শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আদানির সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের করা বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনার নির্দেশ

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৪, ০১:৫৬ পিএম

আদানির সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের করা বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনার নির্দেশ

ভারতের আদানি গ্রæপের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা সব বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর)   বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।এদিন বিদ্যুৎ আমদানি  নিয়ে ভারতের আদানি গ্রæপের সঙ্গে সব চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন বা পর্যালোচনার করতে উচ্চ পর্যায়ের অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন  হাইকোর্ট। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এম আব্দুল কাইয়ুম। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান, অ্যাডভোকেট আফরোজা ফিরোজ মিতা ও ব্যারিস্টার কামারুন মাহমুদ মিতা।
আদালত জানান, বিদ্যুৎ নিয়ে ভারতের আদানি গ্রæপের সঙ্গে সব চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করতে উচ্চ পর্যায়ের অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অনুসন্ধান কমিটিতে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ রাখতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এক মাসের মধ্যে কমিটি গঠন করে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বিদ্যুৎ নিয়ে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে অসম চুক্তি বাতিল করতে কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। এছাড়া ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তির সময় যে দর কষাকষি হয়েছিল, তার নথি এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলেছেন আদালত।
এর আগে ১৩ নভেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট করা হয়। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ব্যারিস্টার এম কাইয়ুম জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন। বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি দেশের স্বার্থবিরোধী ঊল্লেখ করে এ অসম চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
৬ নভেম্বর বিদ্যুৎ নিয়ে ভারতের আদানি গ্রæপের সঙ্গে সব চুক্তি বাতিল চেয়ে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
নোটিশে অবিলম্বে অন্যায্য একতরফা চুক্তি পুনর্বিবেচনা অথবা পুরোটাই বাতিল চাওয়া হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে আদানিকে এ ঘটনায় চুক্তি পুনর্বিবেচনার কার্যক্রম শুরু না করলে হাইকোর্টে রিট করবেন বলেও জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে বিস্তারিত রিপোর্ট দেয়ার জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে। লিগ্যাল নোটিশের জবাব দিতে পিডিবির চেয়ারম্যান ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ৩ তিন সময় বেঁধে দেয়া হয়। নোটিশের সময় পেরিয়ে যাওয়ায় এ রিট আবেদনটি করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনায় আদানির সঙ্গে তাড়াহুড়ো করে ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি হয়। ওই সময় দেশে আমদানি করা কয়লানির্ভর কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়নি। এসব চুক্তির একটি ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে করা ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডে আদানির ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মূলত বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় পর্যালোচনা কমিটির সভায় ১১টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব তথ্য-উপাত্ত ও নথি কমিটিকে সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে ভারতের আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র।
উল্লেখ্য, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার দেশের স্বার্থ যথাযথভাবে রক্ষা করে বিভিন্ন চুক্তি করেছে কি না, বিশেষ করে এসব চুক্তিতে স্বচ্ছতার অভাব আছে কি না, তা নিরূপণে এক বিশেষ আইনের অধীন একটি প্যানেল গঠন করেছে অন্তর্র্বতী সরকার। এসব চুক্তির একটি ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে করা ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডে আদানির ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মূলত বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
২০২৩–২৪ অর্থবছরের সাম্প্রতিকতম নিরীক্ষা প্রতবেদনের বরাতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) একজন কর্মকর্তা বলেন, আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে খরচ পড়ছে ইউনিটপ্রতি ১২ টাকা (০.১০০৮ ডলার)। এটি ভারতের অন্যান্য বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের খরচের চেয়ে ২৭ শতাংশ বেশি। আর ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের খরচের চেয়ে ৬৩ শতাংশের বেশি। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ গত বছরের এপ্রিল থেকে আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনছে। পাশাপাশি ভারতের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কিনছে প্রায় ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!