দ্বৈতনাগরিক হয়েও শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপি হয়ে দেশ ও জনগনের সেবা তাদের কাছে ছিল লোক দেখানো কায়কারবার। আসলে তারা ছিলেন দুুুুুুুুুুর্নীতিবাজ-লুন্ঠনকারী। তারা অর্থ পাচার করে বিদেশে ফ্ল্যাট, বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা লাভ ও দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করা ৬৩ বাংলাদেশির নাম জানা গেছে। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, ব্যবসায়ী, ধনাঢ্য ব্যক্তিসহ প্রভাবশালীরা রয়েছেন,আছেন দালাল সুবিধাবাদী হাইব্রিডও। অনেকেই সংবিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। পরে তাদের কেউ কেউ মন্ত্রী,প্রতিমন্ত্রীর আসনেও বসেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। এসব খারাপ মানসিকতা নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে লুটপাট করেছে। তাদের স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবার বিদেশে রেখে নিজে দেশের পতাঁকা হাতে নিয়ে করেছেন দুর্নীতি-লুটপাট। আর এই অবৈধ আয়ের অর্থ দুহাতে বিদেশে পাচার করেছেন। পাঠিয়েছেন আগেই পাচারকরে রাখা পরিবারের কাছে।
দুদক সুত্রগুলো জানায়,তারা ক্ষমতার অপব্যবহার,অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ অর্জন করে দেশ-বিদেশে সম্পদের মালিক হয়েছেন। দুদক তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে।
সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো বাংলাদেশি দ্বৈত নাগরিক হয়ে অন্য কোনো দেশের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি এমপি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী হতে পারেন না।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দুদক সাবেক মন্ত্রী,প্রতিমন্ত্রী,এমপিসহ প্রায় ৩০০ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, পেশিশক্তি ব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। তাদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার করে বিভিন্ন দেশে সম্পদ অর্জন ও নাগরিকত্ব গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন। বিভিন্ন দেশে ২০ জনের ফ্ল্যাটসহ নানা সম্পদ রয়েছে। আটজনের বিদেশে ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত অনুসন্ধানে এ সংখ্যা পাওয়া গেছে। দুদকের তদন্ত চলছে। ভবিষ্যতে আরও অনেক নাম পাওয়া যাবে বলে তদন্তসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সূত্র জানায়, বিদেশে তাদের সম্পদের তথ্য চেয়ে দুদক সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে। দুদকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত কোনো দেশই সুনির্দিষ্টভাবে তাদের সম্পদের তথ্য পাঠায়নি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ওইসব মন্ত্রী,প্রতিমন্ত্রী,এমপির অধিকাংশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদিকে দুদক দেশ-বিদেশে তাদের সম্পদের খোঁজ করছে। অনুসন্ধান শেষে তাদের বিরুদ্ধে মামলার পর প্রত্যেককে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। মামলার আগে বা পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে রিমান্ডে তাদের অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদও করা হবে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ওইসব প্রভাবশালীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, দ্বৈত নাগরিকত্ব দুদকের তপশিলভুক্ত কোনো অপরাধ নয়। তবে যারা অনিয়ম, দুর্নীতি, হুন্ডি, অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিক, তাদের দুদক আইনের আওতায় আনা হবে। দ্বৈত নাগরিকদের সম্পদের তথ্য চেয়ে দুদক সংশ্লিষ্ট দেশে চিঠি পাঠিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, দ্বৈত নাগরিক হলে কেউ জাতীয় অথবা অন্য কোনো পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। কেউ এ তথ্য গোপন করে নির্বাচনে অংশ নিলে তা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। তখন তদন্ত করে কমিশন এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেবে। আর কেউ তথ্য গোপন করে নির্বাচিত হলে তাঁর বিরুুুদ্ধে তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, দ্বৈত নাগরিকের আড়ালে কেউ হুন্ডি ব্যবসা, অর্থ পাচার, আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিং করলে তা অপরাধ। এসব ক্ষেত্রে দুদক আইনি ব্যবস্থা নেবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দ্বৈত নাগরিক হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে এমপি হওয়া ফৌজদারি অপরাধ। তারা নিজেরাই জানেন– দ্বৈত নাগরিক হয়ে জনপ্রতিনিধি হওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হচ্ছেন। আবার তারা শপথ নিয়ে আরেক দফায় প্রতারণা করছেন। