বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১

সাবেক যেসব এমপির আনা গাড়ি নিলামে

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০৮:৪৮ এএম

সাবেক যেসব এমপির আনা গাড়ি নিলামে

জনগনের সম্পদ লুটে নিজেদের আখের ঘোছানোকারীরা পালিয়ে যাওয়া এবং ট্যাক্স ফ্রীতে আমদানী করা ড়াড়ি ডেলিভারি না নেওয়ায় তোলা হয়েছিল নিলামে। কিন্তু এসব গাড়ি কেউ কিনতেও চাচ্ছেনা। ক্রেতাও পাওয়া যাচ্ছেনা।যেসব এমপি বেহায়া লোভেী সাবেক এমপিরা এসব নামি-দামি গাড়ি আমদানী করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন হলেন-এস এম কামাল হোসাইন (খুলনা-৩), আবুল কালাম আজাদ (জামালপুর-৫), সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী (ফরিদপুর-২), আক্তারউজ্জামান (গাজীপুর-৫),শাম্মী আহমেদ (সংরক্ষিত আসন-১৭),সুরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী(নওগাঁ-৩),মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ (ময়মনসিংহ-১১),মোহাম্মদ সাদিক (সুনামগঞ্জ-৪),এস এ কে একরামুজ্জামা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১),মো.নাসের শাহরিয়ার (ঝিনাইদহ-২), জান্নাত আরা হেনরী (সিরাজগঞ্জ-২),শাহ সরোয়ার কবীর (গাইবান্ধা-২),মজিবুর রহমান মঞ্জু (বগুড়া-৫), মো. তৌহিদুজ্জামান (যশোর-২), আব্দুল মোতালেব (চট্টগ্রাম-১৫), সানজিদা খানম (সংরক্ষিত আসন-৩২), মোহাম্মদ আলী আরাফাত (ঢাকা-১৭), তারানা হালিম (সংরক্ষিত আসন-১৮),রুনু রেজা (সংরক্ষিত আসন-১২), মো. আসাদুজ্জামান (রংপুর-১),মো. সাদ্দাম হোসাইন (নীলফামারী-৩),মো. সাইফুল ইসলাম (ঢাকা-১৯),এবিএম আনিসুজ্জামান (ময়মনসিংহ-৭) এবং সাজ্জাদুল হাসান (নেত্রকোনা-৪)। এছাড়াও কিছু দুর্নীতিবা কালো টাকার মালিক, কর্মকর্তা,কালো ব্যবসায়ীই এসব দামি-নামি নামে-বেনামে আমদানি করেছেন বলে জানা গেছে।
সময়মত ডেলিভারি না নেওয়া সাবেক এমপিদের আমদানি করা ২৪টিসহ মোট ৪৪ গাড়ি নিলামে উঠেছে। এমপিদের গাড়িগুলো টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার মডেলের। বিলাসবহুল এসব গাড়ির বেশির ভাগেরই দাম শো-রুমে ৮ কোটি টাকার বেশি। নিলামে সর্বোচ্চ তিন কোটি ১০ লাখ টাকা দর উঠেছে মাত্র একটি গাড়ির। সাবেক এমপিদের আমদানি করা ৯টি ল্যান্ড ক্রুজারের দামই দেননি কোনো ক্রেতা। তাদের আনা ২৪ গাড়ির মধ্যে ১৫টিতে আগ্রহী ক্রেতা থাকলেও তারা সংরক্ষিত দামের অর্ধেকেরও কম দর দিয়েছেন।
গত সোমবার টেন্ডার বাক্স উন্মুক্ত করে এ ঘটনায় হতবাক হন কাস্টমস কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রত্যাশিত দামের চেয়ে অনেক কম দর পাওয়ায় গাড়িগুলো আবার নিলামে তোলা হতে পারে। এসব গাড়ির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সিদ্ধান্ত চাওয়া হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেরও (এনবিআর)। 
আমদানি করা পণ্য জাহাজ থেকে খালাস করে বন্দর ইয়ার্ডে রাখার ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারককে সরবরাহ নিতে হয়। এ সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ না নিলে নিয়ম অনুযায়ী সেটি নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করেছিলেন তৎকালীন এমপিরা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। শুল্কমুক্ত সুবিধাও বাতিল করে এনবিআর। তাতে এসব গাড়ি ফেলে যান সাবেক এমপিরা। তাদের ২৪টিসহ এ দফার প্রথম ধাপে মোট ৪৪টি গাড়ি বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এ নিলাম করে। আগ্রহী ক্রেতার সংখ্যা বাড়াতে গত ১৬ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে এবং ঢাকা-চট্টগ্রামে সরাসরি বাক্সে নিলামের মাধ্যমে দর গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ২ থেকে ৪ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত গাড়িগুলো নিলামে অংশগ্রহণকারীদের জন্য সরাসরি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। 
কারা কত গাড়িতে দর দিয়েছে
এবারে ছয়টি গাড়িতে এস এ ট্রেডিং অ্যান্ড কোম্পানি, পাঁচটিতে কেডিএস গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, চারটিতে ফারজানা ট্রেডিং, দুটিতে চট্টগ্রাম কাস্টম বিডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এয়াকুব চৌধুরী, মহসিন মোহম্মদ কবীর ও এস এম আরিফ দর দিয়েছেন। একটি করে গাড়িতে আগ্রহ দেখিয়ে দরপত্র জমা করেছে এ.ই. কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, ক্রয়ডন– কাউলুন ডিজাইন লিমিটেড, এয়ারোউইং এভিয়েশন লিমিটেড, ভ্যানগার্ড গার্মেন্টস লিমিটেড, কনকর্ড প্রগতি কনসোর্টিয়াম, তারাসিমা অ্যাপারেলস লিমিটেড, ইজি সার্ভিসেস লিমিটেড, মেসার্স আল-জাজিরা ট্রেডিং, ফারাজ আব্দুর রহিম ল্যাবএইড লিমিটেড ও রেডিয়েন্ট বিজনেস কনসোর্টিয়াম লিমিটেড। এবার ২০১৯ মডেলের টয়োটা এস্কোয়ারে ২০টি, ২০১৮ মডেলের একটি টয়োটা হ্যারিয়ারে জমা পড়েছে ১৩টি, ২০২০ মডেলের একটি টয়োটা হ্যারিয়ারে ৯টি দরপত্র জমা পড়েছে। 
ওঠেনি প্রত্যাশার অর্ধেক দরও-কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গত ২৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সাবেক এমপিদের ২৪টিসহ মোট ৪৪টি গাড়ি নিলামে বিক্রির ঘোষণা দেয়। একইসঙ্গে আগ্রহী ক্রেতাদের কাছ থেকে নিলামের মাধ্যমে প্রস্তাবিত দর নিতে থাকে। ৪৪টির মধ্যে ৩৫টি গাড়ির বিপরীতে ১৪৩টি আবেদন ও দর প্রস্তাব জমা পড়ে। এর মধ্যে সাবেক এমপিদের ২৪টি গাড়ির মধ্যে টয়োটা ব্র্যান্ডের ৯টি ল্যান্ড ক্রুজারের জন্য কোনো আবেদন ও দও প্রস্তাব জমা পড়েনি। বাকি ৩৫টি গাড়ির মধ্যে সর্বোচ্চ দর পড়েছে সাবেক এমপি এস এম কামাল হোসেনের আমদানি করা গাড়ির। এটির দর পড়েছে তিন কোটি ১০ লাখ টাকা। শুল্কমুক্ত সুবিধার বাইরে আমদানি করা ২০টি গাড়ির দর উঠেছে দুই লাখ থেকে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকার মধ্যে। অথচ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানি ব্যয় ও শুল্ক মিলিয়ে গাড়িগুলোর সংরক্ষিত দর নির্ধারণ করে ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রথম নিলামে অংশ নিয়ে গাড়ি কিনতে হলে তাকে রিজার্ভ ভ্যালুর ৬০ শতাংশ বা তার বেশি সর্বোচ্চ দরদাতা হতে হবে। এ হিসাবে প্রতিটি গাড়ি কিনতে ন্যূনতম ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা দর দিতে হবে। ২৫ শতাংশ করসহ এই গাড়ির সর্বনিম্ন দাম পড়ার কথা ছিল ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা।নিলামে অংশ নেওয়া এস এ ট্রেডিং অ্যান্ড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মো. ইব্রাহিম বলেন, এবার খুব অল্প দাম দিয়ে বিড ধরে রাখছি; যেন পরবর্তী নিলামে এবারের দেওয়া দামের চেয়ে কিছু বেশি দিয়ে গাড়িগুলো নিতে পারি।চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার সাকিব হোসেন বলেন, সাবেক এমপিদের আনা ২৪টি গাড়ি একবারেই নতুন। আমাদের প্রত্যাশা ছিল নিলামে ভালো দাম মিলবে। প্রত্যাশার অর্ধেক দামও মেলেনি। রিজার্ভ ভ্যালুর ৬০ শতাংশ কাভার করেছে এমন গাড়ি মাত্র ১৪-১৫টি। নিলামে ওঠা গাড়ির ব্যাপারে তাই আলোচনা হবে নিলাম কমিটির পরবর্তী সভায়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে এনবিআর।উল্লেখ্য-দুর্নীতিবাজ-চাদাঁবাজ আর ফ্যাসিবাদরা পালিয়ে যাওয়ায় আমদানি করা প্রতিষ্টান পরেছে বিপদে।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!