বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১

যমের চেয়েও কম নয়,রোজা ভাঙিয়ে বন্দির স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা!

আইন-অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ১০:৩৬ পিএম

যমের চেয়েও কম নয়,রোজা ভাঙিয়ে বন্দির স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা!

দেশের অভিশপ্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের ‘খলনায়ক’ হিসাবে পরিচিত অতিরিক্ত এসপি আলেপউদ্দিন। খোদ বাহিনীর মধ্যেই কুখ্যাতি পেয়েছিলেন ‘টার্গেট শুটার’ নামে। আবার কেউ কেউ বলতেন তিনি মানুষরূপী সাক্ষাত্ ‘জল্লাদ’। র‌্যাব-১১এ (নারায়ণগঞ্জ) থাকাকালীন ক্রসফায়ারের নামে দুহাতে অস্ত্র চালিয়ে মানুষ হত্যা করতেন। এমনকি ভালো মানুষকে জঙ্গি হিসাবে গ্রেফতার করে ক্রসফায়ার দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আসামির স্ত্রীকে ধর্ষণ করার মতো জঘন্য অপরাধও তিনি করেছেন। জিম্মি করে দফায় দফায় ধর্ষণ করার ফলে এক পর‌্যায়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ভুক্তভোগী মারা যায়। এদিকে গা শিউরে ওঠা নানা অপকর্মের পরও তাকে দেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পিপিএম (প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল) ও বিপিএম (বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল) পদক। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি। জঙ্গি দমনের নামে অনেককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছেন তিনি। পুলিশ ও র‌্যাবের একাধিক সূত্রে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য পাওয়া যায়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১ সালে ৩১তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে এসপি হিসাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন আলেপ উদ্দিন। বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায়। পোস্টিং পেয়ে ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি এসপি হিসাবে তিনি নারায়ণগঞ্জে র‌্যাব-১১ এর গোয়েন্দা ইউনিটে যোগদান করেন। চাকরিতে যোগ দিয়েই ছাত্রলীগের তকমা লাগিয়ে নিজেকে ব্যাপক ক্ষমতাধর পুলিশ কর্মকর্তা হিসাবে পরিচয় দিতেন। তিনি ১৩ বছরের চাকরি জীবনে ১২ বছরই ছিলেন র‌্যাবের বিভিন্ন ইউনিটে। র‌্যাব থেকে একবার রংপুর রেঞ্জে বদলি করার ৭ দিনের মাথায় আবার র‌্যাবেই ফিরে আসেন পতিত সরকারের ক্ষমতাধর এই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। সাহসিকতা ও জঙ্গি দমনের জন্য রাষ্ট্রীয় পদক পিপিএম ও বিপিএম পুরস্কারেও ভূষিত করা হয় তাকে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে টার্গেট শুটার হিসাবে নারায়ণগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী ও শনিরআখড়ায় অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগের ক্যাডারের ভূমিকায় ছিলেন এই আলেপ উদ্দিন। ৫ আগস্টের পর টার্গেট শুটার হিসাবে ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিহত করতে সশস্ত্র ভূমিকা রাখার তথ্য পেয়ে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার‌্যালয়ে সংযুক্ত থাকাবস্থায়ই গত ১২ নভেম্বর তুলে নিয়ে আসে পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাত্রাবাড়ীতে ৫ আগস্ট নিহত জোবায়ের ওমর খান হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে আসে। তবে তিনি ওই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না। প্রাথমিক তদন্তে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। ২২ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ ১২৭ জনকে আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেছিলেন নিহত জোবায়েরের ভাই জাবেদ ইমরান খান।১৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে আলেপউদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্তের তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপউদ্দিন (বরিশাল রেঞ্জ পুলিশ কার‌্যালয়ে সংযুক্ত) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার দায়ের করা মামলায় গত ১৩ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন তাকে আদালতে পাঠানো হয়।তাকে ২০১৮ সালের সরকারি আইনের ৩৯(২) ধারার বিধান অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তকালীন তিনি খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।
এদিকে আলেপউদ্দিনকে চিনেন, জানেন এমন একজন র‌্যাব সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, এই কর্মকর্তার চারিত্রিক সমস্যা ছিল। এ বিষয়টি র‌্যাবের অন্য কর্মকর্তারাও জানতেন। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতা হিসাবে দাপট থাকায় কেউ তাকে কিছু বলত না। এ কারণে তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন।আসলে কি করতেন আলেপউদ্দিন জানতে চাইলে ওই র‌্যাব সদস্য বলেন, ‘বিভিন্ন আসামি ধরে এনে তার স্ত্রীকে ক্রসফায়ার দেওয়ার ভয় দেখাতেন। এভাবে তিনি ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতেন। ভাইরাল হওয়া এক আসামির রোজাদার স্ত্রীকে ধর্ষণ করার যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তা সঠিক হতে পারে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, র‌্যাবে কর্মরত ছিলেন ২৪ বিসিএসের একজন কর্মকর্তা বলেন, কর্মজীবনে আলেপউদ্দিন র‌্যাবে কাজ করতেন জঙ্গি সেলের ইনচার্জ হিসেবে। গোয়েন্দাগিরিও করতেন কোনো কোনো সময়। কাকে কোথায় জঙ্গি বানাতে হবে এই গুরু দায়িত্বটা তিনিই পালন করতেন। জঙ্গি তকমা দিয়ে যেসব আসামি র‌্যাবে আনা হয়েছে তাদের কত মানুষের যে ক্ষতি করেছে এই আলেপ তা তদন্ত না করে বলা যাবে না। বিশেষ কিছু স্থানে ক্রসফায়ারও করেন তিনি। এসব কারণে কুখ্যাতি পেয়েছিলেন ‘জল্লাদ’ নামে।
এসপি আলেপের ক্ষমতার দাপটে কুড়িগ্রামের তার পরিবারের বিরুদ্ধেও। র‌্যাবে থেকে আলেপ নিজ এলাকায়ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। বিশেষ করে তিস্তা-কুড়িগ্রাম রেলপথ সংলগ্ন চায়না বাজার এলাকায় রেলওয়ের একটি বড় অংশ অবৈধভাবে দখল করেন। তার বড় ভাই আলতাব হোসেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার দাপট দেখিয়ে কুড়িগ্রামে রেলের বিপুল পরিমাণ জমি দখল করেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তার ভাইকে চেয়ারম্যান বানাতে চেয়েছিলেন আলেপউদ্দিন।সুত্র-যুগান্তর

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!