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী হয়ে নানা সুবিধা অর্জন করেছেন; ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন– এ সবই প্রতারণা। এটা বহুমাত্রিক অপরাধ। যথাযথ আইন অনুযায়ী তাদের বিচার হওয়া উচিত। কোনো জনপ্রতিনিধির দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রমাণ হলে নির্বাচন কমিশন তাঁর সদস্যপদ বাতিল করতে পারে। ভবিষ্যতে নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দ্বৈত নাগরিকত্ব-মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্যদের মধ্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ যুক্তরাজ্যের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বেলজিয়ামের, কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ যুক্তরাজ্যের, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু যুক্তরাষ্ট্রের, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত যুক্তরাষ্ট্রের, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন সুইজারল্যান্ডের,প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান যুক্তরাজ্যের, রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম জাপানের, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক যুক্তরাষ্ট্রের, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান কানাডার,অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল যুক্তরাজ্যের, এলজিআরডিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম যুক্তরাজ্যের, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী যুক্তরাজ্যের, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী যুক্তরাজ্যের নাগরিক।
এমপিদের দ্বৈত নাগরিত্ব-দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়া সাবেক এমপিদের মধ্যে মাহবুবউল-আলম হানিফ কানাডার, আবদুস সোবহান গোলাপ যুক্তরাষ্ট্রের, শফিকুল ইসলাম শিমুল কানাডার,তানভীর হাসান জার্মানির, এমএ ওয়াহেদ পাপুয়া নিউগিনির, নজরুল ইসলাম বাবু মালয়েশিয়ার, নিজাম উদ্দিন হাজারী মালয়েশিয়ার, অধ্যাপক এম আবদুল্লাহ মালয়েশিয়ার, মাহী বি চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী কানাডার, শামীম ওসমান কানাডার, তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির জার্মানির, শফিকুল ইসলাম শিমুল কানাডার, সালাহউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ ওরফে এসএম জাহিদ যুক্তরাষ্ট্রের, মোহাম্মদ হাবিব হাসান কানাডার এবং মাহফুজুর রহমান ুমিতা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
এ ছাড়া বিদেশে ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে অনেকের। তাদের মধ্যে বরখাস্ত যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের মালয়েশিয়ায়, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবীর বিন আনোয়ারের কানাডায়, বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর কানাডায়, ব্যাংকার আমজাদ হোসেনের যুক্তরাষ্ট্রে, পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের কানাডায়, ঢাকা ওয়াসার সাবেক এমডি তাকসিম এ খানের যুক্তরাষ্ট্রে, এস আলম গ্রæপের কর্ণধার সাইফুল আলমের সাইপ্রাস ও সিঙ্গাপুরে,বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারক সমিতির সাবেক সভাপতি হাবিবউল্লাহ ডনের মালয়েশিয়ায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছেলে রাহগীর আল মাহী এরশাদের মালয়েশিয়ায়, সাবেক ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের ম্যানেজার হারুন অর রশিদের মালয়েশিয়ায়, ওরিয়ন গ্রুপের সাবেক কর্মকর্তা মুজিবুর রহমানের মালয়েশিয়ায়, সাবেক সচিব হারুনুর রশিদের মালয়েশিয়ায়, পল্টনের রোকেয়া ম্যানশন ও কারপ্লাস গাড়ি শোরুুুুুুুমের মালিক এবিএম আজিজুল ইসলামের মালয়েশিয়ায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেরানি আবজাল হোসেনের অস্ট্রেলিয়ায়, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক এমপি মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তমাল মনসুরের যুক্তরাষ্ট্রে,প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা সেলিমা হুদার নামে যুক্তরাজ্যে দুটি ফ্ল্যাট,আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মেয়ে অনুশয় হোসেনের যুক্তরাজ্যে,সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ান রহমানের যুক্তরাজ্যে, ছাগলকান্ডে আলোচিত এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের মেয়ে ফারজানা রহমানের কানাডায় ও মোরশেদ খানের নামে সিঙ্গাপুরে সিংটেল মোবাইল কোম্পানিতে শেয়ার রয়েছে। এছাড়াও বিগত শেখ হাসিনা সরকারের অনেক চেলাচামুন্ডা,যাদেরকে সাধারন মানুষ দালাল হিসেবে চেনেন জানানেন এমন অনেকেই বিদেশে অর্থপাচারকরাসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিলেন তারা এখন ধরাঁেছায়ার বাইরে রছেনে। তাদেরকেউ ধরতে হবে।সুুত্র-সমকাল
আপনার মতামত লিখুন :