মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সামরিক বাহিনীর সাবেক ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক

আইন-অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৫, ১১:৩২ এএম

সামরিক বাহিনীর সাবেক ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক

দেশের সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় সাবেক ১৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত ও অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ জন্য ১১টি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমে সর্বনিম্ন দুজন থেকে চারজন কর্মকর্তা রয়েছেন।এই ১৩ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে মামলা হয়েছে, পাঁচজনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং চারজনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এসব কর্মকর্তা বিগত সরকারের আমলে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিরোধ সেলের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘অনুসন্ধান সম্পন্ন হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সে বিষয়ে কমিশনে সুপারিশ করবেন। এরপর কমিশন সেই সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা নেবে।’১৩ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. ছিদ্দিকুর রহমান। তাঁর ও তাঁর স্ত্রী গাজী রেবেকা রওশনের বিও হিসাব, শেয়ার, ব্যাংক হিসাব ও সঞ্চয়পত্র ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন। এর আগে, গত ১৭ এপ্রিল এই দম্পতির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ছিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
একই আদালত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ সাফিনুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী সোমা ইসলামের সাতটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। সাফিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এর আগে, গত ১৩ মার্চ তাঁদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
দুদকের সূত্র জানায়,সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার করে ব্যবসা পরিচালনা ও বাড়ি কিনেছেন।এ ছাড়া ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, তাঁর মেয়ে তাসনিয়া মাসুদসহ চারজনের বিরুদ্ধে গত ১১ মার্চ মামলা করে দুদক। তাঁদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়াগামী প্রবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক সামরিক সচিব ও ঝিনাইদহ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সালাউদ্দিন মিয়াজীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান করছে দুদক। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ভূমিহীনদের জমি দখল করে ৪০০ বিঘা জমিতে পার্ক নির্মাণ করেছেন। গত ১৯ ফেব্রæয়ারি তাঁকে তাঁর রিসোর্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিনে তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। গত ৩০ এপ্রিল তিনি জামিনে মুক্তি পান।
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) টি এম জোবায়েরের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি লন্ডনে ২৯ লাখ ৪৫ হাজার পাউন্ডে বাড়ি কেনা, বিদেশে অর্থ পাচার, মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণ এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। তাঁর ও তাঁর স্ত্রী ফাহমিনা মাসুদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আদালতের আদেশে গত ২১ এপ্রিল ট্রাস্ট ব্যাংকে থাকা জোবায়েরের পাঁচটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়।
শেখ হাসিনার সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তিনটি বিমানবন্দরের চারটি প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদক গত ২৭ জানুয়ারি চারটি মামলা করেছে। মামলাগুলোতে মোট ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তাঁর পরিবারের ১৩টি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের(এসএসএফ)সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মুজিবুর রহমান ও তাঁর স্ত্রীর নামে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে—এমন অভিযোগের তদন্ত করছে দুদক।দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ মে এয়ার মার্শাল শেখ আবদুল হান্নানের কয়েকটি ফ্ল্যাট ও জমি ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়, ঘুষ গ্রহণ, নিয়োগ-বাণিজ্য এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক বরখাস্ত করা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের একটি বাগানবাড়ি, চারটি বাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট ও বিভিন্ন কৃষিজমি জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তাঁর নামে থাকা নয়টি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে প্রায় ৪০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২৩ জানুয়ারি জিয়াউল আহসান ও তাঁর স্ত্রী নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাদাত হোসেন এবং উপপ্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে।আজকের পত্রিকা

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!