সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আজ

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ১২, ২০২৫, ১২:১২ এএম

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আজ

দেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়েছে।আজ সোমবার (১২ মে) এই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। প্রতিবেদন দাখিল উপলক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ওই দিন বেলা ১টায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টসূত্র জানিয়েছে, এ মামলায় অপর দুই আসামি হচ্ছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ প্রধান আইজিপিÑচৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। এই তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার ঘটনায় সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের নেতৃত্বে এই গণহত্যা চালানো হয়েছিল বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।এর আগে গত শুক্রবার চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছিলেন,এই তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা মামলায় সোমবার তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা প্রথমে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর চিফ প্রসিকিউটর সেই তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন এবং আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আকারে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন।শুক্রবার চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট সোমবার চিফ প্রসিকিউটর বরাবরে দাখিল করবে আশা করছি। তদন্ত রিপোর্ট দাখিল হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ,অর্থাৎ ফরমাল চার্জ দাখিলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যা,গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এ মামলায় পরে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকেও (গণঅভ্যুত্থানের সময় আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন) আসামি করা হয়।
এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের দাখিলের সময় এ পর্যন্ত তিনবার বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ২০ এপ্রিল এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সময় বৃদ্ধির আবেদন করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় দুই মাস বাড়িয়ে আগামী ২৪ জুনের মধ্যে জমা দেওয়ার সময় নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল। অবশ্য এর আগেই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করার কাজ শেষ হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে।এই মামলা ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম ও খুনের ঘটনায় তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অপর মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকান্ডের ঘটনায়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম একাধিকবার উল্লেখ করেছেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘সুপিরিয়র কমান্ডার’ (সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা) ছিলেন শেখ হাসিনা।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলি করে হত্যা করা হয় ছয়জনকে। গণহত্যার এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনকে আসামি করে ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গত ২১ এপ্রিল এই প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে জমা দেয় তারা।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় এটিই ছিল তদন্ত সংস্থার প্রথম কোনো চূড়ান্ত প্রতিবেদন। তদন্ত সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আকারে জমা দিতে চার সপ্তাহ সময় নিয়েছে প্রসিকিউশন। আগামী ২৫ মের মধ্যে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করার কথা রয়েছে। অবশ্য তার আগেই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা যাবে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।এ বিষয়ে ফেসবুক পোস্টে তাজুল ইসলাম লেছেন, ‘ইতোমধ্যে চানখাঁরপুল হত্যাকান্ডের দায়ে সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। ওই হত্যকান্ডের দায়ে আনুষ্ঠানিক বিচারের জন্য ফরমাল চার্জ চলতি সপ্তাহেই দাখিল করা হবে এবং এর মাধ্যমে জুলাই গণহত্যার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!