দেশের মুরব্বী ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরতদের মধ্যে ৫৬ কর্মকর্তা দুদকের নজরদারিতে। দুদকের জালে তাদেরকে ফেলা হয়েছে এবার জাল গুটিয়ে আনার পালা। ওরা মুরব্বি ব্যাংকের ডেভিল। দুদক সুত্রগুলো থেকে এতথ্য জানা গেছে। বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে ব্যাংক থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান ও ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ঋণ অনুমোদন করানোয় এসব ঋণ এখন খেলাপি। বিপুল পরিমাণে ঋণ খেলাপির বোঝা মাথায় নিয়ে ডুবতে বসেছে দেশের একাধিক ব্যাংক। তবে ব্যাংকিং নিয়মকানুন অনুযায়ী, বড় অঙ্কের ঋণ অনুমোদন থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি তপশিলি ব্যাংকের তদারকির দায়িত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া লুটপাট প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টরা। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পরে এসব ঘটনায় একাধিক মামলা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশিরভাগ হোতা। এবার প্রাথমিকভাবে অন্তত ৫৬ জন কর্মকর্তার সম্পদের খোঁজে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যেই ২৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জোরেশোরে অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি। এ ছাড়া আরও চিহ্নিত ২৮ জন কর্মকর্তার বাংলাদেশ ব্যাংকে লকার রয়েছে। দুদকের জমা পড়া অভিযোগে এসব লকারে বিপুল পরিমাণে বিদেশি মুদ্রা, নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন সম্পত্তি থাকার সন্দেহ করা হচ্ছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও অন্তত ৪৯ কর্মকর্তার অনিয়ম নিয়ে তদন্তে নেমেছে রাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। যারা সবাই এস আলমসহ ঋণ জালিয়াতিতে জড়িত। এ ছাড়া বড় বড় কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের হয়ে তারা কাজ করেছেন। সেসব প্রতিষ্ঠানের চাহিদামতো বিভিন্ন প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এর মধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তা অবসরে যাওয়ার পরে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছেন। যার মধ্যে একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল। তিনি বর্তমানে দেশীয় একটি বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে কর্মরত।
আর দুদকের সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ, অফ সাইট সুপারভিশন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ,বিএফআইইউ ও ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের তৎকালীন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া এস আলম, পি কে হালদার, শিতাংশু কুমার চৌধুরীসহ আওয়ামী আমলে সুবিধাভোগী অন্তত আড়াইশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে শত শত অভিযোগ জমা পড়েছে, যা প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই চলছে।
জানা যায়, দেশের সব তপশিলি ব্যাংকের তদারকির দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। কোনো বৃহৎ অঙ্কের ঋণ ছাড় করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগে। নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগের কর্মকর্তারা চক্রাকারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শাখা পরিদর্শন করে অনিয়ম বের করার কথা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব পরিদর্শন অনেকাংশেই কমিয়ে দিয়েছে। আর যেসব পরিদর্শন হয়েছে অদৃশ্য কারণে সেগুলোরও ব্যবস্থা গ্রহণ হয়নি। অনেক সময় প্রতিবেদনও জমা পড়েনি সংশ্লিষ্ট শাখায়।
তথ্য বলছে,দেশের ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একবার ঋণখেলাপি হলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় ঋণ দেওয়ার বিধান নেই। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ কিংবা তাদের সহায়তা ছাড়া কোনোভাবেই বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে লুটপাট সম্ভব নয়। যে কারণে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে বিগত সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের সম্পদের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যে প্রায় ২৭ জন কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে তাদের সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস ও সাবেক ডেপুটি গভর্নর শিতাংশু কুমার চৌধুরী (এস কে সুর) বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। চট্টগ্রামের ইসলামী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৪৯ জন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। সেখানে চট্টগ্রাম অফিসের ২৩ জন, বিএফআইইউর ১০ জন ও অন্যান্য আরও ১৬ কর্মকর্তার ব্যাপারে অনুসন্ধান করছেন। তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে একাধিক অভিযোগ। যার মধ্যে একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক কামাল হোসেন। এই কর্মকর্তা আওয়ামী সরকার ক্ষমতার আসার পরপরই ২০০৯ সালের ফেব্রæয়ারিতে বিএফআইইউতে পদায়ন পেয়েছেন এবং একটানা ১৫ বছর ছিলেন। