৩১ ডিসেম্বর জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে ‘নতুন বাংলাদেশের’ ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন,এই ঘোষণাপত্রে আগামীর বাংলাদেশের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে। ৩১ ডিসেম্বর জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে ‘নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে’ বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে।
রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলতি বছরের শেষ দিন, ৩১শে ডিসেম্বর বেলা তিনটায় জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র ঘোষণা করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেই ঘোষণাকে সামনে রেখে রোববার দুপুরে বাংলামোটরে নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন।
চলতি বছরেই জুলাই মাসের শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক পর্যায়ে রূপ নেয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে। তিন আগস্ট জাতীয় শহীদ মিনারে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এক দফা ঘোষণার পরপরই মাঠে নেমে আসেন সর্বস্তরের মানুষ। জুলাই থেকে আগস্টের শুরুতেই প্রাণ দেন সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা। এরই ধারাবাহিকতায় পাঁচ আগস্ট দুপুরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তিনি এখন দিল্লিতে অবস্থান করছেন। হাসিনার পতনের পর উল্লাসে মাতেন সর্বস্তরের মানুষ।
২৯ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আশা প্রকাশ করেন,৩১ ডিসেম্বর জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে ‘নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে’ বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে। ঘোষণাপত্রে মুজিববাদী সংবিধান `কবরস্থ` ঘোষণা করার দাবি তাঁদের।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা চাই, মুজিববাদী সংবিধানকে কবরস্থ ঘোষণা করা হবে। যেখান থেকে একদফার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, ঠিক সেই জায়গা থেকে মুজিববাদী বাহাত্তরের সংবিধানের কবর রচিত হবে। আমরা প্রত্যাশা রাখছি, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে সাধারণ মানুষ যেভাবে রাস্তায় নেমে এসেছিল, ঠিক তেমনিভাবে ৩১ ডিসেম্বর আবারও মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। ওই দিন জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে। এই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র পাঁচ আগস্ট হওয়া উচিত ছিল। এটি না হওয়ার কারণে স্বৈরাচারের দোসররা সক্রিয় রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মানুষ ৭২ এর মুজিববাদের সংবিধানের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। ৭২ এর সংবিধানের বিরুদ্ধে যেভাবে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, সেটাকে স্বীকৃতি দিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে। ৩১ ডিসেম্বর আগের সংবিধানের কবর রচনা হবে।
হাসনাত বলেন, এটা নির্দিষ্ট কোনো দলের প্রক্লেমেশন না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারিত জাতি। আর যেন প্রতারিত না হই, এজন্য এই ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। আমরা চাই যেখান থেকে এক দফা ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, সেখান থেকেই মুজিববাদের কবর রচনা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন,আমরা বিপ্লবের একটিমাত্র ধাপ অতিক্রম করেছি। জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র আরও আগে ঘোষণা করা প্রয়োজন ছিল।
তিনি বলেন,আমরা বিশ্বাস করি,আমাদের বিপ্লব যেমন ফ্যাসিস্টবিরোধী সবাইকে ধারণ করতে পেরেছিল, এই ঘোষণাপত্রও সবার আশা-আকাঙ্খাকে ধারণ করতে পারবে।এর মধ্যে ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া করা হয়েছে বলে জানান সারজিস আলম।
সারজিস আলম বলেন, এই ঘোষণাটি সামগ্রিকভাবে সারা বাংলাদেশে লিখিত অবস্থায় থাকবে। পুরাতন সিস্টেমগুলোকে রিজেক্ট করবে, নতুন সিস্টেম তৈরি করবে। আগামীতে মানুষ যখন ভোট দেবে তখন তারা বুঝতে পারবে কোন প্রেক্ষাপটে অভ্যুত্থান হয়েছিলো। আমরা বিশ্বাস করি মানুষের মনকে যেভাবে ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় করেছিল, তেমনিভাবে এই ঘোষণাপত্র মানুষের মনে ধারণ করবে। ৫ আগস্টের মতো ৩১ ডিসেম্বরও সবাইকে মাঠে নেমে আসার আহবান৫ আগস্টের মতো ৩১ ডিসেম্বরও সবাইকে মাঠে নেমে আসার আহবান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, শহীদ পরিবারের লোকজন ছাড়াও সব রাজনৈতিক দল ও গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে জড়ো হবে। নাৎসিবাদী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণমানুষের আকাঙ্খা ঘোষণা করা হবে।
বক্তব্যের পর উপস্থিত সাংবাদিকেরা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।এক প্রশ্নের জবাবে হাসনাত বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতিগুলোর মাধ্যমে ভারতীয় আগ্রাসনের ইনস্টলমেন্ট হয়েে ঘোষণাপত্রে স্পষ্ট করা হবে, মুজিববাদী সংবিধান কীভাবে গণমানুষের আকাঙ্খাকে বিনষ্ট করেছে এবং ঠিক কীভাবে আমরা এটার রিপ্লেসমেন্ট করতে চাই।... সেকেন্ড রিপাবলিক আইনগত বিষয়। এখন এই বিষয়গুলোর দিকে আমরা যাচ্ছি না।
এ সময় হাসনাতের পাশে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র ঘোষণা করব। সেটা সংবিধানে যুক্ত করে সেকেন্ড রিপাবলিক করার দায়িত্ব সরকারের।এক প্রশ্নের জবাবে সারজিস আলম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির কোনোটিই রাজনৈতিক দল হবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই বিপ্লবের ঐক্যের প্রতীক, ইউনিক একটা প্ল্যাটফর্ম এটা আমাদের ইউনিটির সিম্বল হিসেবে থাকবে,কখনো রাজনৈতিক দল হবে না। নতুন রাজনৈতিক দল অবশ্যই অন্য কোনো নামে হবে বলেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :