নিত্যপণ্যের বাজারে কিছুপণ্য স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে থাকলেও চাল ও তেল নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই চলছে অস্থিরতা। তেল ও চালের বাজারে ফেরেনি স্বস্তি। এরমধ্যে চালের দাম কেজিপ্রতি ৪-৬ টাকা বেড়েছিল। তবে বাজারে সয়াবিন তেলের যে সরবরাহ সংকট ছিল, সেটা এখনো কাটেনি, বরং আরও বাড়ছে। সেই সঙ্গে রোজার আগে নতুন করে বেড়েছে লেবু ও ব্রয়লার মুরগির দামও।
শুক্রবার (১৪ফেব্রæয়ারি) রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, ঠারারিবাজার, হাতিরপুল, জিগাতলা, বউবাজার, খিলক্ষেত,নয়াবাজার ও কারওয়ানবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। অস্থির তেলের বাজারের সংকট যেন কাটছেই না। দোকানগুলোতে পর্যাপ্ত তেল দেখা গেলেও দোকানিরা বলছেন, তেলের সংকট চলছে। ডিলার পর্যায় থেকে মিলছে না পর্যাপ্ত।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের জব্বার স্টোরের বিক্রেতা জানান, ভোজ্যতেলের বাজারে এখনো অস্থিরতা চলছে। রোজার আগে আরেক দফা দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তাও মিলছে না পর্যাপ্ত তেল। যেখানে ১০ কার্টুন বোতলজাত তেল প্রয়োজন, সেখানে মিলছে মাত্র ১টি। তাও সঙ্গে কিনতে হচ্ছে ডাল-আটা ও সুজির মতো পণ্য।
এটিকে রোজার আগে সিন্ডিকেটের নতুন কৌশল দাবি করে ভোক্তারা বলছেন, বাজারে পর্যাপ্ত তেল রয়েছে। তবে রোজায় দাম বাড়ানোর জন্য ইচ্ছে করে মজুত করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের এই সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারলে রোজায় সাধারণ মানুষকে কষ্ট ভোগ করতে হবে।গত বছর রোজার আগে সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল ব্যবসায়ীরা। এবার সেই প্রবণতা শুরু হয়েছে দুই মাস আগে থেকেই।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৮০-৮৪ টাকা, আটাইশ ৫৮-৬০ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫২-৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬-১১৮ টাকায়।রাজধানীর কারওয়ানবাজারের বরিশাল রাইচ এজেন্সির বিক্রেতা বলেন, চালের দাম কমেনি। বস্তায় সামান্য কিছু কমলেও সেটি নগণ্য। মিল পর্যায়ে তদারকি নেই। এখানে তদারকি না বাড়ালে সামনে দাম আরও বাড়তে পারে।
শবে বরাত উপলক্ষে কিছুটা চড়েছে মুরগির বাজারও। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে গেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। আর প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩০০-৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৪০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকায়।খিলক্ষেত মুরগি ব্যবসায়ী রাজেন বলেন, শবে বরাত উপলক্ষে মুরগির চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। তাছাড়া বিয়ে-শাদি চলছে। যার প্রভাবে বাজার সামান্য চড়া।শবে বরাতে চাহিদা বেড়েছে গরুর মাংসেরও। এতে কোনো কোনো বাজারে কেজি ৫০ টাকা বেড়ে ৮০০-৮৫০ টাকা হয়েছে। সবগুলো বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮৫০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
তবে স্থিতিশীল রয়েছে ডিমের দাম। প্রতি ডজন লাল ডিম ১৩০-১৩৫ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৩৫-২৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে আসন্ন রমজান ও সরবরাহ সংকট দাবি করে নতুন করে বাড়ছে লেবুর দাম। বর্তমানে আকার ও জাতভেদে প্রতি ডজন লেবু বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৮০ টাকা পর্যন্ত। আর এক হালি লেবুর জন্য গুনতে হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত।
রাজধানীর সবচেয়ে বড় আড়ত কারওয়ানবাজারের কাঁচাসবজি ব্যবসায়ী গিয়াস ও মাফুজ বলেন, চাহিদার তুলনায় বাজারে লেবসহ প্রায় সবগুলো তরকারির সরবরাহ কম। এছাড়া সামনে রমজান রয়েছে। সব মিলিয়ে বাজার চড়েছে। রোজায় দাম আরও বাড়তে পারেনিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়রই। ক্রেতারা বলছেন,নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।
আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।নিয়মিত বাজার মনিটর করার তাগিদ রয়েছে ভোক্তাদের।
আপনার মতামত লিখুন :