সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২

যেসব খাবার ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৫, ০৮:২৯ পিএম

যেসব খাবার ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে,ধূমপান না করলেও শুধু খাদ্যাভ্যাসের কারণে এই প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। 
ধূমপান দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস ক্যানসারের প্রধান কারণ হিসেবে পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান না করলেও শুধু খাদ্যাভ্যাসের কারণে এই প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। গবেষণাটি বলছে, যারা প্রতিদিন বেশি পরিমাণে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খান, তাদের ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বেশি।
সিএননের প্রতিবেদনে জানা যায় জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, এমন খাবারকে “অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত” বলা হয়, যেখানে থাকে এমন উপাদান যা সাধারণ রান্নাঘরে ব্যবহার করা হয় না—যেমন: কৃত্রিম রং ও ঘ্রাণ, সংরক্ষক পদার্থ, স্বাদ বাড়াতে রাসায়নিক সংযোজন, ইমালসিফায়ার,পরিবর্তিত চিনি, লবণ ও চর্বি:এই ধরনের খাবার সাধারণত সফট ড্রিংকস, প্যাকেটজাত স্যুপ, চিপস, আইসক্রিম, চিকেন নাগেটস ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।
গবেষণার ফলাফল: যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন একজামিনেশন সার্ভে-এর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যারা দিনে তিনবারের মতো অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খান, তাদের ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। এমনকি বয়স, ওজন বা ধূমপানের ইতিহাস বিবেচনায় নেওয়ার পরও এই ঝুঁকি থেকেই যায়।
গবেষকদের মতে, এই ধরনের খাবারের প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় অ্যাক্রোলিন নামক একটি রাসায়নিক তৈরি হয় যা সাধারণত তামাক, কাঠ বা রান্নার তেল পোড়ালে সৃষ্টি হয়। এই রাসায়নিক শরীরের কোষে বিষক্রিয়া ঘটিয়ে ক্যানসার তৈরির সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
ধূমপান নয়, খাদ্যও হতে পারে ঝুঁকির কারণ:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২৪ লাখ মানুষ ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। টাফটস ইউনিভার্সিটির ড. ফাং ফাং ঝ্যাং বলেন, ধূমপান নিঃসন্দেহে প্রধান ঝুঁকি, তবে আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কখনও ধূমপান করেননি, তারাও অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারের কারণে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন।
গবেষক ড. ডেভিড কাটজ জানান, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারে সাধারণত স্যাচুরেটেড ফ্যাট, অতিরিক্ত চিনি, লবণ এবং বিভিন্ন রাসায়নিক থাকে, যা শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই প্রদাহ দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
এ ছাড়া, এসব খাবার শরীরের মাইক্রোবায়োম নষ্ট করে দেয়, যার ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. টম ব্রেনা বলেন, “এই খাবারগুলোতে ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ খুব কম থাকে, অথচ এই উপাদান শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। খাবারের শেলফ লাইফ বাড়াতে গিয়ে ওমেগা-৩ বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য বড় ক্ষতি।
করণীয়-বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, খাবার কেনার সময় লেবেল ভালোভাবে পড়ুন। দীর্ঘ উপাদান তালিকা বা অপরিচিত নাম থাকলে সেটি এড়িয়ে চলুন। যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক ও কম প্রক্রিয়াজাত খাবার বেছে নিন-তাজা শাকসবজি ও ফল,গোটা শস্য,ডাল, বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার একদিনে পুরো খাদ্যাভ্যাস বদলানো সম্ভব নয়, তবে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনাই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
গবেষণাটি আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে ফুসফুস ক্যানসার শুধু ধূমপানের ফল নয়, আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যও হতে পারে একটি নিঃশব্দ ঘাতক। তাই এখন থেকেই সচেতন হতে হবে, নয়তো ভবিষ্যতে এর মূল্য দিতে হতে পারে স্বাস্থ্যের ক্ষতিতে। ছবি: সংগৃহীত

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!