বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১

পুরোনোশিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার বিপুলসংখ্যক বই ছাপাই হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৮:০৫ এএম

পুরোনোশিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার বিপুলসংখ্যক বই ছাপাই হয়নি

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হচ্ছে কাল থেকেই। কিন্তু এখনো প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিপুলসংখ্যক বই এখনো ছাপার কাজ শেষ করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ফলে শিক্ষাথীদের মধ্যে শুরু হয়েছে একধরনের উৎকন্ঠা। মোট ৪০ কোটির বেশি বইয়ের মধ্যে গত শনিবার পর্যন্ত পৌনে ৫ কোটি বই উপজেলা পর্যায়ে পাঠানোর জন্য ছাড়পত্র বা পিডিআই হয়েছে।
সার্বিক কারণে এবার নতুন বছরের প্রথম দিনে সারা দেশে সব শিক্ষার্থী সব বই পাবে না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে অন্ততপক্ষে তিনটি করে নতুন বই (বাংলা, ইংরেজি ও গণিত) দিয়ে শিক্ষাবর্ষ শুরু করার পরিকল্পনা করছে এনসিটিবি। কিন্তু বই ছাপার যে পরিস্থিতি,তাতে সেই পরিকল্পনাও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসা ২৯ ডিসেম্বর রোববার আশা প্রকাশ করে বলেছেন,বছরের প্রথম দিনেই সব শিক্ষার্থী অন্তত তিনটি করে বই পাবে। এর মধ্যে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ের কিছু বইও পাবে। ৫ জানুয়ারির মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির সব বই পৌঁছে যাবে। ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি করে বই বছরের প্রথম দিনে যাবে। এসব শ্রেণির আরও ৫টি করে বই ১০ জানুয়ারির মধ্যে যাবে। বাকি বইগুলো ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থীর হাতে যাবে।
তবে এনসিটিবি ও মুদ্রণকারী সূত্র বলছে,প্রাথমিকের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই ছাপায় অগ্রগতি ভালো। চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার অগ্রগতি খুবই কম। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জন, আগের দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র দেওয়া,দেরি করে পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করাসহ ছাপাসংক্রান্ত কাজে বিলম্বের কারণে এবার এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখনো বেশ কিছু পরিমাণ বই ছাপার জন্য মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তিপত্র সইয়ের কাজটিও শেষ হয়নি। ফলে ফেব্রুয়ারির আগে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছানো কঠিন হবে।
ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি করে বই বছরের প্রথম দিনে যাবে। এসব শ্রেণির আরও ৫টি করে বই ১০ জানুয়ারির মধ্যে যাবে। বাকি বইগুলো ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থীর হাতে যাবে।
দেশে উৎসব করে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার রেওয়াজ শুরুহয় ২০১০ সালে। তবে বিগত দু-তিন বছর শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ১ জানুয়ারি উৎসব করে বই বিতরণ শুরু হলেও কিছু ক্ষেত্রে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব নতুন বই দেওয়া যায়নি। আসন্ন শিক্ষাবর্ষে উৎসব করে বই দেওয়া হবে না।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে,এবার প্রাক্–প্রাথমিক পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা ৯ কোটি ৬৪ লাখের মতো। এর মধ্যে শনিবার পর্যন্ত ছাপা হয়েছে ৪ কোটি ৩৫ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৩ কোটি ৪৭ লাখের মতো বইয়ের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
মাধ্যমিকে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) মোট বইয়ের সংখ্যা ৩০ কোটি ৯৬ লাখের মতো। এর মধ্যে শনিবার পর্যন্ত ১ কোটি ৩২ লাখের মতো বইয়ের ছাড়পত্র হয়েছে। অবশ্য এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে বলেছেন, ছাপা বইয়ের সংখ্যা আরও বেশি। দুই দিনে আরও বিপুলসংখ্যক বইয়ের ছাড়পত্র হয়ে যাবে।
কাগজের সংকট,পুনরায় দরপত্র ও কার্যাদেশ দেরিতে দেওয়াসহ আনুষঙ্গিক কাজগুলোতে দেরি করেছে এনসিটিবি। ফলে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই তুলে দিতে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন শিক্ষাক্রম কার্যত বাতিল হয়ে গেছে। এরপর এক যুগ আগে তৈরি পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে জন্য এবার বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ৪৪১টি বই পরিমার্জন করে এনসিটিবি। এ প্রক্রিয়ায় পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তুতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ে বেশ কিছুসংখ্যক গদ্য,প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বা বিষয়বস্তু বাদ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন করে স্থান পাচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তুসহ নতুন কিছু গল্প-কবিতা। পুরোনো শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ায় এবার মোট বইয়ের সংখ্যাও বাড়ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুদ্রণকারীদের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, এবার কয়েকটি কারণে পাঠ্যবই নিয়ে সমস্যাটি হয়েছে। প্রথমত, শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করে বইগুলো পরিমার্জন করতে দেরি হয়েছে। এ ছাড়া কাগজের সংকট, পুনরায় দরপত্র ও কার্যাদেশ দেরিতে দেওয়াসহ আনুষঙ্গিক কাজগুলোতে দেরি করেছে এনসিটিবি। ফলে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই তুলে দিতে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। জানা গেছে দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্টানই প্রস্তুতি রেখেছে নতুন বই আশামাত্র যাতে শিক্ষার্থীদের হাতে দ্রæত পৌছানো যায় তার সব প্রস্তুতিই সম্পন কওে রেখেছেœ ।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!