জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম জানিয়েছেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি কোনো রাজনৈতিক দল হবে না। রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যেমন দল হয়, এ রকম হবে না। কিন্তু জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি রাজনৈতিক শক্তি। দুটির মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। দল যেমন রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে, সরাসরি রাজনীতিতে অংশ নেয়, নির্বাচনে যায়। কিন্তু রাজনৈতিক শক্তি যেটি করবে, এটি লিডারশিপ তৈরি করবে আগামীর বাংলাদেশে। সেটা হতে পারে পলিটিক্যাল লিডারশিপ, হতে পারে অর্গানাইজেশনাল লিডারশিপ, হতে পারে ভলান্টিয়ারিং লিডারশিপ।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে পঞ্চগড় সরকারি অডিটরিয়ামে জাতীয় নাগরিক কমিটির ‘পঞ্চগড় রাইজিং’ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
সারজিস আলম বলেন, বিগত অভ্যুত্থান সর্বশেষ যে জায়গায় গিয়ে শেষ হয়েছে,তা শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। সেখানে ছাত্রসহ সব বয়সের মানুষ অংশ নিয়ে ছিল। এই অভ্যুত্থানকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে এবং আগামীর বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের যে ডিমান্ড, সেগুলো পূরণ করার জন্য যারা নাগরিক আছেন, এখানে নাগরিক যে অর্থে বোঝানো হচ্ছে যে ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার পর যে সময়টা বা কেউ পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কর্মক্ষেত্রে চলে গেছেন, এমন ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত যে মানুষগুলো। এই মানুষগুলোকে একটি প্ল্যাটফর্মে আনার প্রয়োজন হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরই সিনিয়র-জুনিয়র মিলে কয়েকজন ভাই-বন্ধু আরেকটা প্ল্যাটফর্মের দায়িত্ব নেন। যেটি হচ্ছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্পর্ক আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে সেটি এ রকম নয়, যে রকম সম্পর্ক আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছাত্রলীগের, ভ্রাতৃপ্রতিম বা পিতৃপ্রতিম—এ রকম কিছু নয়। রুট হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যাদের নিয়ে ডিল করছে, তাদের বয়সটা তুলনামূলক কম। তাদের বয়স ২৭ থেকে ২৮ বছরের নিচে। আর জাতীয় নাগরিক কমিটি যাদের নিয়ে ডিল করছে, তাদের বয়স ২৭ কিংবা ২৮ বছরের ওপরে।
সারজিস আলম বলেন,শেখ হাসিনা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বিগত ১৬ বছরে যেভাবে কর্তৃত্ববাদী মনোভাব নিয়ে চলেছেন, এতে বিগত ১৬ বছরে বাংলাদেশে কোনো লিডার তৈরি হয়নি। তৈরি হয়েছে শেখ হাসিনার দাস, শেখ হাসিনার দালাল কিংবা আমাদের মতো নীরব কিছু দর্শক। যারা চুপচাপ সবকিছু সহ্য করে গিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি,আগামীর বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠানগুলো,এগুলোকে ডেভেলপ করতে গেলে আগে আমাদের লিডার তৈরি করতে হবে। যাদের ওই ব্যক্তিত্ব থাকবে, ওই এডুকেশনাল কিংবা ইন্টেলেকচুয়াল কোয়ালিটি থাকবে, যাদের অর্গানাইজিং ক্যাপাবিলিটি থাকবে এবং লিডার হিসেবে ওই মানসিকতা থাকবে, কেউ আমার অনুসারী নন, সবাই আমার সহযোদ্ধা হবেন। এই লিডার তৈরি প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন আগামীর বাংলাদেশে। এই লিডার শুধু পলিটিক্যাল লিডার, এমনটা নয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের লিডার প্রয়োজন। এই লিডার তৈরি কাজটা করবে আমাদের জাতীয় নাগরিক কমিটি। পাশাপাশি এই প্ল্যাটফর্ম একটা প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে আগামীর বাংলাদেশে।
সারজিস আলম আরো বলেন, দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দল আসবে। এক বা একাধিক রাজনৈতিক দল আসবে। এই অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্বে ছিলেন, হয়তো তাদের নিয়েই এই রাজনৈতিক দল আসবে। কিন্তু কেউ যদি ওই রাজনৈতিক দলে যান, তারা নাগরিক কমিটি থেকে বের হয়ে যাবেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যদি কেউ সেই রাজনৈতিক দলে যেতে চান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পদগুলো ছেড়ে তাকে যেতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :