বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২

নির্বাচন কেন্দ্রিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়টার্সকে জানালেন জামায়াত আমির

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৫, ০৯:৪৭ পিএম

নির্বাচন কেন্দ্রিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়টার্সকে জানালেন জামায়াত আমির

ডেইলি খবর ডেস্ক: জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী জোটে যোগ দিয়েছে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ফলে ভোটের মূল লড়াই হতে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্বাধীন ও বিএনপি জোটের মধ্যে। গণঅভ্যুত্থানের পর বহুল আকাঙ্ক্ষিত এ নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তার সাক্ষাৎকার সম্পর্কিত প্রতিবেদনে রয়টার্স লিখেছে, আগামী ফেব্রæয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে শক্ত অবস্থান নেওয়ার প্রত্যাশায় থাকা একসময় নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামী ঐক্য সরকারে যোগ দিতে আগ্রহী বলে জানিয়েছে। দলটির আমির শফিকুর রহমান বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলো এক হলে তারা যৌথভাবে সরকার পরিচালনায় প্রস্তুত।
মতামত জরিপগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, প্রায় ১৭ বছর পর প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর পর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকতে পারে। এর আগে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের শরিক হিসেবে ক্ষমতায় ছিল দলটি।
ঢাকার একটি আবাসিক এলাকায় নিজের কার্যালয়ে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শফিকুর রহমান বলেন, অন্তত পাঁচ বছরের জন্য একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র গড়াই তাদের লক্ষ্য। দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হলে সরকার যৌথভাবে চালানো সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সম্প্রতি একটি প্রজন্মভিত্তিক (জেন-জি) দলের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়ার পর জামায়াতকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা বাড়ে।
ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক শাসনব্যবস্থার পক্ষে থাকলেও জামায়াত তাদের সমর্থনভিত্তি বিস্তৃত করার চেষ্টা করছে। শফিকুর রহমান বলেন, দুর্নীতিবিরোধী কর্মসূচি যে কোনো ঐক্য সরকারের অভিন্ন এজেন্ডা হতে হবে। তার মতে, যে দল সবচেয়ে বেশি আসন পাবে, প্রধানমন্ত্রী সেই দল থেকেই হবেন। জামায়াত সর্বোচ্চ আসন পেলে কে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হবেন, তা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর জামায়াতের রাজনৈতিক পুনরুত্থান ঘটে। ২০২৪ সালের আগস্টে তরুণদের নেতৃত্বে আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়েন। তার দল আওয়ামী লীগ বর্তমানে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। শেখ হাসিনার শাসনামলে জামায়াতের একাধিক শীর্ষ নেতাকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। জামায়াতের দলীয় সনদ সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক, এমন রায়ে ২০১৩ সালে দলটিকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হয়। নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতী সরকার ২০২৪ সালের আগস্টে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে।
শফিকুর রহমান বলেন,শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান ও তার দেশত্যাগের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটি উদ্বেগজনক। ভারতের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের বিষয়ে তিনি জানান, চলতি বছর একজন ভারতীয় কূটনীতিকের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে। তবে সেই বৈঠক গোপন রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক মন্তব্য না করলেও দেশটির এক সরকারি সূত্র বিভিন্ন দলের সঙ্গে যোগাযোগের কথা নিশ্চিত করেছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে জামায়াতের ঐতিহাসিক ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, তারা কোনো একটি দেশের দিকে ঝুঁকে পড়তে চান না; বরং সবার সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখাই তাদের নীতি।
এদিকে,জামায়াত অন্তর্ভুক্ত কোনো সরকার বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে স্বস্তিতে থাকবে না বলেও ইঙ্গিত দেন শফিকুর রহমান। ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত শাহাবুদ্দিন চলতি মাসে রয়টার্সকে জানান, প্রয়োজনে মেয়াদের মাঝপথে সরে যেতে তিনি প্রস্তুত। বুধবার রয়টার্সের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপে রাষ্ট্রপতি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। ছবি : সংগৃহীত

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!