মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি, ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১

পিএসসির আবেদ আলীর স্ত্রী-পুত্রের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

আইন-অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৫, ০৯:২৪ পিএম

পিএসসির আবেদ আলীর স্ত্রী-পুত্রের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

পিএসসির সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলীর স্ত্রী-পুত্রের বিরুদেদ্ধ মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। পাঁচ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জন ছাড়াও প্রায় ৪৫ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি সাবেক এই গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন, তার স্ত্রী ও ছেলের নামে এ মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (৫ জানুয়ারি) আবেদ আলী ছাড়াও তার স্ত্রী শাহরিন আক্তার শিল্পী ও ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামের নামে পৃথক এ মামলা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।
দুদক সূত্র জানায়,পাঁচ কোটি ৩৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও প্রায় ৪৫ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক ৩টি মামলা করেছে দুদক। এ ঘটনায় করা মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারাসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিনটি মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, বিপিএসসির আলোচিত গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবনের ১২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০ কোটি ৮৮ লাখ ১৬ হাজার ৯৭১ টাকা জমা ও ২০ কোটি ৪১ লাখ ৩ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মোট ৪১ কোটি ২৯ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়াও আবেদ আলীর বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৭২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্যদিকে ১ কোটি ২৬ লাখ ৬৩ হাজার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আবেদ আলীর স্ত্রী শাহরিন আক্তার শিল্পীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তার দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৭৬ হাজার ৬৩৬ টাকা জমা ও ১ কোটি ৭৭ লাখ ৬৪ হাজার ৯৫ টাকা উত্তোলনসহ মোট ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৪০ হাজার ৭৩১ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে আবেদ আলীর ছেলে ও ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামের বিরুদ্ধে।
পৃথক তিনটি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ ‘দুর্নীতি ও ঘুষ’ সংঘটনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়ালের উদ্দেশ্যে এর রূপান্তর, স্থানান্তর ও হস্তান্তরের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ওই সময় সৈয়দ আবেদ আলী জীবনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক।
আবেদ আলী একসময় কুলির কাজ করলেও গাড়ি চালানো শেখার পর বিপিএসসিতে চাকরি নেন। পরবর্তীতে প্রশ্নফাঁস চক্রের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিজ এলাকায় শিল্পপতি হয়ে যান। গত ৯ জুলাই রাজধানীর শেওড়াপাড়ার নিজ বাসা থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে আবেদ আলী ছাড়াও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই অভিযানে বিপিএসসির দুই উপ-পরিচালক ও এক সহকারী পরিচালকসহ আরও ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরবর্তীতে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়,২০১৪ সালে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আবেদ আলীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। ওই বছরের ২২ এপ্রিল নন-ক্যাডারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার পদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের অবৈধ উত্তরসহ চারটি লিখিত উত্তরপত্রসহ এক পরীক্ষার্থীকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পরবর্তীতে ওই ঘটনায় করা মামলার তদন্তে আবেদ আলীর সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর তাকে বরখাস্ত করা হয়।
পিএসসির তথ্যানুযায়ী, আবেদ আলী ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর গাড়িচালক হিসেবে সংস্থাটিতে যোগ দেন। ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিলে নন-ক্যাডার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার’পদে লিখিত পরীক্ষায় লিখিত উত্তরপত্র সরবরাহ করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয় এবং অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিনি চাকরিচ্যুত হন। চালক আবেদ আলীর অবৈধ সম্পদেও পাহাড় চট্টগ্রাম থেকে ঢ রাজধানী ঢাকা হয়ে মাদারীপুর পর্যন্ত বিস্তৃত লাভ করে। তার এমন সব অবৈধ সম্পদ প্রকাশ্যে এলে টক অব দি কা›ট্রিতে পরিণত হয়।

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!