বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১

শক্তিধর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পাঁচ কাব্য

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ১০:২১ পিএম

শক্তিধর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পাঁচ কাব্য

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এ টু জেড-৫০ ওভার ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসর ওয়ানডে বিশ্বকাপ। তবে এর বাইরে এই ফরম্যাটে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির একটা আলাদা আবেদন রয়েছে। কারণ ক্রিকেট বিশ্বের সেরা আট দলের লড়াইয়ে রোমাঞ্চের রসদ একটু বেশি পাওয়া যায়. দলগুলোর মধ্যে শক্তির পার্থক্য খুব বেশি না হওয়ায় টুর্নামেন্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা তো বলেই দিয়েছেন, ওয়ানডে বিশ্বকাপের চেয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি-ই তার কাছে বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হয়।
বাভুমার সেই কথার পেছনে যুক্তি হিসেবে নিচের পাঁচটি ম্যাচের গল্পকে দাঁড় করানো যায়। কারণ ব্যাট-বলের লড়াইয়ে এমন রোমাঞ্চ, এমন রুদ্ধশ্বাস চিত্রনাট্য যে শুধু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি-ই উপহার দিতে পারে।
ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০০২-বীরেন্দ্র শেবাগ ব্যাট হাতে ভারতকে বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন। কিন্তু তার বোলিং জাদুতে কয়টি ম্যাচ জিতেছে ভারত? এর উত্তর পেতে হলে ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে বেশ। তবে একটা উদাহরণ তো দেওয়াই যায়।
২০০২ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ভারত ৫০ ওভার ব্যাট করে ৯ উইকেটে তোলে ২৬১ রান। যুবরাজ সিংয়ের ৬২ আর শেবাগের ৫৯ রানের ইনিংস দুটিতে এই চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পায় ভারত।
তবে রান তাড়া করতে নেমে প্রেিিটয়া ব্যাটার হার্শেল গিবস যখন ১৬ চারে ১১৬ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলেন, তখন ভারতের সে সংগ্রহ মামুলি ঠেকছিল। কিন্তু গিবস আহত অবসরে (রিটায়ার্ড হার্ট) যেতেই আকাশ ভেঙে পড়ে প্রোটিয়া শিবিরে।
১ উইকেটে ১৯২ রান তোলা দলটি মুহূর্তেই হারভাজন সিংয়ের ঘূর্ণিজাদুতে পরিণত হয় ৪ উইকেটে ২১৩-এ। ক্যালিস তবু একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে প্রোটিয়া তরী ভাসিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু শেবাগের যে তখনও বল হাতে নিজের জহর দেখানো বাকি। একে একে ক্যালিস, মার্ক বাউচার এবং ল্যান্স ক্লুজনারকে সাজঘরের পথ চিনিয়ে ভারতকে ১০ রানের রোমাঞ্চকর জয় এনে দেন তিনি।
ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০০৪-শিবনারায়ণ চন্দরপল আউট হতেই ওভালের গ্যালারিতে আনন্দ-উৎসব শুরু হয়ে যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তখন ৮ উইকেটে ১৪৭। জয়ের জন্য আরও ৮১ রান চাই তাদের, অথচ হাতে মোটে ২ উইকেট।
ইংল্যান্ড তখন নিজেদের প্রথম আইসিসি শিরোপা জেতার স্বপ্নে বিভোর। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেন দুই ক্যারিবিয়ান ব্যাটার কোর্টনি ব্রাউন ও ইয়ান ব্র্যাডশ। এই দুই লেজের সারির ব্যাটারের অবিস্মরণীয় জুটিতে ৭ বল হাতে রেখেই জয়ের দেখা পেয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ইংল্যান্ড,২০০৭-চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেদিন রানের ফোয়ারা ছুটেছিল। ওয়াইস শাহর ক্যারিয়ারসেরা ৯৮ আর পল কলিংউডের ৮২ রানের ঝড়ো ইনিংসে ৫০ ওভারে ইংল্যান্ড স্কোরবোর্ডে জমা করে ৮ উইকেটে ৩২৩ রান।
জবাব দিতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ খেলেন ১৪১ রানের এক মহাকাব্যিক ইনিংস। কিন্তু দুই ইংলিশ গতিতারকা জেমস অ্যান্ডারসন এবং স্টুয়ার্ট ব্রডের দাপুটে বোলিংয়ে লক্ষ্যে থেকে দূরেই থামতে হয় তাদের। দুই ইংলিশ পেসার সমান তিনটি করে উইকেট শিকার করে ইংল্যান্ডকে নকআউট পর্বে তোলেন।
নিউজিল্যান্ড বনাম শ্রীলংকা, ২০১৩-ক্রিকেটে ‘লো স্কোরিং থ্রিলার’-এর আবেদন অন্যরকম। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এক দশক আগে দেখা মিলেছিল এমনই এক ‘থিলার’-এর। কার্ডিফের মাঠ ব্যাটারদের প্রিিত খুব একটা সদয় নয়, এটা সবার জানা। তাই আগে ব্যাট করে ১৩৮ রান নিয়েও জয়ের স্বপ্ন দেখছিল শ্রীলংকা। ৪৩ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে লংকানদের অল্প রানে আটকে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন কিউই পেসার মিচেল ম্যাকলেনাঘান। জবাব দিতে নেমে শুরুটা মন্দ হয়নি নিউজিল্যান্ডের। ১ উইকেট খরচায় ৪৮ রানে পৌঁছে যায় তারা। কিন্তু এক রানের ব্যবধানে কেন উইলিয়ামসন, রস টেলর এবং মার্টিন গাপটিলের উইকেট হারিয়ে হঠাৎ চোখে অন্ধকার দেখে বø্যাকক্যাপসরা।তবে শেষদিকে নাথান ম্যাককালামের মহাগুরুত্বপূর্ণ ৩২ রানের ইনিংসে চড়ে ১ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে নোঙর করে নিউজিল্যান্ড।
পাকিস্তান বনাম ভারত, ২০১৭-আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতের সামনে বরাবরই পাকিস্তানের অসহায় চেহারা ফুটে উঠেছে। কিন্তু ২০১৭ সালে ওভালের সেই ফাইনালটা ব্যতিক্রম। বিরাট কোহলির ভারতকে সেদিন মাটিতে নামিয়েছিল পাকিস্তান।
আগে ব্যাট করে ফখর জামানের (১১৪) অনবদ্য এক সেঞ্চুরিতে ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৩৮ রান তোলে পাকিস্তান। রান তাড়া করতে নেমে মোহাম্মদ আমির-হাসান আলীদের আগুন ঝরা বোলিংয়ে ১৫৮ রানেই গুটিয়ে যায় ভারত। ১৮০ রানের বিশাল জয়ে সেদিন প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা উঁচিয়ে ধরে পাকিস্তান।এদিকে টিকিট শেষ আগেই। ভরসা এখন টেলিভিশন।
 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!