আইনব্যবসায় দেশের নি¤œ থেকে উচ্চ আদালতে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের রমরমা ব্যবসা। অন্যদিকে আওয়ামীপন্থিদের চেম্বারে চলছে খড়া, নেই মক্কেল। প্রতিনিয়তই মামলা বেড়েছে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের চেম্বারে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পর আদালতে বিচারাধীন থাকা অনেক মামলা আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের কাছ থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী অনেকের কমেছে মামলা পরিচালনা। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের হওয়ায় এখন অনেকেই পলাতক। মক্কেলদের নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং ভুল বুঝিয়ে আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীদের মামলা হাতবদল হয়ে চলে যাচ্ছে বিএনপিপন্থিদের চেম্বারে। ফলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ব্যবসা এখন রমরমা। উচ্চ আদালতে তারা জামিন, খালাস ও মামলা প্রত্যাহারের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
একাধিক আইনজীবী বলেছেন, শুধু রাজনৈতিক যোগাযোগের কারণে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মামলা বাড়ছে। বিএনপি আগামীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারে– সে সম্ভাবনায় মক্কেলরা ছুটছেন তাদের কাছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুপ্রিম কোর্টের এক সিনিয়র এক আইনজীবী বলেছেন,বিচারপ্রার্থীদের বিভ্রান্ত করে কাঙ্খিত প্রতিশ্রæতি দিয়ে মামলা ছিনতাই করা হচ্ছে। সরাসরি আইনজীবী বা তাদের সহকারী মামলার বাদীকে ভুল বুঝিয়ে নিতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ছেন এসব অনৈতিক কর্মকান্ডে। বিচারপ্রার্থীদের কাছে বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা আদালতে আসেন না, পলাতক রয়েছেন। তারা হত্যা মামলার আসামি। এসব কথা বলে কৌশলে মামলা বাগিয়ে নেয়া হচ্ছে।
এসব কারণে বিভিন্ন চাপে মামলা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা। সরাসরি ও বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে মামলার অনাপত্তি ছাড়পত্র (এনওসি)। এতে করে বিচারপ্রার্থীর মামলা ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। তাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ফি। এদিকে, গত চার মাসে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে বেশ কয়েকজন আইনজীবীর তৎপরতা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। তারা সময় দিতে না পেরে শুধু আদালতে গিয়ে বসে থাকবেন, শুনানি করবেন না– তাতেই তাদের ফি দিতে হচ্ছে।
ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উচ্চ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মনসুরুল হক চৌধুরী, শ ম রেজাউল করিম, নুরুল ইসলাম সুজন, মাহবুব আলী, এ এম আমিনউদ্দিন, শাহ মঞ্জুরুল হক, এ কে এম ফয়েজ, গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, রবিউল আলম বুদুসহ বেশ কয়েকজনের চেম্বারে ছিল বিচারপ্রার্থীর উপচে পড়া ভিড়। সে সময় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার বিষয় ছিল না। শুধু আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ আছে, এ কারণে তাদের চেম্বারে যেতেন মক্কেলরা। সরকার পতনের পর তাদের চেম্বারে ভিড় কমেছে।
বর্তমানে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের চেম্বারে একই প্রবণতা সরেজমিন দেখা গেছে। তাদের চেম্বারে ভিড় আগের চেয়ে বেড়েছে কয়েক গুণ। এর মধ্যে রয়েছেন বিএনপি নেতা সিনিয়র আইনজীবী জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাবেক সম্পাদক সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল প্রমুখ।
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট বারের সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, বারে অতীতে আমরা দেখেছি যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতাসম্পন্ন আইনজীবীদের ব্যস্ততা থাকত। যেমন প্রয়াত এস আর পাল খন্দকার মাহবুবউদ্দিন আহমদ, সিরাজুল হক, টি এইচ খান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ প্রমুখ। তবে ফ্যাসিবাদী আমলে দক্ষতা, মেধা ও যোগ্যতার বদলে প্রাধান্য পেয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব ও শেখ পরিবারের অনুগত হওয়া, যারা বিচারক নিয়োগ ও বিচারক পদায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকতেন।
তিনি আরো বলেন, এ অবস্থার কারণে সৎ, যোগ্য ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আইনজীবীদের মধ্যে প্রচন্ড হতাশা সৃষ্টি হয়। তরুণ আইনজীবীরাও ওই একই পথে হাঁটতে থাকেন। এখনো যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসেনি; কিন্তু আসার সম্ভাবনা আছে– তাদের মধ্যে কয়েকজন আইনজীবীর অস্বাভাবিক ব্যস্ততা বেড়েছে। এতে করে আইনজীবী সমাজ ক্ষুব্ধ ও হতাশ। এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, বর্তমান সময়ে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা বিচারপ্রার্থীদের প্রতিকার দিতে না পারায় তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। যারা আগে মাসে দু-একটি মামলা পরিচালনা করতেন, রাজনীতির পালাবদলে এখন তাদের চেম্বারে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন এক শ্রেণির লোক। কারণ তারা বিচারপ্রার্থীদের কাঙ্খিত আদেশ পাইয়ে দিতে নানা প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন। তবে প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন নিয়েও জটিল সমিকরন।
আপনার মতামত লিখুন :