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তিদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে সরকারের আস্থাভাজন এবং প্রবল ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় এই কর্মকর্তা তৎকালীন গভর্নরকে বিভ্রান্ত করে অর্থ উদ্ধার জটিল করে দিয়েছেন। এ ছাড়া ব্যাংকে লুটের হোতা এস আলমের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন এই কর্মকর্তা। তিনি চার্টার্ড বিমানে করে এস আলমের ছেলের বিয়েতে গেছেন। নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হকের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নগদের সব অনিয়ম ও মানি লন্ডারিংয়ে হোতা এই কর্মকর্তা। বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে অগাধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয় ও আইসিটি মন্ত্রী পলকের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রজেক্ট—‘বিনিময়’,‘আইডিটিপি’ও অন্যান্য কয়েকটি প্রজেক্ট নিয়েছেন, যা কোনো কাজেই আসেনি। তবে এসব প্রজেক্ট থেকে এই কর্মকর্তা বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এবং প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে একাধিক বিদেশ সফর পুরস্কার পেয়েছেন। এফএসএসএসপিডির পরিচালক থাকা অবস্থায় বিভিন্ন শিল্প গ্রæপের অনুকূলে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ ছাড়করণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এই কর্মকর্তা একাধিক মন্ত্রী ও একাধিক শিল্প গ্রæপের হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে কাজ করতেন। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের তথ্য নষ্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। তালিকায় আছেন আরেক নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইসিটি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে তিনি অন্য নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হককে সঙ্গে নিয়ে হাসিনাপুত্র জয় ও পলকের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রজেক্ট নিয়ে লুটপাট করতেন। পরিচালক ইশতেকামাল হোসাইনকে সাবেক গভর্নরের আমলে ৪২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকে বিতরণের অন্যতম শীর্ষ কুশীলব হিসেবে তাকে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে এস আলমের ব্যাংকগুলোতে লিকিউডিটি সাপোর্ট তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় দেয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে এডি নিয়োগে প্যানেলভুক্তদের তথ্য প্রকাশ করে চাকুরিচ্যুতির পর্যায় গিয়েছিলেন; কিন্তু সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপে তখন এই কর্মকর্তার চাকরি টিকে যায়।
এ ছাড়া আরেক যুগ্ম পরিচালক সুনির্বাণ বড়ুয়া ডিবিআই-৪ এ কর্মকালীন এস আলম গ্রæপভুক্ত ব্যাংকসমূহ পরিদর্শন করেছেন, বেনামি ঋণ সৃষ্টি দিয়েছেন, অনিয়ম লুকিয়েছেন, বিনিময় গ্রহণ ও সৎ কর্মকর্তাদের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে গোপন প্রতিবেদনে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে যথানিয়মে লোন ক্ল্যাসিফাই ও প্রভিশন হিসাবায়ন না করে কেউ করকে চাইলে বাধা দেওয়া ও ফরমায়েশি পরিদর্শন প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই কর্মকর্তার সঙ্গে আরও ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা হলেন, অতিরিক্ত পরিচালক শওকত আলী, যুগ্ম পরিচালক মেহেদী হাসান। মেহেদী হাসান তার আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে নিজ স্ত্রীকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের চাকরি দিয়েছেন। অতিরিক্ত পরিচালক শংকর কান্তি ঘোষ, যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সালাম, উপপরিচালক মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, উপপরিচালক প্রিটুল বড়ুয়া। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদ্য সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলামকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও ব্যাংকখেকো পি কে হালদারের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের কথিত দুর্নীতি তদন্তের আদিষ্ট প্রতিবেদন প্রণনয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এই কর্মকর্তা। ২০২১-২০২৩ সাল পর্যন্ত ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনের দায়িত্বে থাকাকালে এস আলম গ্রæপের সব ঋণ জালিয়াতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন আনোয়ারুল ইসলাম এবং বৃহৎ ঋণ অনুমোদনের কাজ করেছেন। এস আলম ভেজিটেবল অয়েল মিলসসহ গ্রæপভুক্ত ৩টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২৪শ কোটি টাকার ঋণের এনওসি প্রদানের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। পিআরএলে থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একই কর্মকর্তা এখন বেসরকারি আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের এমডি হওয়ার তদবির চালাচ্ছেন। ব্যাংকটির মেয়াদোত্তীর্ণ বোর্ডের চাওয়া অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাকে ছাড়পত্র দেওয়ার পথে। শুধু তাই নয়, ২০১৩ সালেও তিনি আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের এমডি হওয়ার জন্য একবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছুটি নিয়েছিলেন। পরবর্তী সময় তিনি যোগদান করেননি।
