সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচিত সেই ৪০০ কোটি টাকার মালিক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। দুর্নীতিবাজ এই পিয়ন এবার নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের কার্যালয়ে গিয়ে আমমোক্তারনামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) দলিল বানাতে হয়েছেন ব্যর্থ। স্থানীয় সময় বুধবার (৪ ডিসেম্বর) আমমোক্তারনামা দলিল সংক্রান্ত কাজ করাতে কনস্যুলেট কার্যালয়ে গিয়ে কাজ না হওয়ায় তিনি ফিরে যান। কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ।
কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা বলেন,বুধবার (৪ ডিসেম্বর) শেখ হাসিনার সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম আমমোক্তারনামা দলিল সংক্রান্ত কাজ করাতে কনস্যুলেট কার্যালয়ে এসেছিলেন। অনেকেই তাকে চিনতে পারেন। ফলে তার সেই আমমোক্তারনামা দলিলের কাজটি করা হয়নি।ডিপুটি কনসাল জেনারেল এসএম নাজমুল হাসান বলেন,শেখ হাসিনার সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম নিউইয়র্ক কনস্যুলেট কার্যালয়ে আসার খবর শুনে সবাই সতর্ক হয়ে যান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কেউই তার সেই কাজটি করেননি। এ ব্যাপারে শেখ হাসিনার আলোচিত সেই ৪০০ কোটি টাকার মালিক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
গত ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তার বাসার সাবেক এক পিয়নের অর্থসম্পদের বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি বলেন, আমার বাসায় কাজ করেছে,পিয়ন ছিল সে,এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। বাস্তব কথা। কী করে বানাল এত টাকা? জানার পরে দেরি না করে ব্যবস্থা নিয়েছি।
শেখ হাসিনা ওই পিয়নের পরিচয় নিয়ে কোনো কথা না বললেও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, সেই পিয়নের নাম জাহাঙ্গীর আলম। তাকে নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল। তার ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের দুই মেয়াদের পুরোটা সময় এবং প্রধানমন্ত্রীর টানা তৃতীয় মেয়াদেরও কিছু সময় কর্মরত ছিলেন। এর আগে শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থাকাকালে জাহাঙ্গীর তার বাসভবন সুধা সদনে ব্যক্তিগত স্টাফ হিসেবে কাজ করেন।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কর্মচারী হলেও নিজের পরিচয় দিতেন ধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী। এই পরিচয় ব্যবহার করে নিয়মিত সচিবালয়ে তদবির বাণিজ্য চালাতেন তিনি। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছে নানা তদবির করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। একই পরিচয় ব্যবহার করে তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদও করায়ত্ত করেন । নোয়াখালী-১ সংসদীয় আসনে নিজের একটি রাজনৈতিক বলয় তৈরি করেছিলেন তিনি।
জেলার একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীর বুঝতে পেরেছেন যেকোনো সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এ কারণে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। ১৪ জুলাই রাতে দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পালিয়ে এসেছেন জাহাঙ্গীর। পরদিন ১৫ জুলাই বিকালে গণমাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন জাহাঙ্গীরের বড় ভাই মীর হোসেন। তিনি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
এদিকে জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সঙ্গে তাদের হিসাব খোলার ফরমসহ যাবতীয় তথ্য পাঁচ দিনের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সব ব্যাংকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :