স্বৈরাচারের আর্শিবাদে একাই সব দখলে নিযেছিলেন সুলতানা। তিনি সিনিয়র সচিব থাকাকালে একাধিক পদ দখল করে মাসে বেতন-সম্মানী লাখ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে সাবেক শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে। এছাড়া ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বদলি বা চাকরিচ্যুতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রশাসনিক স্বৈরাচাররা দলীয় ক্যাডারে পরিণত হয়ে যখণ যা মনে চাইছে তাই করেছেন। তাদেরও বিচার হওয়া উচিত।
কাফকোর সিএসআর ফান্ড ব্যবহারেও অনিয়মের অভিযোগ সাবেক এই আমলার বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভোল পাল্টিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করলেও সম্প্রতি তাকে অবসরে পাঠিয়েছে অন্তর্র্বতী সরকার।
সাবেক আমলারা বলছেন,জবাবদিহিতা আনতে হবে এসব কর্মকর্তাকে। অনিয়ম তদন্তের পরামর্শ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)। সুত্রে জানা গেছে,আওয়ামী লীগ শাসনামলে অনেককে ডিঙ্গিয়ে পদোন্নতি পাওয়া ১৪৫ জন সচিবের একজন ছিলেন সাবেক শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা। পদোন্নতি পেয়ে ২০২১ সালে দায়িত্ব পান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি গবেষণা কাউন্সিলে। একই বছর বদলি হয়ে যান শিল্প মন্ত্রণালয়ে। নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকায় ২০২২ সালে তথ্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হলেও মোহ ছাড়েননি শিল্পের। ২৪`র অভ্যুত্থানে আওয়ামী স্বৈরাচারের পতন হলেও অন্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ এক নেতার ছত্রছায়ায় আঁকড়ে ধরেছিলেন একই দফতর।
অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বে থাকাকালীন স্বার্থ বা মতের বিরুদ্ধে কেউ গেলেই সরিয়ে দিতেন দফতর থেকে, করতেন চাকরিচ্যুত। নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন শিল্প মন্ত্রণালয় অধীনস্থ এক চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা।কাফকোর সাবেক চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার মো. হাবিবুল্লাহ মনজু বলেন, ‘অবৈধ নিয়োগে সায় না দেয়া ও প্রতিবাদ করায় নানাভাবে আমাকে হেনস্থা করা হয়। তবে ঠিক কি কারণে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, সেটি জানতে চাই।’
কাফকোর সিএসআর ফান্ড ব্যবহারেও অনিয়ম করেছেন জাকিয়া সুলতানা। অর্থ দিয়েছেন সুগার করপোরেশন, পুলিশ সদস্যসহ অন্যান্য কাজে। প্রভাব খাটিয়ে সিএসআর নীতিমালা পরিবর্তনের অভিযোগও করেন হাবিবুল্লাহ মনজু।
তিনি বলেন,‘জাকিয়া সুলতানা যেসব খাতে অর্থ ব্যয় করেছেন, তার অধিকাংশই কোম্পানি আইন ও আয়কর আইনের নিয়ম বহির্ভূত। নতুন সিএসআর আইন করে তিনি এসব কর্মকান্ডকে বৈধতা দেন।’
এসব বিষয় নিয়ে দায়িত্বে থাকাকালীন সময় সংবাদ সচিব দফতরে গেলেও কথা না বলে যোগাযোগ করতে বলেন কাফকোর দফতরে। আগারগাঁওয়ে কাফকোর দফতরে গেলেও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান করপোরেট কর্মকর্তা খাজা সায়েদুর রহমান প্রথমে কথা বলতে চাইলেও পরে জানান,অনেক চাপে আছেন তিনি। সাফাই দিয়েছিলেন বর্তমান ব্যবস্থাপনার।
এদিকে শিল্প সচিবের পাশাপাশি কাফকোর পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন জাকিয়া সুলতানা। তিনিই আবার অতিরিক্ত দায়িত্ব নেন উৎপাদনমুখী এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার। তথ্য বলছে, বোর্ডের বেতনের পাশাপাশি তিনি নেন প্রধান নির্বাহীর বেতনও। যা প্রতিমাসে দুই লাখ টাকা। সিইও পদে নিয়োগও দেননি দীর্ঘদিন।
একজন কোম্পানি আইনজীবী বলছেন, এভাবে তিনটি পদে চাকরি করতে পারেন না সরকারি কোনো কর্মকর্তা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসেন বলেন, ‘তিনটি পদে চাকরি করতে পারেন না সরকারি কোনো কর্মকর্তা। এর মাধ্যমে পুরো ক্ষমতা সেন্ট্রিক হয়ে ওঠে।অন্যদিকে টিআইবি বলছে,এ ঘটনা স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন,এটি এক ব্যক্তির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল বার্তা দিতে পারে। জাকিয়া সুলতানার অনিয়ম তদন্ত করে দেখতে হবে।’এ ধরনের কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসার পরামর্শ সাবেক আমলাদের। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ করার অনেক আইন রয়েছে। এ আইনগুলো যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে।’পাঁচ আগস্টের আগে অনিয়ম ও ক্ষমতার অব্যবহারের অভিযোগে একইভাবে জাকিয়া সুলতানার স্বামী পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আতিকুল ইসলামকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় অন্তর্র্বতী সরকার।যদিও জাকিয়া সুলতানার অবসরে যাওয়ার পর যোগাযোগ করা হলেও সাঁড়া মেলেনি তার।স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী আমলারা এখন ভোল্ট পাল্টিয়ে ঘুমিয়ে আছেন।
আপনার মতামত লিখুন :