নিউয়র্ক থেকে দেশে ফিরেই লটের সাগড়ে বসে দুর্নীতিতে সপে দেয় নিজেকে। দেশে ফিরেই তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ব্যবসায়ী ও কাস্টমস-আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জাতয়ি সংসদের মরহুম হুমায়ুন রশীদ চ্যেধুরীর পিএস ছিরৈন এটাই তার পরিচয়। এ পরিচয়ই ধের শীর্ষআমলা থেকে শুরু সব কিছুই তিনি ভোগ করেছেন নিয়েছেন। সম্পদেও তথ্য নিয়ে কোনটা রেখে কোনটা আগে বলা হবে তা নিয়েও আছে রহস্য- যেমন রাজধানীর
পূর্বাচলে প্লট, সুস্থ ছেলেকে প্রতিবন্ধী কোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও পরবর্তী সময়ে ওই ছেলে বেকার থাকাবস্থায় রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনে এবং আমেরিকায় বড় ছেলের উচ্চশিক্ষার ব্যয়নির্বাহের নামে বিদেশে অর্থ পাচারও করেছেন। ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের টাকায় সপরিবারে দেশবিদেশ ঘুরেছেন। শুল্ক গোয়েন্দা ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) থেকে সোর্স মানির নামে টাকা লুটেছেন দুহাতে।
এ সবকিছু জায়েজ করেছেন পাঠ অযোগ্য বই বিক্রির নামে। স্বনামধন্য লেখকদের বই যেখানে কোটি টাকা বিক্রি হয় না, সেখানে তিনি ৮ কোটি টাকার বই বিক্রির সম্মানি দেখিয়ে অবৈধ আয় বৈধ করেছেন। শুধু তাই নয়, সরকারি অর্থের অপচয়ের ক্ষেত্রে ছিলেন সিদ্ধহস্ত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্বাচলে (প্লট-১৬, রোড-৪০১/১, সেক্টর-০৯) ঝর্ণাধারা নামে একটি প্লট আছে। মুখ্যসচিব থাকাবস্থায় প্লটটি নেন তিনি। এছাড়া রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বিপরীতে রূপায়ণ স্বপ্ননিলয় কন্ডোমিনিয়াম প্রজেক্টে ৫ কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট (এফ-২) আছে। এই ফ্ল্যাটের মালিক নজিবুর রহমানের ছোট ছেলে ফারাবি এনএ রহমান।
ছেলের নামে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। বাজারদরের চেয়ে কম দামে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন একসময়ে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই প্রধান কর্তা।
বড় ছেলের অপরাধ ঢাকতে আরও উদার ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেন নজিবুর রহমান। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনে ইকোনমিক মিনিস্টার হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে ফুয়াদ এন রহমানকে একটি স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান।
পরবর্তী সময়ে ফুয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ছাত্রছাত্রীদের ল্যাপটপ এবং অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে। এ কারণে ফুয়াদকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়।
এছাড়া নজিবুর রহমান তার ছেলে ফুয়াদকে স্থানীয় স্টাফ হিসাবে নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনসুলেটে ২০১৫-১৬ সালে প্রভাব খাটিয়ে চাকরি দেন। মাসে দেড় হাজার ডলার বেতন নিলেও ফুয়াদ মিশনে কোনো কাজ করেননি।
২০১৫ সালে পরিবেশ ও বন সচিব থেকে নজিবুর রহমানকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার পর আরও বেপরোয়া তিনি। এনবিআরে নিয়োগ পাওয়ার পর সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ শুরু করেন। ক্ষমতার দম্ভে ধরাকে সরা জ্ঞান করতেন। প্রকাশ্য মিটিংয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অপমানসূচক আচরণ করতেন তিনি।
তথ্যঅনুসন্ধানে জানা যায়,নজিবুর রহমান এনবিআর চেয়ারম্যান থাকাকালে ‘প্রটোকল ব্যবস্থাপনা ও আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার’নামে একটি বই লিখেন। মূলত ঘুস গ্রহণের মাধ্যমে অর্জিত আয় বৈধ করতে বই লেখার ফন্দি আঁটেন। মাঠ পর্যায়ে কর অফিস, ভ্যাট অফিস, একাডেমিতে পাঠিয়ে জোরপূর্বক বই কিনতে বাধ্য করেন,গছান। এ বই বিনামূল্যে ছাপিয়ে দেন তৎকালীন কাস্টমসের এক কমিশনার।
পুরস্কারস্বরূপ তাকে কাস্টমসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হয়। আর বই বিপণনের দায়িত্ব পালন করেন সিআইসির তৎকালীন ডিজি বেলাল উদ্দিন। বই বিক্রির সম্মানি বাবদ তার ট্যাক্স ফাইলে ৮ কোটি টাকা বৈধ করা হয়। একই কায়দায় নিজ স্ত্রী নাজমা রহমানের নামে লেখা বইও জোরপূর্বক মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোকে কেনানো হয়। সেখান থেকেও মোটা অঙ্কের অবৈধ অর্থ বৈধ করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সংস্থার প্রধান হওয়া সত্ত্বেও সোর্স মানি হিসাবে শুল্ক গোয়েন্দা ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) থেকে টাকা নিতেন নজিবুর রহমান। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন তৎকালীন দুই ডিজি। সোর্সের নাম সরকারি দলিলদস্তাবেজে উল্লেখ না করার বাধ্যবাধকতা থাকায় টাকা সরাতে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হতো।
অন্যদিকে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের টাকায় দেশবিদেশ ঘুরেছেন। সফটওয়্যার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক ভিয়েতনামে ১০০ কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। এর পরিবর্তে আমেরিকায় বিজনেস টাইকুনদের মতো প্রটোকলে সপরিবারে নজিবুর রহমানকে ঘুরিয়ে আনা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সাবেক কর্মকর্তা জানান নজিবুর রহমান ভদ্রলোকের মুখোশ পরে দুর্নীতি করেছেন। তার অবৈদ অর্জিত সম্পদ বাজোয়াপ্ত করে সরকারের কোষাগারে জমা নেওয়া উচিত।তথ্য সহায়তায় যুগান্তর
আপনার মতামত লিখুন :