রহমান জড়িত বলে তদন্তে উঠে আসে। ইয়ং ইন্টারন্যাশনাল (বিডি) নামে একটি কোম্পানির লোড বাড়ানোর ক্ষেত্রেও দুর্নীতির আশ্রয় নেয় চক্রটি। এই অনিয়মের জন্য এমডি এম এ মাজেদ, জিএম আমিনুর রহমান, ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান ও উপব্যবস্থাপক লোকমান হোসেন গাজীকে দায়ী করে তদন্ত কমিটি। ২০১৯ সালে একটি বড় শিল্প গ্রুপের বকেয়া বিল ১২ কোটি টাকা আদায় না করেই ৭৫ মেগাওয়াটের একটি জেনারেটরে লোড বাড়ানো হয়। একই গ্রুপের আরও দুটি কারখানায় এ বছর লোড বাড়ানো ও নতুন সংযোগ দেওয়া হয়। তবে বকেয়া এখনও আদায় হয়নি। এসব সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বকেয়া বিষয়টি গোপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে বকেয়া নথি গায়েবের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এসব জালিয়াতি ধামাচাপা দিতে চক্রটি নিজেদের পছন্দের লোক দিয়ে একাধিক কমিটি গঠন করে দোষীদের বাদ দিয়ে নিরপরাধ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এ জন্য তদন্ত কমিটি বর্তমান এমডি এম এ মাজেদ, সাবেক এমডি খায়েজ আহমেদ মজুমদার, জিএম শফিউল আজম খান ও জিএম আমিনুর রহমানকে অভিযুক্ত করেছে। এ ছাড়া বেআইনিভাবে আরও গ্যাস সংযোগ দেওয়া, সিরিয়াল ভেঙে গ্যাসের লোড বাড়ানোর অনুমোদনসহ নানা অনিয়েমের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত দল। নিয়োগ-পদোন্নতি বাণিজ্য: তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষ স্বার্থে দক্ষ কর্মকর্তাদের কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি এবং পছন্দের কর্মকর্তাদের একাধিক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ডিঙিয়ে কনিষ্ঠদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়নি যোগ্য ব্যক্তিদের পদোন্নতি। স্বার্থ হাসিলে নতুন কর্মী নিয়োগে গড়িমসি করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ফিরোজ খান প্রশাসন বিভাগের জিএম হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে সাত বছর এক পদ আঁকড়ে রেখেছেন। এ সময় তিনি কোনো পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেননি। এখন পর্যন্ত ৩০ জনকে শাস্তির আওতায় এনেছেন তিনি। এর মধ্যে একজনকে বরখাস্ত, দু'জনকে পদাবনমন, দু'জনের বেতন কাটা ও ১২ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। তদন্ত কমিটি বলছে, পেট্রোবাংলার অন্য কোনো কোম্পানিতে একজন কর্মকর্তা এমন গণশাস্তির ব্যবস্থা করেনি। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ডিসেম্বরের সিনিয়র সিলেকশন কমিটির সভায় ১৭ পদের বিপরীতে ১৩ জনকে সহকারী ব্যবস্থাপক থেকে উপব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়। নিজেদের স্বার্থেই সেই পদোন্নতি আটকে রাখে এমডি এম এ মাজেদের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ১১৮ পদে জনবল নিয়োগের বিষয়ে ২০১৯ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এখনও নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হয়নি। এজন্য তদন্ত কমিটি জি এম ফিরোজ খানকে দায়ী করেছে। সংযোগ বাণিজ্যের জন্য ত্রুটিপূর্ণ মিটার পরীক্ষার কমিটি পাঁচ মাসে তিনবার করা হয়। কমিটিতে প্রকৌশল বিভাগকে পাশ কাটিয়ে মার্কেটিং বিভাগের লোকদের রাখা হয়। এই কর্মকাণ্ডগুলোকে অবৈধ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পদোন্নতি না দিয়ে উল্টো চাকরিচ্যুত: ২০১৬ সালে প্রকৌশলী আমির হামজাকে ডিজিএম থেকে জিএম পদে পদোন্নতির জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়। ওই সময় পদোন্নতি না দিয়ে উল্টো তাঁকে করা হয় চাকরিচ্যুত। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১২ জুলাই পেট্রোবাংলায় পাঠানো আমির হামজার পদোন্নতির নথিতে কোনো অভিযোগ ছিল না। ওই বছরের ২২ আগস্ট হামজাকে পদোন্নতি দিতে কেজিডিসিএলকে চিঠি দেয় পেট্রোবাংলা। কোম্পানির ৯৯তম বোর্ড সভায়ও পদোন্নতির বিষয়টি অনুমোদিত হয়। এর পর কোনো নোটিশ না দিয়ে আমির হামজাকে সাময়িক বরখাস্তের জন্য তৎকালীন এমডির কাছে পরের বোর্ড সভায় নথি উপস্থাপন করেন মহাব্যবস্থাপক ফিরোজ খান। এমডি তখন দেশের বাইরে ছিলেন। দেশে ফিরেই প্রথম কর্মদিবসে কোনো রকম নোটিশ, জবানবন্দি কিংবা শুনানি ছাড়াই আমির হামজাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন এমডি। সাময়িক বরখাস্তের ওই আদেশকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করে তদন্ত কমিটি। বরখাস্তের আদেশে 'প্রাপ্ত অভিযোগ গুরুতর' লেখা হলেও কোনো অভিযোগের বিবরণ দেওয়া হয়নি। কারা কী বলছেন: অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে এমডি এম এ মাজেদের মোবাইল ফোন, হোয়াটসঅ্যাপে কয়েক দিন কল ও এসএমএস পাঠিয়ে সাড়া মেলেনি। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেও দেখা পাওয়া যায়নি। মহাব্যবস্থাপক (বিপণন-উত্তর) মো. শফিউল আজম খান তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো মিথ্যা বলে দাবি করেন। সমকালকে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি ভুল বুঝেছে। মহাব্যবস্থাপক (কোম্পানি সচিব) মো. ফিরোজ খানকে ২০ সেপ্টেম্বর ফোন দেওয়া হলে তিনি এসএমএস করতে বলে কল কেটে দেন। এসএমএসের মাধ্যমে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফিরোজ খান জবাব দেননি। এরপর কয়েক দিন একাধিকবার কল করা হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি। মহাব্যবস্থাপক (বিপণন-দক্ষিণ) আমিনুর রহমান গত ২০ সেপ্টেম্বর ফোন ধরে পরের দিন কথা বলতে চান। পরদিন (২১ সেপ্টেম্বর) থেকে তিনি আর ফোন ধরেননি। অন্য মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, 'প্রতিষ্ঠানের নীতিমালার আলোকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রথমে অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।' জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি। ফলে এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। আইন অনুসারে অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'
Link copied!