বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ তুরস্ক। এর কারণ ভূখণ্ডটির অবস্থান। তিনটি ভিন্ন টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে রয়েছে তুরস্ক। উত্তরে ইউরেশিয়ান প্লেট ও দক্ষিণে আফ্রিকান প্লেট। তবে এর পূর্ব দিকে আরবীয় প্লেট রয়েছে। ইউরেশিয়ান প্লেটের দিকে আরবীয় প্লেট এগিয়ে তুরস্কজুড়ে বড় ভূমিকম্প অনুভূত করে।
প্রায় সব ভূমিকম্পই টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়ার কারণে হয়। পৃথিবীর বাইরের শেলের এই বিশাল টুকরোগুলো ক্রমাগত একে অপরকে ঘষে যাচ্ছে। কোনো কোনো সময় ঘর্ষণের ফলে দুই প্লেট 'আটকে' যেতে পারে। প্লেটগুলো চাপ সৃষ্টির ফলে ‘আটকে’ গেলে ব্যাপক শক্তি নির্গত করে, যা ভূপৃষ্ঠে ভূমিকম্প হিসেবে অনুভূত হয়। ফলে অধিকাংশ ভূমিকম্প সাধারণত ফ্রন্ট লাইন, টেকটোনিক প্লেটের প্রান্ত বরাবর ঘটে।
তুরস্কের এর আগের ভয়াবহ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলও ভূপ্রাকৃতিক দিক থেকে অস্থিতিশীল ওই অঞ্চলে। এখানে রয়েছে পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট। কোনো স্থানে ভূকম্পনের জন্য ফল্ট লাইনের বড় ভূমিকা থাকে। ভূত্বকের বিশাল খণ্ডকে টেকটোনিক ফল্ট বলা হয়। দুটি টেকটোনিক প্লেটের মাঝে থাকা ফাটলই ফল্ট লাইন। পূর্ব আনাতোলিয়ান অবস্থান আরবীয় প্লেট ও আনাতোলিয়ান প্লেটের মাঝামাঝি। ফল্ট লাইন দিয়ে দুই প্লেটের সংঘর্ষ হলেই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আনাতোলিয়ান ফল্টকে আগেই খুব বিপজ্জনক বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও গত ১০০ বছরের বেশি সময়ে ওই ফ্লটে খুব একটা সক্রিয়তা দেখা যায়নি।
১৯৯৯ সালে ইজমিট শহরে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে দেশটিতে ১৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। সোমবার ভোরের ভূমিকম্প তুরস্কের চলতি বছরের মাঝামাঝি অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এমনিতেই দেশটিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা কারণে সংকট চলছে। সেই সময় এমন বড় বিপর্যয় দেশটির রাজনীতিতে নতুন মোড় নিতে পারে। এই বিপর্যয় সরকার কীভাবে সামাল দেয় সেটির ওপর নির্ভর করছে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আসন্ন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে পুননির্বাচিত হবেন কিনা।