সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানে ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধে পাকিস্তান, চীন ও রাশিয়ার আহ্বান

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৫, ০১:০১ পিএম

ইরানে ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধে পাকিস্তান, চীন ও রাশিয়ার আহ্বান

ইসরাইলি আগ্রাসনের অবসানে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তুলেছে পাকিস্তান, চীন ও রাশিয়া। দেশ তিনটি একযোগে জাতিসংঘে একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করেছে, যেখানে অবিলম্বে এবং শর্তহীন যুদ্ধবিরতির দাবি জানানো হয়েছে।ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এই আঞ্চলিক সংঘাত নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।  মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইরানের মূল পারমাণবিক কেন্দ্র ফোর্ডো, নাতানজ ও ইসফাহানে সফল হামলা চালানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের এই যৌথ সামরিক অভিযান ১৯৭৯ সালের পর ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ওপর সবচেয়ে বড় হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, ‘ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণ এক বিপজ্জনক মোড়ের সূচনা।’ তিনি বলেন, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং ‘গম্ভীর ও ধারাবাহিক কূটনৈতিক আলোচনার’ প্রয়োজন রয়েছে।ইরানের অনুরোধে ডাকা এই জরুরি অধিবেশনে দেশটির রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি বলেন, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন,পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিকে (এনপিটি) রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত করা হয়েছে।  ‘শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকার নিশ্চিতে এই চুক্তি থাকলেও এখন এটিকে আগ্রাসনের অজুহাত বানিয়ে বেআইনি কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে।’
অন্যদিকে,জাতিসংঘে ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রশংসা করে বলেন,এই পদক্ষেপই শেষ প্রতিরক্ষা যখন অন্যান্য সব পথ ব্যর্থ হয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, ইরান পারমাণবিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ভান করে গোপনে ক্ষেপণাস্ত্র ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে গেছে।  ‘নিস্ক্রিয়তা আরও মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনত।পারমাণবিক ইরান আমাদের মতো আপনাদের জন্যও মৃত্যুদন্ডের শামিল।’
‘বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত’ বলছে পাকিস্তান-জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার বলেন, ইতিহাস প্রমাণ করে যে একতরফা সামরিক হস্তক্ষেপ সংঘাত আরও জটিল করে তোলে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপের দিকে না যায়, এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সংলাপ ও কূটনীতিই একমাত্র টেকসই পথ।’
ইফতিখার জাতিসংঘে তার বক্তব্যে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আগের বিবৃতির কথা পুনরুল্লেখ করেন, যেখানে মার্কিন হামলার নিন্দা ও ইরানের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি সমর্থন জানানো হয়। তিনি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলাকে ‘বিপজ্জনক নজির’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এটি গোটা অঞ্চল এবং বিশ্বব্যাপী নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
পাকিস্তান জানায়, তারা চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে একযোগে একটি খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছে, যেখানে অবিলম্বে ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতির দাবি তোলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, ‘সব পক্ষ যেন উত্তেজনা এড়ায়, বেসামরিক নাগরিক ও অবকাঠামোর সুরক্ষা নিশ্চিত করা হোক, এবং ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে সকল পক্ষের গ্রহণযোগ্য কূটনৈতিক সমাধান খোঁজা হোক।’চীন ও রাশিয়ার তীব্র নিন্দা-চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং বলেন, ‘বলপ্রয়োগ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনা যায় না।’ তিনি বলেন,ইরানের পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে কূটনৈতিক পথ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি, এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের এখনো সুযোগ রয়েছে।রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন,২০০৩ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল জাতিসংঘে এসে দাবি করেছিলেন, ইরাকের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে—এখন আবার সেই ‘মিথ্যাচার’ পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।  তিনি বলেন,‘আমরা আবারও যুক্তরাষ্ট্রের রূপকথায় বিশ্বাস করতে বলা হচ্ছে,যা কেবল মধ্যপ্রাচ্যের কোটি মানুষের কষ্ট বাড়াবে। ইতিহাস থেকে কিছুই শেখেনি তারা।’

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!