দেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের মতো আত্মগোপনে আছেন পুলিশ প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তাও। এদেরমধ্যে একজন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন-অর-রশীদ। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুনকে ঘিরে নানা তথ্য ছড়াতে থাকে। যার মধ্যে বিমানবন্দরে হারুনের ওপর হামলা, সিএমএইচে ভর্তি, অন্য বাহিনীর হেফাজতে থাকা, আর সর্বশেষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়া।
হারুনের অবস্থান নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। তবে নানা তথ্যের মাঝেও এখনো হারুনের অবস্থান অজানা। অজ্ঞাত স্থান থেকেই সম্প্রতি প্রবাসী এক সাংবাদিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়াসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন পুলিশের সাবেক এই কর্মকর্তা। বর্তমান অবস্থান ও কাজে যোগ না দেয়ার বিষয়ে হারুন-অর-রশীদ বলেন,‘আমাকে ঘিরে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছিল। তখনো আমি চুপ ছিলাম। সরকার যখন বলল, সবাইকে কাজে যোগ দিতে। তখন আমি গত ৮ আগস্ট ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে তখনই যোগ দিতে নিষেধ করেন। আমাকে নিরাপদ স্থানে থাকতে বলেন। আমি যোগদান করতে গেছি। কিন্তু আমি যোগ দিতে পারিনি। দুই দিন পর দেখি আমার নামে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি,কমিশনার ও আমাকে হুকুমের আসামি করা হয়। তখন আমি অবাক হলাম। আমি তো ডিবিতে কাজ করি। ডিবির কাজ হলো মামলা তদন্ত করা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্দেশ দিলে আমরা গ্রেপ্তার করি। মোহাম্মদপুরে তো আমি গিয়ে মারামারি করিনি,এটা তো আমার কাজ না। অতিরিক্ত কমিশনার কি মারামারি করতে যায়? আর ডিএমপিতে কমিশনারের পরে ৬ জন অতিরিক্ত কমিশনার। আমি হলাম ৬ নম্বর কমিশনার। সেখানে আমার নামে যখন মামলা হলো তখন তো একটুৃ।
আবার বলা হলো মামলা হলেও সমস্যা নেই। ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকলে গ্রেপ্তার করা হবে না। আমি মনে করলাম ভালো কথা। ভাবলাম জয়েন করব। পরের দিন দেখলাম একজন উপদেষ্টা বললেন, যেসব পুলিশ কর্মকর্তা জয়েন করেননি আপনারা তাদের ধরে নিয়ে আসেন। আমি তখন আরো অবাক হলাম। আমি যদি চাকরিতে জয়েন না করি তাহলে প্রসিডিং করবে। আর যোগ দিলে আমাকে দিয়ে জোর করে চাকরি করাবেন। এটা শোনার পরে আমার মনে হলো রিস্ক। মানে আমার লাইফ ঝুঁকির মধ্যে। এখন মানুষকে ধরে যেভাবে পেটানো, ডিম মারা হচ্ছে। যদি আমাকেৃ। আগে তো বাঁচতে হবে। আমি ইচ্ছাকৃতভাবে একটু চুপ আছি।একটি সূত্রে জানা যায়, সেপ্টেম্বরেন শেষের দিকে বাংলাদেশ ছাড়েন হারুন অর রশীদ। আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন সাবেক ডিবি প্রধানের স্ত্রী ও সন্তানরা। তাই আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা ছিল হারুন অর রশীদের। সেই ভিসায় নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে এসে বসবাস শুরু করেছেন তিনি। নিউ ইয়র্কের লংআইল্যান্ডের বাংলাদেশি কমিউনিটির কয়েকজনের সহায়তা পাচ্ছেন সাবেক ডিবি প্রধান। সূত্রটি আরো জানায়, ২০০৬ সালে ডিভি লটারি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান হারুনে স্ত্রী। তারপর থেকেই হারুনের পরিবার সেখানে বসবাস করছেন। আর সাবেক ডিবি প্রধান নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াত করতেন সেখানে।
আপনার মতামত লিখুন :