মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১

ঢাকা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন ঠেকাতে ১৭ দিন ধরে বন্ধ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৪, ০২:৩৫ পিএম

ঢাকা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন ঠেকাতে ১৭ দিন ধরে বন্ধ

ঢাকা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে দীর্ঘ ১৭ দিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার এই ঢাকা সিটি কলেজ এবং আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্তীদেও মধ্যে মাঝে-মধ্যেই বিরোধ নিয়ে খবর হলেও এবার ঢাকা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে দীর্ঘ ১৭ দিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন।‘অনিবার্য কারণ’ দেখিয়ে তিন দফার নোটিশে বছরের শেষাংশের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থমকে আছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। 
গত মাসের (অক্টোবর) ২৮ তারিখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ মোট ৭ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। তারা অভিযোগ করেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজী মোহাম্মদ নিয়ামুল হক ও উপাধ্যক্ষ মো.মোখলেছুর রহমান নানান স্বেচ্ছাচারিতা, বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছেন। সেজন্য এসব বিষয়ে যৌক্তিক সমাধান চেয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন তারা।
পরে ওইদিনই শিক্ষার্থীদের আলোচনায় বসার আহ্বান করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ।আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল কলেজের নিচতলার লাউঞ্জে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষককে ‘অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষকে পদত্যাগ করতে হলে আমরা ২১০ জন শিক্ষক একসাথে পদত্যাগ করব’এমন কথা বলতে শোনা যায়। পরে শিক্ষার্থীরা সাত দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হচ্ছে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে হবে,৩ মাসের মধ্যে বহিষ্কৃত সুমন স্যারকে পুনর্বহাল করতে হবে, মোশাররফ স্যারকে পুনর্বহাল করতে হবে,কায়কোবাদ স্যারের নামে মিথ্যাচার প্রত্যাহার করতে হবে, জাহাঙ্গীর স্যারকে আজকের মধ্যে বহিষ্কার করতে হবে, সোবহান স্যারের বহিষ্কার করতে হবে, আন্দোলনকারীদের ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করা যাবে না।
এ সময়, পদত্যাগের ব্যাপারে অনড় অবস্থান এবং উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হলে শিক্ষার্থীর তাদের পদত্যাগ দাবি করে ‘ভুয়া ভুয়া’ ¯েøাগান দিয়ে শিক্ষক লাউঞ্জের সামনে এসে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করেন এবং ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। পরে ভেতর থেকে গেট লাগিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে শিক্ষকরা দোতলায় উঠে যান। এ সময় সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরে শিক্ষার্থীরা দোতলায় উঠতে চাইলে সেনাবাহিনী ভেতর থেকে গেইট লাগিয়ে দেয়।
আরো পড়ুন : জবি ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে দেয়ার নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরএমন পরিস্থিতিতে রাতেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নেয়ামুল হক সংক্ষিপ্ত এক নোটিশে কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন। এতে তিনি ছুটির জন্য ‘অনিবার্য কারণ’ উল্লেখ করেছেন। মাত্র দুই লাইনের ওই নোটিশে বলা হয়েছে, অনিবার্য কারণবশত আগামীকাল (২৯ অক্টোবর) কলেজের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। পরীক্ষার সময়সূচি পরে জানানো হবে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন,গণ-অভ্যুত্থানের পর আগের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষকে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সরিয়ে দিয়ে নিজে থেকেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে চেয়ারে বসেন অধ্যাপক কাজী নিয়ামুল এবং ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ হিসেবে মো.মোখলেছুর রহমান। দায়িত্ব নিয়েই তারা একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে শোকজ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করেন। ফলে হঠাৎ চাকরি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এ সব ভুক্তভোগীরা।
এদিকে আইন বলছে, একজন অধ্যক্ষ তার ক্ষমতাবলে বছরে সর্বোচ্চ দুই দিন কলেজ বন্ধ রাখতে পারেন। সে হিসেবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারী আচরণ স্পষ্ট।
কলেজ বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজী নেয়ামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।অভিযোগ উঠেছে,তৎকালীন নিয়মিত অধ্যক্ষ বেদার উদ্দিন আহমেদকে জিম্মি করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। পরে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেন একই কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর কাজী নেয়ামুল হক। উপাধ্যক্ষ্যের চেয়ারে বসেন মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর মো. মোখলেছুর রহমান। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ দেয়ার পাশাপাশি উচ্চ আদালতে রিট করেন বেদার উদ্দিন।
গত ২৭ অক্টোবর উচ্চ আদালতের বিচারপতি ফারা মাহবুব ও দেবাশিষ রায়ের দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে আদালত জানতে চেয়েছেন, কেন কাজী নেয়ামুল ও মোখলেছুর রহমানের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফপ্রের (মাউশি) মহাপরিচালককে তদন্ত করে চার সপ্তাহের মধ্যে আবেদনকারী সাবেক অধ্যক্ষ বেদার উদ্দিন আহমেদের আবেদন নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন।
জানা গেছে,আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আমানুল্লা ফেরদৌস দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মেজবাহ উল ইসলামকে ও সদস্য করা হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমানকে। তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে রিটকারীসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য শুনেছেন। নিয়মিত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য করানো ছাড়াও দায়িত্ব নেয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৬ জনকে চাকরিচ্যুত করেন কাজী নেয়ামুল।পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চারজনকে চাকরি ফিরিয়ে দিলেও এখনো ১২ জন আছেন অনিশ্চয়তার মধ্যে। চাকরিচ্যুতদের মধ্যে আছেন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ ৮ জন শিক্ষক এবং গাড়ি চালক ও পিয়নসহ চারজন কর্মচারী। তিন মাস ধরে বেতন বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসব শিক্ষক ও কর্মচারীরা।

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!