শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০১:৪১ পিএম, মে ১৯, ২০২২

বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ

ভর্তুকির চাপ কমাতে তিন খাতে দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তারা হিসাব দেখিয়ে বলেছে, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম না বাড়ালে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই তিন খাতে ৫০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা শুধুমাত্র ভর্তুকি হিসেবে দিতে হবে। ভর্তুকি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়াতে হবে। এরপরই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী দাম সমন্বয় না করা হলে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ খাতেই ভর্তুক দিতে হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। গ্যাসের দাম না বাড়ালে এলএনজি আমদানি ব্যয় পরিশোধ এবং প্রণোদনা প্যাকেজের সুদ ভর্তুকি এবং অন্যান্য ভর্তুকি বাবদ আগামী অর্থবছরে ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন পড়বে। একইভাবে সারের দাম না বাড়ালে এই খাতে ভর্তুকি দিতে হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলছেন, আগামী অর্থবছরে যদি বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম সমন্বয় না করা হয়, তাহলে উল্লেখিত পরিমাণ ভর্তুকি কার্যকর হবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানো হলে ভর্তুকির পরিমাণ কমতে পারে। সবকিছু নির্ভর করবে এই তিন খাতে দাম কতটা সমন্বয় করা সম্ভব হয় তার উপর। তবে এখনই দাম সমন্বয় না করা হলেও বাজেট শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরের শুরতে দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এদিকে, আগামী বাজেটে খাদ্য খাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, চলতি অর্থবছরে খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩২ লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে প্রায় ৭৫ শতাংশ খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হয়েছে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে খাদ্যশস্য বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩২ দশমিক ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রতি বছরই ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ, কৃষি ও জ্বালানি খাতে বর্ধিত হারে ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ছে। প্রায় প্রতি বছরই মূল বাজেটে বরাদ্দের অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে। যেমন-চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় ১২ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরে এই দুই খাতে দিতে হয়েছে ৫৩ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, করোনা পরবর্তী চাহিদা বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও এলএনজির দামের উর্ধ্বগতি এবং সবশেষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ফলে ভর্তুকির চাপও বাড়ছে। রাশিয়া-ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে ভর্তুকির চাপ আরও যে বাড়বে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। এই চাপ অর্থনীতি কিভাবে নিতে পারবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। অর্থ বিভাগের প্রাক্কলন অনুযায়ী, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ- এ তিন খাতে একত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৭৭ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ২৬ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২৭ হাজার ৯১০ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে এ তিন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, নতুন বাজেটে ভর্তুকির চাপ কমাতে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প কোন উপায় নাই। তাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। সূত্র: রাইজিংবিডি
Link copied!