শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

ঢাকার পূর্বাচলে শেখ হাসিনা-রেহানা পরিবারের প্লট নিয়ে অনুসন্ধান শুরু

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৫:১১ পিএম

ঢাকার পূর্বাচলে শেখ হাসিনা-রেহানা পরিবারের প্লট নিয়ে অনুসন্ধান শুরু

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ক্ষমতার অপব্যবহারসহ দুর্নীতির মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে ৬টি প্লট বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের ৬ সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে।
প্লট নেয়া ৬ সদস্য  হলেন-সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজিব ওয়াজেদ (জয়), মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল),ছোট বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রেদোয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক। দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) এ ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন। 
দুদক জানায়,রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের ১৩/এ ধারার ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,ছেলে সজিব ওয়াজেদ (জয়), মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), ছোট বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রেদোয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকীর নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড  থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ৬টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এ ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমে তথ্য বের হয়েছে। ব্যাপারটি গুরুত্ব দিয়ে কমিশন থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এর আগে ২২ ডিসেম্বর দুদক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ওঠা ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। তারও আগে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের টিম গঠন করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। ওই দুইটি অভিযোগই একই অনুসন্ধান টিম অনুসন্ধান করছে। তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিষয়ে একটি প্রাথমিক তদন্ত করে। ২০১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বনাম রিজভী আহমেদ মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম প্রথম নজরে আসে। এফবিআইয়ের তদন্তে সজীব ওয়াজেদ জয়ের গুরুতর আর্থিক কেলেঙ্কারি জানাজানি হয়। বিশেষ করে, তার নামে থাকা হংকং এবং কেম্যান আইল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে স্থানীয় একটি মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক এবং লন্ডনের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে টাকা পাচারের তথ্য উঠে আসে। এফবিআই তাদের লন্ডনের প্রিিতনিধির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং প্রমাণ পেয়েছে যে সেখানে আর্থিক অনিয়ম এবং মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের (ডিওজে) সিনিয়র ট্রায়াল এটর্নি লিন্ডা সেমুয়েলস স্পেশাল এজেন্ট লা প্রিভোটের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমা করা হয়েছে।
আর গত ১৭ ডিসেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি বা ৫৯ হাজার কোটি টাকাসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যেখানে শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকসহ পরিবারের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে রূপপুর ছাড়াও আশ্রয়ণসহ ৮টি প্রকল্পে দুর্নীতির তথ্য আমলে নেয়া হয়েছে। অন্যান্য প্রকল্পগুলোতে ২১ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
এরপর ১৮ ডিসেম্বর দুদকের উপপরিচালক সালাহউদ্দিনের নেতৃত্ব পাঁচ সদস্যের টিম গঠন করা হয়। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন, উপ-পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, সহকারী পরিচালক এসএম রাশেদুল হাসান ও সহকারী পরিচালক একেএম মর্তুজা আলী সাগর।
গত ১৫ ডিসেম্বর হাসিনা পরিবারের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি) থেকে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা) লোপাটের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। গত ৩ সেপ্টেম্বর এ অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ।
গত ১৯ আগস্ট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে শেখ হাসিনা পরিবারের দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। বেশ কয়েকটি পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক মালয়েশিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি) থেকে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা) লোপাট করেছেন। বিভিন্ন দেশের সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতির অনুসন্ধানকারী গেøাবাল ডিফেন্স কর্পোরেশনের তথ্যের বরাত দিয়ে এ প্রতিবেদন করা হয়। খুব দ্রæত তদন্ত কাজ শেষ হতে পারে।

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!