একই রকমভাবে চিহ্নিত আরও কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন— নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান,পরিচালক মো.আরিফুজ্জামান, অতিরিক্ত পরিচালক মো. শোয়াইব চৌধুরী,অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুল আহাদ, যুগ্ম পরিচালক রেজাউল করিম, অতিরিক্ত পরিচালক নির্মলেন্দু পারিয়াল, যুগ্ম পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী, যুগ্ম পরিচালক সৈয়দ সাইফুর রহমান, সহকারী পরিচালক শান্তনু নাথ শাওন, যুগ্ম পরিচালক মো. জিয়া উদ্দিন বাবলু, যুগ্ম পরিচালক রুপেশ বড়ুয়া, জোবাইদুল ইসলাম, আবু হোসাইন মো. জামশেদ উদ্দিন,অনির্বাণ চাকমা, উপপরিচালক রুবেল চৌধুরী, উপপরিচালক খোরশেদুল আলম, নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম, এসএম হাসান রেজা, পরিচালক চৌধুরী লিয়াকত আলী, আবু সালেহ মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন, আবু হেনা হুমায়ুন কবির, মোহাম্মদ মোহসিন হোসাইনি, অতিরিক্ত পরিচালক এ কে এম নুরন্নবী, গোলাম মহিউদ্দিন, মো. সাদরুল মোক্তাদির, যুগ্ম পরিচালক মো. রোকন উজ্জামান, শিউলি সাহা, মো. আসরাফুল আলম,আসাদুজ্জামান খান, মো. শাহনেওয়াজ মুরাদ, সৈকত কুমার সরকার, ইবনা আহসান কবির, অতিরিক্ত পরিচালক মো. মাসুদ রানা ও উপপরিচালক মো. মুশফিকুল ইসলাম।
২৮ কর্মকর্তার লকারের খোঁজ পেয়েছে দুদক: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অতিগোপনীয় ফিক্সড ডিপোজিট লকারের সংখ্যা ২৭২টি। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা কোনো ধরনের ফি ছাড়াই ২০ বছর পর্যন্ত তাদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস কিংবা অর্থ সম্পদ জমা রাখতে পারেন। এসব লকারের মধ্যে এস কে সুরের একটি লকার খুলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। বাকি আরও ২৭১টি লকার পর্যায়ক্রমে খোলার পরিকল্পনা করছে দুদকের। প্রাথমিকভাবে লকার আছে এমন ২৮ কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা দুদক। আদালতের অনুমতিসাপেক্ষে সব নিয়মকানুন মেনে খুব শিগগির প্রাথমিকভাবে এসব কর্মকর্তার লকার খোলার কথা ভাবছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
যে ২৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মো. আবদুর রউফ তালুকদার, ডেপুটি গভর্নর মোছা. নুরুন্নাহার, ড. হাবিবুর রহমান, সাবেক নীতি উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাসের, সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান, খুরশিদ আলম, কাজী সাইদুর রহমান, সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম, বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস,পরিচালক (এফপিআইবি) সরোয়ার হোসেন, মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন, অতিরিক্ত পরিচালক আবদুর রউফ, মঞ্জুর হোসেন খান, যুগ্ম পরিচালক সুনির্বাণ বড়ুয়া, জোবায়ের হোসেন, রুবেল চৌধুরী, লেলিন আজাদ পলাশ, যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ ওয়াদুদ, সাবেক উপপরিচালক মোফাজ্জল হোসেন, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক তরুণ কান্তি ঘোষ, উপমহাব্যবস্থাপক ইমাম সাঈদ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের অনিক তালুকদার, বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং অ্যাকাডেমির সহকারী পরিচালক আমিরুজ্জামান মিয়া, সাবেক সহকারী পরিচালক (ক্যাশ) আনোয়ার হোসেন এবং বিএফআইইউর এক অতিরিক্ত পরিচালক। এ ছাড়া সাবেক দুই গভর্নর ড. আতিউর রহমান ও মো. আবদুর রউফ তালুকদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে দুদক। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ওঠা আরও একাধিক অভিযোগের অনুসন্ধান করছে সংস্থাটি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন মহাপরিচালক বলেন, ‘দেশের প্রতিটি ব্যাংকের তদারকির দায়িত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া এভাবে ব্যাংকিং সেক্টরে হরিলুট সম্ভব ছিল না। তারা অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নিয়ে ব্যাংকগুলো এভাবে হরিলুট হতে দিয়েছে। তাই ওই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তাদের সম্পদের খোঁজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। যাদেরই জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের খোঁজ পাওয়া যাবে তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে। খোজ নয়ে জানা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে দুর্নীতিবাজদের নানারকম সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল।বেড়ায় ক্ষেত খেয়েছে। জাতিকে ধোকা দিয়েছে। পিকে হালদার কিংবা আতিউর সবাই যেনো মুখোশ পড়া ডেভিল।
আপনার মতামত লিখুন :