ডেইলিখবর ডেস্ক: দেশের রাজনৈতিক-প্রশাসনিকসহ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের তপশিল আজ-কালের মধ্যেই ঘোষণা হতে পারে। প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে এনেছে নির্বাচন কমিশন। তপশিল ঘোষণার এই সময়সীমার মধ্যেই অন্তর্র্বতী সরকারে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে থাকা দুই উপদেষ্টার বহুল আলোচিত পদত্যাগ ইস্যুতেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার আলোচনা রয়েছে আগে থেকেই। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আজ অথবা আগামীকাল উপদেষ্টার পদ ছাড়বেন এমনটি প্রায় নিশ্চিত বলে তার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে অন্তর্র্বতী সরকারে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে থাকা আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ এখনো অনিশ্চিত। তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এই উপদেষ্টা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। পদত্যাগের বদলে উপদেষ্টা পরিষদে থাকার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখছেন তিনি। সব মিলিয়ে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনকালীন বা নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে এই দুই ছাত্র উপদেষ্টার পরবর্তী গন্তব্য কোথায় হচ্ছে তা নিয়ে দেশের রাজনীতির ময়দানে কৌতূহলের পারদ আরও চড়েছে।
অন্তর্র্বতী সরকার ঘোষিত আসন্ন ফেব্রæয়ারির ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ দলটিতেই যোগ দিতে পারেন দুই ছাত্র উপদেষ্টা এমন আলোচনা এরই মধ্যে বেশ জোরালো হয়েছে। এনসিপির অভ্যন্তরীণ পর্যায়েও এ নিয়ে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।এনসিপির সঙ্গে তাদের কিছু টানাপোড়েনও রয়েছে। শেষ পর্যন্ত সমঝোতা না হলে এই দুই উপদেষ্টা অন্য কোনো রাজনৈতিক গন্তব্যের দিকেও নজর দিতে পারেন।
এনসিপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে,সম্প্রতি তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বাসায় আসিফ মাহমুদসহ এনসিপির শীর্ষ নেতারা একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে তাদের মধ্যে টানাপোড়েন, আগামী নির্বাচন, পদত্যাগ, দলে যুক্ত হলে পদ-পদবি কী হবে, তাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। সূত্রটি জানায়, আসিফ ও মাহফুজ দুজনই দলের শীর্ষস্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ চান। এনসিপির পক্ষ থেকেও সেই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য সম্মানজনক কোনো পদ সৃষ্টি করা হতে পারে এমন তথ্যও পাওয়া গেছে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, আসিফ মাহমুদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগ মুহূর্তে পদত্যাগ করবেন এবং ঢাকা-১০ আসন থেকেই নির্বাচন করবেন বলে ঠিক করেছেন। আজ বুধবার বা আগামীকাল বৃহস্পতিবার তার পদত্যাগ করার সম্ভাবনাই বেশি। তবে তিনি কোনো দলে যোগ দেওয়ার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত করেননি। এনসিপির সঙ্গে আলোচনা আছে আবার কিছু বিষয়ে দূরত্বও আছে। এনসিপি না অন্য কোনো দলে যুক্ত হবেন তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পদত্যাগের পর অন্তত এক মাস সময় নিতে পারেন আসিফ। বিএনপি, গণঅধিকারসহ একাধিক দলের সঙ্গেও বসা হয়েছে আলোচনার টেবিলে।
এরই মধ্যে সমসাময়িক বিষয়ে নিয়ে কথা বলতে আজ বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে বিকেল ৩টায় এ সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এক কর্মসূচিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কী বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন সেটি কর্মসূচিতে উল্লেখ করা না হলেও উপদেষ্টা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলবেন বলে এতে জানানো হয়েছে। তবে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকেই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।
এর আগে গত ৯ নভেম্বর ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনের ভোটার হওয়ার আবেদন করেন অন্তর্র্বতী সরকারের এই উপদেষ্টা। একই সঙ্গে ঢাকা থেকে নির্বাচন করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ঢাকা-১০ নির্বাচনী আসনটি ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান ও হাজারীবাগ থানা নিয়ে গঠিত। গুঞ্জন ছিল বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে কিংবা বিএনপিতে যোগ দিয়ে সরকার থেকে পদত্যাগ করে ঢাকা-১০ আসনে নির্বাচন করবেন আসিফ মাহমুদ। তবে দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থী তালিকায় বিএনপি এই আসনে শেখ রবিউল আলমকে প্রার্থী ঘোষণা করায় সে আলোচনার আগুনে পানি পড়েছে বেশ। আসিফের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। এই উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৩ আসন। তবে তিনি এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন না বলে আগেই জানিয়েছিলেন।
