বয়স ১০ বছর অথবা তদূর্ধ্ব বয়সী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেয়ার সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। সেইসঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে নেয়ার আইন জরুরি ভিত্তিতে বাতিল করতেও প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের সুপারিশ জমা দেয়। এতে এমন সুপারিশ করা হয়েছে।
১.জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন ২০২৩ এর মাধ্যমে এনআইডি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে, জরুুরি ভিত্তিতে তা বাতিল করা।
২.জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০১০ এ প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে পুনর্বহাল করা, যাতে এটি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত আধুনিক আইডেন্টিটি সিস্টেমকে আইনি ভিত্তি দিতে পারে। যার মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিক তার আইডেন্টিটি তথ্যের মালিকানা এবং তার সব আইডেন্টিটি তথ্যের ওপরে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেতে পারেন।
৩.জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত বিদ্যমান স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) পর্যালোচনা করে সকল অব্যবস্থাপনা, হয়রানি ও অনিয়মের অবসান ঘটিয়ে এ কার্যক্রমকে জনবান্ধব করা।
৪. ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সব নাগরিককে হালনাগাদ ছবিযুক্ত এনআইডি স্মার্টকার্ড প্রদানের লক্ষ্যে এখনই প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করা, যাতে ভোটার শনাক্তকরণে এটি ব্যবহার করা যায়।
৫.বাংলাদেশের প্রায় সকল গণমাধ্যমে লাখ লাখ বাংলাদেশি নাগরিকের এনআইডি তথ্য ফাঁস হওয়া এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম থেকে নামমাত্র মূল্যে বা এমনকি বিনামূল্যে এই তথ্যগুলো ফাঁসের অভিযোগের প্রেক্ষিতে, এই দাবিগুলোর সত্যতা সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ এবং এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁসের অন্তর্নিহিত কারণ,প্রভাব এবং পরিণতি নির্ধারণ করতে স্বাধীন তদন্তের ব্যবস্থা করা। দোষী ব্যক্তিদের প্রচলিত আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করা।৬.বর্তমানের ১৬ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী বাংলাদেশি নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের পাশাপাশি ভবিষ্যতে ১০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী শিশুদের জন্য পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম গ্রহণ করা।
৭.সারাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এনআইডি সংক্রান্ত সব সেবা সুচাররূপে সম্পন্নের নিমিত্তে দেশের বৃহত্তম জাতীয় তথ্য ভান্ডারের নিরবচ্ছিন্ন অপারেশন, আপগ্রেডেশন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিবর্তে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংস্থা নামে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গঠন করা, যার দায়িত্ব হবে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন, সংরক্ষণ ও বিতরণ। এই সংস্থার অর্গানোগ্রাম ও জনবল কাঠামো নির্ণয়ে একটি আন্তর্জাতিক অডিট ফার্মের মাধ্যমে নিরীক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৮. বর্তমানে পরিচালিত সম্পূর্ণ এনআইডি সিস্টেমকে তথা সংশ্লিষ্ট ডাটা সেন্টার, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার/ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, ডাটাবেজ ক্রেডেনশিয়ালস্ ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান থেকে প্রস্তাবিত জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংস্থার নিকট হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা। প্রস্তাবিত আধুনিক আইডেন্টিটি সিস্টেমের জন্য একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
আইডেন্টিটি এবং আইডেন্টিটি সিস্টেম-১.জাতীয় পরিচয়পত্রকে ডিজিটাল (ভার্চুয়াল) ভার্সনে রূপান্তরের ব্যবস্থা করা। রিপোর্টে প্রস্তাবিত (ঝঝও)-ভিত্তিক আইডেন্টিটি সিস্টেমের মাধ্যমে আমাদের বিদ্যমান এনআইডি কার্ডকে একটি স্ট্যান্ডার্ডাইজ্ড ডিজিটাল ফরম্যাটে কার্যকরভাবে রূপান্তর করা। এই লক্ষ্যে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হবে বর্তমান এনআইডি সিস্টেমকে একটি পূর্ণাঙ্গ ঝঝও-ভিত্তিক আইডেন্টিটি সিস্টেমে রূপান্তর করা।
২.প্রস্তাবিত ঝঝও-ভিত্তিক আইডেন্টিটি সিস্টেম বাস্তবায়নের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে কোনো স্ট্যান্ডার্ডাইজ্ড ঝঝও প্রযুক্তি স্ট্যাক ব্যবহার করে প্রস্তাবিত আইডেন্টিটি সিস্টেম ডিজাইন ও ডেভেলাপ করা। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় ট্রাস্ট ফ্রেমওয়ার্ক,এবং আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা এবং অ্যাপ্লিকেশন ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা।
৩.ঝঝও-ভিত্তিক আইডেন্টিটি সিস্টেমের অনুষঙ্গ হিসেবে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের স্মার্টফোনের জন্য একটি ঝঝও ওয়ালেট ডেভেলপ করা। এই ওয়ালেটটি ডিজাইন এবং ডেভেলপের সময় এর সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসিকে অগ্রাধিকার দেয়া। তবে যাদের স্মার্টফোন নেই তাদের জন্য ফিচার ফোন ভিত্তিক একটি সমাধান ডেভেলপ করা।
৪.প্রস্তাাবিত সিস্টেম এবং এর বিভিন্ন সাব-কম্পোনেন্ট ও ঝঝও ওয়ালেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত নিরাপত্তা নিরীক্ষা (সিকিউরিটি অডিট) প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সিকিউরিটি অডিট পরিচালনা করা।
৫.ঝঝও-ভিত্তিক এই সমাধান প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পরে বিদ্যমান সরকারি এবং বেসরকারি অনলাইন পরিষেবাগুলো রূপান্তরের ব্যবস্থা করা, যাতে এই সিস্টেমের সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসি ফিচারগুলোর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হয়। এর জন্য আন্তর্জাতিক বেস্ট প্র্যাক্টিসগুলো অনুসরণ করে একটি পরিচয় প্রমিতকর ফ্রেমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা, যাতে দেশের মধ্যে এবং বিশ্বব্যাপী অন্যান্য দেশের সঙ্গে এনআইডি সিস্টেমের আন্তঃপরিচালনযোগ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
৬. প্রস্তাবিত সিস্টেমটি ডেভেলপ করার পরে এটিকে টেস্ট করা। বিশেষ করে প্রস্তাবিত সিস্টেমটিতে অনেকগুলো জটিল এবং পরস্পর সংযুক্ত সাব-কম্পোনেন্ট রয়েছে সেগুলোকেও পৃথকভাবে টেস্ট করা।
৭.এরূপ একটি কমপ্রিহেনসিভ জাতীয় পরিচয় ব্যবস্থার সঙ্গে উপযুক্ত ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা এবং গোপনীয়তা আইন প্রণয়ন করা। এই আইন দেশের মধ্যে পরিচয় এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য সম্পর্কিত যে কোনো ভবিষ্যৎ অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে।
আপনার মতামত লিখুন :