দেশের বেসিক ব্যাংকের অর্থ লোপাটের হোতা ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ওরফে বেসিক ব্যাংক বাচ্চু এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আসামিদের বিরুদ্ধে ২৪৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং কানাডায় বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। চার মামলার মধ্যে তিনটিতে বাচ্চুকে করা হয়েছে সহযোগী আসামি। দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।
একটি মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ৬৮ কোটি ৭৬ লাখ ৪৬ হাজার ১৫ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া ৫৬ কোটি ৫৭ লাখ ১০ হাজার ২০৭ টাকা কানাডায় পাচার করেছেন। সব মিলিয়ে তার বিরুদ্ধে ১২৪ কোটি ৯৩ লাখ ৬ হাজার ২৭৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আরেক মামলায় তার স্ত্রী মিসেস শিরিন আকতার ও শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ৩৬ কোটি ৫১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্য এক মামলায় ছেলে শেখ ছাবিদ হাই অনিক ও বাবা শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়েছে। ছেলে শেখ ছাবিদ হাই অনিকের বিরুদ্ধে ৪৩ কোটি ৬২ লাখ ৬০৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া তার বাবার কাছ থেকে ২৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ২ কাঠা জমি হেবা দলিল মূলে প্রাপ্ত হয়েও দাখিল করা সম্পদবিবরণীতে গোপন করেছেন। এছাড়া অবৈধভাবে উপার্জিত ৮৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৮ টাকা কানাডায় পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
পৃথক আরেকটি মামলায় মেয়ে শেখ রাফা হাই ও বাবা শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় শেখ রাফা হাইয়ের বিরুদ্ধে ৪০ কোটি ৪১ লাখ ৪৫ হাজার ১৬৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া অবৈধভাবে উপার্জিত ৭৪ লাখ ৮১ হাজার ৪৬৩ টাকা কানাডায় পাচার এবং সম্পদবিবরণীতে তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্যদিকে বাবার কাছ থেকে ৮৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার ৬ কাঠা জমি হেবা দলিলমূলে প্রাপ্ত হয়েও গোপন করেছেন তিনি।
আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা; মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দন্ডবিধির ৪০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাগুলো রুজু করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০২৩ সালের ১২ জুন বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেয় দুদক। সংস্থাটির করা ৫৯ মামলার চার্জশিটের মধ্যে ৫৮টির তদন্তে নতুন আসামি হিসাবে আবদুল হাই বাচ্চু এবং কোম্পানির সচিব শাহ আলম ভূঁইয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ ২০১৫ সালে করা কোনো মামলায়ই বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। যে কারণে দুদককে বারবার বিভিন্ন প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে। মামলার দীর্ঘ ৮ বছর পর চার্জশিটে আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়।
এছাড়া গত বছরের এপ্রিলে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট বাজারের ৩০.২৫ কাঠা জমি ক্রয় দেখিয়ে লুটপাট করা প্রায় ৯৫ কোটি টাকা গোপন করার চেষ্টা এবং সাড়ে ৮ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে আব্দুল হাই বাচ্চু, তার স্ত্রী-সন্তান ও ভাই এবং হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :