বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

এবার অনেকের ফিরতে হবে দেশে, ট্রাম্প অ্যাকশন

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২৫, ০১:০৩ এএম

এবার অনেকের ফিরতে হবে দেশে, ট্রাম্প অ্যাকশন

শপথ নেওয়ার পরেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে এবার যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হতে চলেছে অনেকের। জন্মসূত্রে নাগরিক হওয়ার আইনটি কলমের এক খোঁচায় বাতিল করে দিয়েছেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার প্রথমদিনেই তিনি এমন সিদ্ধান্তের কথা সাফ জানিয়ে দেন। এর ফলে নতুন করে কেউ আর জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক হতে পারবেন না। এছাড়া আইনটি বাতিল হওয়ায় এ সুবিধার আওতায় যেসব পিতা-মাতা সন্তানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন তাদের মার্কিন ভূমি ত্যাগ করতে হবে। সেখানে হাজার হাজার বাংলাদেশিকেও এখন বিপাকে পড়তে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তাদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হতে পারে। 
এদিকে ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হচ্ছে। এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে কেউ কেউ আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছেন। ১৮টি অঙ্গরাজ্য, ওয়াশিংটন ডিসি ও সানফ্রানসিসকোর দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, ‘বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্টের অভিবাসন আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নাগরিকত্বের অধিকার কেড়ে নেওয়ার নির্দেশ প্রেসিডেন্টের আইনি এখতিয়ারবহির্ভূত।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে জন্মগত নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। এই আইনে বিশেষভাবে বলা আছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করা এবং রাষ্ট্রের নাগরিকের অধিকার পাওয়া ব্যক্তিরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যে রাজ্যে বাস করেন তার নাগরিক। এই নীতিটি ১৮৯৮ সালে সুপ্রিমকোর্ট ইউনাইটেড স্টেটস বনাম ওং কিম আর্কের মামলা দ্বারা নিশ্চিত করা হয়। এতে স্পষ্ট করা হয়, অভিবাসী পিতামাতার যেসব সন্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করবে তারা মার্কিন নাগরিক হিসাবে বিবেচিত হবে। এছাড়া তাদের দেখাশোনা করার জন্য তাদের পিতামাতাও ১৮ বছর পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবেন। 
এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অধিকারটি দেওয়া হয়েছিল। সাংবিধানিক এই অধিকার অনুযায়ী কেউ যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন তাহলে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মার্কিন নাগরিক হয়ে যান। কিন্তু ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এ সুবিধা বাতিল করে দিয়েছেন। এর ফলে এখন আর অবৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা কারও সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে এই সুবিধাটি আর পাবে না। বলা হচ্ছে, সারা বিশ্ব থেকে প্রতিবছর প্রায় ১ মিলিয়ন মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সুবিধাটি পেয়ে থাকেন। 
তিনি বলেন, আগে যে শিশুটি জন্ম নিয়ে মার্কিন নাগরিক হয়েছে তার দেখাশোনার জন্য ১৮ বছর পর্যন্ত তার বাবা-মা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সুযোগ পেতেন। অর্থাৎ তারাও এক ধরনের আধা বৈধতা পেতেন। এখন জন্মসূত্রে নাগরিক হওয়ার সুবিধাটি বন্ধ হওয়ার কারণে তারাও আর সুবিধাটি পাবেন না। এখন শুধু তারাই নাগরিকত্ব পাবেন- যাদের মা-বাবা মার্কিন নাগরিক। 
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতে বাংলাদেশের অনেক মানুষের ওপরও এই আইন বাতিলের প্রভাব পড়বে। কেননা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের অনেক নাগরিক বেইআইনিভাবে অবস্থান করছেন। যেদিন আদেশ হয়ে গেছে, তারপর থেকে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাদের আর কাজ দেবে না। কাজ না থাকলে কিভাবে থাকবেন। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এদের বাসা-বাড়ি এবং স্কুল ও হাসপাতালে গিয়েও খুঁজবে। যারা বেআইনিভাবে আছে তারাও পুলিশ দেখলে সেখানে আর থাকতে পারবেন না। বিপদগ্রস্থ হবেন। যারা এখনও অবৈধ বা যারা নিয়মিতকরণ হয়নি তারা এখন বিপদে পড়ে যাবেন। ভারত ইতোমধ্যে আমেরিকা থেকে তাদের ১৮ হাজার অবৈধ নাগরিককে ফিরিয়ে এনেছে। 
তিনি নানান, আরেকটি বিষয়- একজন ব্যক্তি আমেরিকাতে গেল, তার গ্রিন কার্ড হলো। তারপর তার বাবা-মা, ভাই-বোনদের সেখানে নিয়ে যান। এ সুবিধাও ট্রাম্প সরকার বন্ধ করে দিতে পারে। এমনটা হলে যিনি যাবেন শুধু তিনিই আমেরিকায় থাকবেন। বাকিরা যাওয়ার সুযোগ পাবেন না।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সফিউল্লাহ বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নির্বাচনি বক্তৃতায় কঠোর অভিবাসন নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন। তিনি বলেন, যাদের পাসপোর্ট নেই, পুরোপুরিভাবে যারা আমেরিকার নাগরিক নন তাদের সন্তান জন্ম নিলে জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিক হবে না। তিনি বলেন, নাগরিকত্ব যারা পাননি তাদের মধ্যে অনেক ক্যাটাগরির লোক আছেন। আগে নিয়ম ছিল-বিভিন্ন দেশ থেকে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে এসে সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তারা থাকার সুবিধা পেতেন। এজন্য অনেকে এ সুযোগ নিতে গর্ভাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার চেষ্টা করতেন। এটি এখন বন্ধ হয়ে যাবে। বাংলাদেশ থেকে অনেক পরিবারও এভাবে এসেছে। সেটি বন্ধ হয়ে যাবে।  
এম সফিউল্লাহ বলেন,অভিবাসীদের নিয়ে ট্রাম্প আগেও কঠোর অবস্থানে ছিলেন। এবারের টার্মে তার অবস্থান আরও সুদৃঢ়। তবে যেহেতু আইন অনুযায়ী তিনি আর নির্বাচন করার সুযোগ পাবেন না, সে কারণে জনপ্রিয়তা ধরে রাখা নিয়ে তিনি চিন্তা করছেন না। এজন্য ধারণা করা হচ্ছে,ট্রাম্প নির্বাচনের সময় দেওয়া কট্টর প্রতিশ্রæতিগুলো বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসবেন না। এছাড়া আমেরিকানদের অনেকে মনে করেন, বাইরের লোকেরা ঢুকে পড়ে তাদের দেশের অনেক সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহার করছে। এবার ট্রাম্পের এ্যাকশনে ফিরে আসতে হবে অনেকের।-সুত্র-যুগান্তর

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!