রবিবার, ১১ মে, ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে ৩ মাসে পুঁজিবাজার সংস্কারের নির্দেশ ড. ইউনূসের

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৫, ০৮:৫৬ পিএম

বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে ৩ মাসে পুঁজিবাজার সংস্কারের নির্দেশ ড. ইউনূসের

টেকসই পুঁজিবাজারে গঠন, সংস্কার ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে পাঁচ নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজার সংস্কার সম্পন্ন করতে বিদেশি বিশেষজ্ঞ (ফরেন এক্সপার্ট) আনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।রোববার ১১ মে  নিজ কার্যালয়ে পুঁজিবাজার নিয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। ধারাবাহিক দরপতন ও বিনিয়োগকারীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এদিন পুঁজিবাজার নিয়ে উচ্চপর্যায়ের এই বৈঠক ডাকা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ,অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) সচিব নাজমা মোবারেক প্রমুখ। বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ প্রেস সচিবের বক্তব্যই তাঁর বক্তব্য বলে জানান।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আজকের বৈঠকের মেসেজ হচ্ছে, পুরো শেয়ারবাজারের দ্রæত অর্থবহ সংস্কার করা, যাতে সবাই উপকৃত হন।শফিকুল আলম বলেন, বৈঠকে বিএসইসি চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ ব্রিফিং করেন। পুঁজিবাজারের কী অবস্থা, গত ৯ মাসে কী ধরনের সংস্কার করা হয়েছে, কোথায় কোথায় এখনো সংস্কার চলমান আছে, সেগুলো নিয়ে পুরো চিত্র তুলে ধরেন। সেই অনুযায়ী প্রাণবন্ত আলোচনা হয়। সেই আলোচনার আলোকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা পাঁচটি প্রধান নির্দেশনা দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, প্রথম নির্দেশনা হচ্ছে, বাংলাদেশে সরকারের যেগুলো কোম্পানি, কিংবা বিদেশি কোম্পানিতে অংশ (স্টেক) আছে, যেমন ইউনিলিভার, সেগুলোকে যাতে খুব দ্রæত আইপিওতে আনা যায়, সেটার জন্য বলেছেন।
দ্বিতীয় নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে অনেক প্রাইভেট কোম্পানি আছে, যাদের টার্নওভার ২-৩ বিলিয়ন ডলার। তাদের অনেক বড় বড় ভেঞ্চার আছে, তাদের যাতে শেয়ারবাজারে আনা যায়, তারা যেন আসে এবং সেটার জন্য কী ধরনের প্রণোদনা দেওয়া যায়, সেটার জন্য রাশেদ মাকসুদকে বলেছেন (প্রধান উপদেষ্টা)। এই সমস্ত কোম্পানি যেমন সিটি গ্রæপ, মেঘনা গ্রæপর মতো আরও অনেক কোম্পানি আছে, সেগুলো কীভাবে আনা যায়, সে কথা বলা হয়েছে।পুঁজিবাজার সংস্কারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে প্রতিহত করার নির্দেশনাও এসেছে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে। এ প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, ‘শেয়ারবাজারে স্বার্থান্বেষী মহল (ভেস্টেড ইন্টারেস্টের গ্রæপ) রয়েছে। ফলে দেখা যায়, সংস্কার উদ্যোগ নিলেও ঠিকমতো কাজ করতে চায় না বা এরা (ভেস্টেড ইন্টারেস্টের গ্রæপ) সংস্কারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। শেয়ারবাজারে যাতে গভীর সংস্কার চালিয়ে নেওয়া যায় এবং এমন ব্যক্তি...যাদের আসলে এখানে ইন্টারেস্ট নেই, সে রকম একটা সংস্কার করতে বলেছেন।
তৃতীয় পরামর্শ হিসেবে বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনার কথা তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, উনি সেট অব এক্সপার্ট আনতে বলেছেন। যাঁরা নির্মোহভাবে সংস্কার ইনিশিয়েট করতে পারবেন। তাঁরা সুপারিশ দেবেন, সেই অনুযায়ী কাজ হবে।শফিকুল আলম যোগ করেন, ‘যাদের এই অভিজ্ঞতা আছে, আমাদের দেশের হোক বা বাইরের দেশের, যাঁরা এই কাজগুলো করে এসেছেন বিভিন্ন শেয়ারবাজারে, যারা বিদেশি এবং এই মার্কেটে কোনো অংশ (স্টেক) নেন, তাঁদের আনতে বলা হয়েছে।
চতুর্থ নির্দেশনায় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘শেয়ারবাজার, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা এই সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে অনেক দুর্নীতি আছে। দুর্নীতিগ্রস্থ অনেকের অনিয়মের কথা শোনা যায়। যাঁদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ আছে, তাঁদের বিরুদ্ধে খুব দ্রæত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে, যাতে পুরো শেয়ারবাজারে বার্তা পৌঁছায় যে, কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না।
ব্যাংকনির্ভরতা কমিয়ে পুঁজিবাজারকে অর্থ জোগানের প্রধান উৎস হিসেবে প্রস্তুত করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে বড় বড় যে কোম্পানি আছে, তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। অনেক সময় সিন্ডিকেটের ঋণ নেয়। অনেকগুলো ব্যাংক থেকে এক–দুই হাজার টাকা ঋণ নেয় বড় প্ল্যান্ট সেটআপের জন্য। এই ঋণটা নিরুৎসাহিত করে বন্ড বা অন্য কোনোভাবে শেয়ারবাজারের মাধ্যমে পুঁজি সংগ্রহ করতে পারেন, সেই বিষয়ে বলা হয়েছে।পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরানোর জন্যই এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন,অতীতে তিন-চারজন বা ভেস্টেড ইন্টারেস্টের গ্রæপ উপকৃত হয়েছেন এবং আমাদের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ডাকাতি হয়েছে চোখের সামনে। আমরা আশা করছি, মার্কেটে এমনভাবে আস্থা ফিরবে, যাতে সবাই উপকৃত হন।’এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, পুঁজিবাজারের কোনো অনুসন্ধান থামিয়ে দেওয়া হয়নি। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, খুবই ভালোভাবে তদন্ত চলছে। বিএসইসিতে খবর নেন।আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, শেয়ারবাজার যেন লুটেরাদের আড্ডাখানা না হয়: প্রধান উপদেষ্টাআস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, শেয়ারবাজার যেন লুটেরাদের আড্ডাখানা না হয়: প্রধান উপদেষ্টা
 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!