শনিবার, ০১ মার্চ, ২০২৫, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩১

গা ঢাকা কতদিন! অপরাধের সাজাও সামনে আসছে

আইন-অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৫, ১১:৩৭ এএম

গা ঢাকা কতদিন! অপরাধের সাজাও সামনে আসছে

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ যেসব নেতাকর্মি গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত তাদেও অনেকেই গত ৭ মাস যাবত গা ঢাকা দিয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন সাবেক ১৮ মন্ত্রী, ১৩ প্রতিমন্ত্রী,একজন উপমন্ত্রী,স্পিকার,চিপ হুইপ-হুইপসহ পতিত আওয়ামী লীগের দুই শতাধিক সংসদ-সদস্য এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।অপারেশন ডেভিল হান্টের বাইরে থাকা এসব মামলার আসামী কবে ধরা পরবে তা বলতে পারছেনা কেউ-ই। ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই লাপাত্তা তারাও।নানামুখী সুত্রের সাথে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেউ কেউ ইতোমধ্যে সুযোগ বুঝে দেশের বাইরে চলে গেলেও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বেশিরভাগ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সংসদ-সদস্য দেশের ভেতরেই লুকিয়ে আছেন। অভিযোগ রয়েছে, এরা আত্মগোপনে থেকেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতী সরকারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এমনকি বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ করতেও তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছিলেন গোপালগঞ্জ-৩ আসনের। তিনি আছেন ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ঢাকাতেই আত্মগোপনে আছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আত্মগোপনে। সব সময় নানা বিষয়ে মিডিয়ার সামনে অসংলগ্ন কথা বলা এই রাজনীতিক ৫ আগস্টের পর থেকেই লাপাত্তা। বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় পালানোর কথা বলে সেখানেও যায়নি কাদের।
এছাড়াও আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য এবং আলোচিত সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন-সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বস্তায় ঘুষ নেওয়া আসাদুজ্জামান খান কামাল (ভারত), আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য,সাবেক মন্ত্রী ও ঢাকা-১৩ আসনের জাহাঙ্গীর কবির নানক (ভারত),সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী (যুক্তরাষ্ট্র),সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম (লন্ডন),আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক,সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী,ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ (বেলজিয়াম),সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল (যুক্তরাষ্ট্র), সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী(লন্ডন),সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান লন্ডন, প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু (ভারত), সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক (ভারত), আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সাবেকমন্ত্রী, শেখ হাসিনার আত্মীয় ও  শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব(আগরতলা),সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (ভারত), সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী একেএমএ আবুল মোমেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল, সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সামন্তলাল সেন ও জাহিদ মালেক।
প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন-সাবেক নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (লন্ডন), সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী শিকদার (কলকাতা), সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. মোতাহার হোসেন (ঢাকা), সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত (যুক্তরাষ্ট্র), সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল (ভারত), সাবেক প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী (ঢাকা), সাবেক নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন (ঢাকা), সাবেক রেলপথমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের কাজী কেরামত আলী, সাবেক পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম (ভারত)। এছাড়াও সাবেক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও শরীয়তপুর-২ আসনের একেএম এনামুল হক শামীমও (ভারত) ৫ আগস্টের পর থেকেই আত্মগোপনে।
এছাড়াও আওয়ামী লীগ আমলের প্রভাবশালী সংসদ-সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন-সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ (ভারত), দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের মাহবুবউল আলম হানিফ (কানাডা), আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম (ভারত), সাবেক চিফ হুই নূর-ই-আলম চৌধুরী (ভারত),সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম (কলকাতা), সাবেক হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার (কলকাতা), আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক,সাবেক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন (কলকাতা),সাবেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু, সাবেক হুইপ মাশরাফি বিন মুর্তজা,একেএম শামীম ওসমান, সিলেটশফিকুর রহমান চৌধুরী (লন্ডন), শুহাম্মদ শফিকুর রহমান,আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার (ভারত),আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম (আমেরিকা),নিজাম উদ্দিন হাজারী (সিঙ্গাপুর),ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান (যুক্তরাষ্ট্রে),শেখ হাসিনার আত্মীয় ও বাগেরহাট-১ আসনের শেখ হেলাল উদ্দীন (ভারত),শেখ হাসিনার আরেক আত্মীয় শেখ সারহা নাসের তন্ময় (লন্ডন),এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ (ভারত), শেখ হাসিনার আরেক আত্মীয় শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল (আমেরিকা), আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন (ভারত), নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন (ভারত),ছোট মনির (ভারত) খান আহমেদ শুভ (ভারত),অনুপম শাহজাহান জয় (ভারত),ফেরদৌস আহমেদ (আমেরিকা), মাইনুল হোসেন খান নিখিল (ভারত), নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও গাইবান্ধা-৫ আসনের মাহমুদ হাসান রিপন (কলকাতা),ওমর ফারুক চৌধুরী, একেএমএ আউয়াল (ভারত)।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, জুলাই-আগস্টে শহিদ হয়েছেন ৮৪৪ জন। আহত হয়েছেন ১৩ হাজার ২৫৮ জন। পুলিশ ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, শুধু ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অন্তত ৪১০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় হাসিনার পাশাপাশি তার সরকারের মন্ত্রী,সংসদ-সদস্যদেরও আসামি করা হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে শেখ হাসিনাসহ অন্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কতটি হত্যা এবং হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে, সেটির পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও হাসিনা সরকারের সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সংসদ-সদস্য এবং শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি গুলি করে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, অপহরণ ও গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ প্রভাবশালী মন্ত্রী, সংসদ-সদস্যসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের অব্যাহত রয়েছে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের ২৯ জন মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হয়েছেন আরও ৬ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রী। এর বাইরে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত ৪২ জন সংসদ-সদস্য। এদের বাইরে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংরক্ষিত আসন থেকে নির্বাচিত আহমেদ নাজমীন সুলতানা ও মোসা. সাফিয়া খাতুনকেও সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিরা সবাই ৫ আগস্টের পর থেকেই কেউ দেশে, কেউবা আবার দেশের বাইরে যে যার মতো করে আছেন আত্মগোপনে।গ্রেফতারকৃত মন্ত্রীদের মধ্যে শুধু সাবের হোসেন চৌধুরী এবং এমএ মান্নান জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। অন্যরা গণহত্যাসহ একাধিক মামলায় কারাগারে বিচারাধীন। এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক সুত্রগুলো জানায় গা ঢাকা দেওয়া নেতারা নানাভাবে চেষ্টা করছে মামলা থেকে জামিন কিংবা অব্যাহতি পাওয়ার। তারা দেশের সাবিৃক রাজনৈতিক াবস্থারও খোজ-খবরও নিচ্ছেন। পলাতকদেও মধ্যে কেউ কেউ নিজ দলের কর্মিদেও দ্বারা আক্রমনের শিকারও হতে পারেন বলে আশংকা থেকেই যাচ্ছে।যুগান্তর

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!