বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জাতীয় ঐক্য গঠনে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান বিএনপির

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৪, ০৭:৫৭ পিএম

জাতীয় ঐক্য গঠনে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান বিএনপির

দেশের শান্তি বিনষ্টকারী শক্তিকে প্রতিহত করতে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্য গঠনে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। বুধবার(২৭নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় ঐক্য গঠনে উদ্যোগ নেওয়া আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
এর আগে সন্ধ্যা ৬টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিএনপির প্রতিনিধি দল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত কয়েকদিনের কর্মকান্ড নিয়ে আমাদের দলের পক্ষ থেকে যে উদ্বেগ-সেই উদ্বেগের কথা প্রধান উপদেষ্টাকে জানাতে এসেছি। আমরা আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয় দ্রæত শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের ব্যবস্থা করবেন। দেশে যাতে এমন কোনো অবস্থার সৃষ্টি না হয় যাতে বিভাজন সৃষ্টি হয়।  
তিনি বলেন,এখন যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো জাতীয় ঐক্য। আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বিশেষ করে যারা বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় অথবা স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে চায় তাদের প্রতিহত ও প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের অবশ্যই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেতে হবে। এই কথাগুলো আমরা বলে এসেছি। 
টিসিবির ট্রাক বাড়ানোর কথা বলেছি: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা সেই সঙ্গে জনগণের যে দুর্ভোগ, বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হয়েছে এই বিষয়টি তুলে ধরেছি। টিসিবির ট্রাকগুলো এলাকাভিত্তিক বাড়ানোর কথা বলেছি। ট্রাক চলাচল, যানবাহন চলাচল যাতে নির্বিঘ্নে হয় সেটা বলেছি। সেইসঙ্গে কৃষিতে বিশেষ করে সার বিতরণের ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো এখনও ফ্যাসিস্টদের দোসররা নিয়ন্ত্রণ করছে। এক্ষেত্রে যারা জনগণের পক্ষে আছে তাদের এখানে নিয়ে আসার কথা আমরা বলেছি। 
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সেই সঙ্গে শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমরা বলেছি নরমাল যে অ্যাক্টিভিটিস আছে সেটা যেন চালু থাকে। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের বেতনের ক্ষেত্রে যেন বাধা সৃষ্টি না হয়। তারা যেন নিয়মিত বেতন পান সেজন্য সরকার যেন ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে। 
ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে: তিনি বলেন, আমরা আরেকটা বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বলেছি,ইউনিয়ন পরিষদ যেগুলো আছে সেগুলো বেশিরভাগ ফ্যাসিস্ট সরকারের জোরজবদস্তি নির্বাচনে তাদের মত নিয়ে এসেছিল। আমরা মনে করি, যেহেতু সিটি কর্পোরেশন পৌর কর্পোরেশন ভেঙে দেওয়া হয়েছে এখন ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী নির্বাচন দিতে হবে। 
ট্রেড বডি নিয়ে বলেন, ট্রেড বডিগুলো ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন ট্রেডবডি করতে হবে। সামগ্রিকভাবে আমাদের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্য গঠন করার আহ্বান জানিয়েছি। 
নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা অত্যন্ত জরুরি: ‘আমরা এটা বলেছি, সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন নির্বাচন সংস্কারগুলো সম্পূর্ণ করে যত দ্রæত সম্ভব নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা অত্যন্ত জরুরি।’ বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 
প্রসঙ্গত, এর আগে ২৩ অক্টোবর যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির তিন নেতা। ওই বৈঠকে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহ উদ্দিন আহমদ। বৈঠকের বিষয় নিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশে যাতে নতুন করে সাংবিধানিক সংকট না সৃষ্টি হয়, সে জন্য তারা সরকারকে খেয়াল রাখতে বলেছেন।
তারও আগে ৫ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের রোডম্যাপসহ আরও কিছু দাবির কথা তুলে ধরে বিএনপি। ওই বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের মধ্যেও এমন অনেকে আছেন, যারা গণঅভ্যূত্থানের যে স্পিরিট সেটাকে ব্যাহত করছেন। তাদেরকে সরানোর কথা বলে এসেছি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ শেষে তিনি জানান,প্রধান উপদেষ্টার কাছে চুক্তিভিত্তিক কিছু নিয়োগ বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা নির্বাচন বিষয়ে কথা বলেছি। নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে বলেছি। আমরা বলেছি, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন,নির্বাচন কবে হবে সে বিষয়ে রোডম্যাপ দিতে বলেছি। জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত অধ্যাদেশ দিয়ে বাতিল করতে বলেছি। বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যেন নির্বাচন সংস্কার কমিটিতে না যায়, সেটা আমরা বলেছি। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় ভুয়া ভোটের মাধ্যমে হওয়া সকল ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করতে বলেছি। সেইসঙ্গে ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালে নির্বাচনের সময় যারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কমিশনার ছিলেন তাদেরসহ ভুয়া ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন আয়োজনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!