ঢাকা-১০ আসনে ভোটার হওয়ার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যেহেতু ঢাকা থেকে নির্বাচন করব এটা মোটামুটি নিশ্চিত, সেই জায়গা থেকে নিজের ভোটটাও ঢাকায় নিয়ে আসা। কারণ ভোটটা যাতে অপচয় না হয়। আমি যদিও ভোটার হয়েছি আগে, কিন্তু কোনো নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। আমি ভোটার হওয়ার পর দুটি নির্বাচন হয়েছে—২০১৮ ও ২০২৪ সালে। সে সময় কেউই ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচনে যাতে ভোট দিতে পারি, সেটা নিশ্চিত করলাম। নির্বাচন কোথা থেকে করব, এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ঢাকা থেকে করব, ইনশাআল্লাহ।’
কোনো দলে যোগ দেবেন কি না সে প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা স্বতন্ত্র নির্বাচন করার। তারপর দেখা যাক।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগে দীর্ঘদিন গণঅধিকার পরিষদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন আসিফ মাহমুদ। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতিও। গণঅধিকারে যুক্ত হওয়ার বিষয়টিও আছে আলোচনায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘(আসিফ মাহমুদ) আমাদের সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন। যদি তিনি সরকার থেকে পদত্যাগ করে আমাদের সঙ্গে ফের যুক্ত হতে চান, আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাব। তবে সেটা পুরোপুরি তার ওপরই নির্ভর করছে।’এর আগে এক বক্তব্যে আসিফ মাহমুদ জানিয়েছিলেন তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগ দেবেন, এমনটি ধরে নেওয়া উচিত নয়।
আসিফ মাহমুদের এনসিপিতে যোগ দেওয়া কিংবা নির্বাচন করার বিষয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তিনি (আসিফ মাহমুদ) যদি এনসিপিতে আসতে চান আমরা স্বাগত জানাব। তবে তা পুরোপুরি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।’
দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারও জানান একই তথ্য। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা দু-এক দিনের মধ্যেই প্রথম ধাপের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করব।’
অন্যদিকে, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ঘনিষ্ঠ একাধিকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি পদত্যাগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। নির্বাচন করবেন বলেও ঠিক করেননি। বরং উপদেষ্টা পরিষদে থাকা নিয়েই আলোচনা বেশি। তবে আজ বা কালকের মধ্যে সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
এনসিপির নেতৃত্বস্থানীয় একাধিক নেতা বলেন,‘আসিফ ও মাহফুজকে নিয়ে এনসিপিতে আলোচনা আছে। দু-এক দিন আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভাও হয়েছে। দুই ছাত্র উপদেষ্টাসহ এনসিপির শীর্ষ নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিদ্যমান কাঠামোতে তারা যুক্ত হতে চাচ্ছেন না। তাদের জন্য হয়তো সম্মানজনক পদ তৈরি করা হতে পারে। কিংবা আগামী কাউন্সিলের মাধ্যমেও তারা দলে যুক্ত হতে পারেন। নির্বাচন স্বতন্ত্র করতে চাইলেও এনসিপির পক্ষ থেকে সমর্থন থাকবে।’
তিনি আরও বলেন,১০ ডিসেম্বর এনসিপির প্রথম ধাপের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। সেখানে দুই ছাত্র উপদেষ্টার কারও নাম থাকবে না। আলোচনার মাধ্যমে যদি সবকিছু ঠিক হয়, তবে চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকতেও পারে। এখনো কোনো কিছু নিশ্চিত নয়।’
এদিকে একটি সুত্র জানায় পদত্যাগের পর লক্ষীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করার আভাস ছিল তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের। জোটগত কারণে বিএনপি আসনটি ছেড়ে দিলে মাহফুজ আলমই জোটগত কিংবা এনসিপির প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন ছিল। তবে এই আসনে এরই মধ্যেই বিএনপি থেকে শাহাদাত হোসেন সেলিমকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ এলডিপির এই চেয়ারম্যান দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। ফলে মাহফুজ আলমের এই আসন থেকে জোটগতভাবে নির্বাচন করার সম্ভাবনাও অনেকটাই শেষ হয়ে গেছে।দেশের রাজনীতির সামনে কি আছে,কোথায় যাচ্ছে সরকারের থাকা ছাত্র উপদেষ্টাদ্বয়ের পরবর্তী ধাপ। এনিয়ে নানারকম আলোচনা চলমান রয়েছে। আজ বিকালে জরুরি সংবাদ সন্মেলনের মধ্য দিয়ে কিছু একটা খবর পাওয়ার আসায় আছে তাদের সংগঠনগুলোর শুভাকাঙ্খিরা। সুত্র-কালবেলা

ডেইলি খবরের সর্বশেষ নিউজ পেতে Google News অনুসরণ করুন।
আপনার মতামত লিখুন :