আজ ১৯ জানুয়ারি। মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর-উত্তমের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৬ সালের এই দিনে বগুড়ার গাবতলীর বাগবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দিনটি উপলক্ষে বিএনপি নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
পাঁচ ভাইয়ের দ্বিতীয় জিয়াউর রহমানের ডাক নাম কমল। তাঁর বাবা মনসুর রহমান ছিলেন রসায়নবিদ। মা জাহানারা খাতুন রানী। বগুড়া ও কলকাতায় শৈশব-কৈশোর অতিবাহিত করার পর জিয়াউর রহমান বাবার কর্মস্থল করাচিতে চলে যান। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৫ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার হিসেবে কমিশন পান।
অসাধারণ দেশপ্রেমিক, অসম সাহসিকতা, সততা-নিষ্ঠা ও সহজ-সরল ব্যক্তিত্বের প্রতীক জিয়াউর রহমান। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে তিনি যুদ্ধ করেন। দেশের ক্রান্ত্রিকালে তিনি বারবার ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় দিকনির্দেশনাহীন জাতি যখন সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল, তখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের একটি সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। বিশ্ব মানচিত্রে তিনি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিদের ব্যাপকভাবে পরিচিত করিয়েছেন স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যে। জাতির মর্যাদাকেও বিশ্বব্যাপী সমুন্নত করেছেন তাঁর শাসনামলে।
জিয়াউর রহমানের সৈনিক ও রাজনৈতিক জীবনের সততা, নিষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রম প্রতিটি মানুষ শ্রদ্ধাভরে এখনো স্মরণ করে। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি সর্বজনবিদিত।
সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন ও দিকনির্দেশনা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি দেশের স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তত্কালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর তাঁরই সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। ওই বছরের ২৫ আগস্ট জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনী প্রধান নিযুক্ত হন। পরবর্তী সময়ে নানা রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থান ঘটে। দেশের ওই ক্রান্তিকালে আবার ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি। ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। এরপর জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
জিয়াউর রহমান সময়ের প্রয়োজনেই ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর গড়া সেই রাজনৈতিক দলে তাঁর সহধর্মিণী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নানা চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে আজ দেশের বৃহত্ রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃত।
রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র, বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়েছেন। জাতির মধ্যে একটি নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করে তাদের জাগিয়ে তুলতে তিনি সফল হয়েছিলেন। স্বল্পকালীন শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি যে গভীর দেশপ্রেম, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন তা আজও কেউ অতিক্রম করতে পারেনি। এমনকি তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীরাও মৃত্যুর পর তাঁর সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেনি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ কারণেই এ দেশের জনগণের অন্তরে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে শাহাদাতবরণ করেন দেশপ্রেমিক এই রাষ্ট্রনায়ক।
বিএনপি মহাসচিবের বাণী-বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে শহীদ জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, দেশের সব ক্রান্তিকাল উত্তরণে শহীদ জিয়া ছিলেন জাতির দিশারী। ২৬ মার্চ তিনি চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতা-উত্তর দুঃসহ স্বৈরাচারী দুঃশাসনে চরম হতাশায় দেশ যখন নিপতিত, জাতি হিসেবে আমাদের এগিয়ে যাওয়া যখন বাধাগ্রস্ত হয়, ঠিক সেই সংকটের এক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান জনগণের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন।
কর্মসূচি -৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ১১টায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শেরেবাংলানগরের কবরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মী পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। দুপুর ২টায় রমনা ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আজ সকাল সাড়ে ১০টায় জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মাজার জিয়ারত এবং দোয়া ও মোনাজাতের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :