মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের ইঙ্গিত দিল যেসব দেশ

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৪, ০৯:২২ পিএম

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের ইঙ্গিত দিল যেসব দেশ

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। আদালত জানিয়েছে যে, নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট ইচ্ছাকৃতভাবে এবং জেনেশুনে গাজার বেসামরিক জনগণকে তাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য বস্তু থেকে বঞ্চিত করেছেন, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। আইসিসির মতে, তাদের এই কর্মকান্ডের ফলে গাজার জনগণের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া,হামাসের সেনাপ্রধান মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। যদিও, গত আগস্টে ইসরায়েল দাবি করেছিল যে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে এক বিমান হামলায় মোহাম্মদ দেইফ নিহত হয়েছেন।
আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খান,ছয় মাস আগে গ্রেপ্তারের পরোয়ানার জন্য আবেদন করেছিলেন। তিনি গত আগস্টে আদালতকে জানান, যে কোনো অযৌক্তিক বিলম্ব শিকারীদের অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।
ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া-আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঘোষণার পর ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তীব্র সমালোচনা করেছেন।প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এই রায়টি "ইহুদিবিদ্বেষী" এবং এর কোনো গুরুত্ব নেই। তিনি দাবি করেন, আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তা ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের মন্ত্রী মিরি রেগেভ এই রায়কে "ন্যায়বিচারের ছদ্মবেশে আধুনিক ইহুদিবিদ্বেষ" বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি আরো বলেন, ইসরায়েল এ ধরনের রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
তবে, আইসিসির এই সিদ্ধান্তকে অনেক দেশ এবং আন্তর্জাতিক নেতা স্বাগত জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, যদি নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট তাদের দেশে প্রবেশ করেন, তবে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
বিশ্বের প্রতিক্রিয়া:
নেদারল্যান্ডস-আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত মূলত নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরই এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, নেতানিয়াহু তাদের দেশের মাটিতে পা রাখলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) পার্লামেন্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্প বলেন, নেতানিয়াহু ছাড়াও ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ও হামাস নেতা মোহাম্মদ দেইফের সঙ্গেও নেদারল্যান্ডস কোনো অপ্রয়োজনীয় যোগাযোগ করবে না। নেদারল্যান্ডস রোম সংবিধির সঙ্গেই থাকবে।
অস্ট্রিয়া : দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গ গ্রেপ্তারি পরোয়ানাটিকে ‍‍`হাস্যকর‍‍` বলে অভিহিত করলেও তার অফিস বলেছে, রোম সংবিধির একটি পক্ষ হিসাবে অস্ট্রিয়া আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য।
বেলজিয়াম : দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-এ লিখেছে, যেখানেই অপরাধ সংঘটিত হোক না কেন দায়মুক্তির বিরুদ্ধে লড়াই বেলজিয়ামের জন্য একটি অগ্রাধিকার,যা আইসিসির কাজকে পুরোপুরি সমর্থন করে।
এতে বলা হয়,ইসরায়েল ও গাজায় সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ীদের অবশ্যই সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিচার করতে হবে,তা সে যেই ঘটুক না কেন।
কানাডা : কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, তিনি এই রায়কে সম্মান জানাবেন। টেলিভিশনের একটি সাক্ষাৎকারে ট্রুডোকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। ট্রুডো জানিয়েছেন,আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে তিনি সম্মান জানাবেন। কারণ কানাডা আন্তর্জাতিক আইন মানতে দায়বদ্ধ।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন : ইইউ‍‍`র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল জানিয়েছেন, আইসিসির পরোয়ানা রাজনৈতিক নয়। এটিকে অবশ্যই সম্মান করা ও বাস্তবায়ন করা উচিত।
তিনি বলেন,এই সিদ্ধান্ত একটি বাধ্যতামূলক সিদ্ধান্ত এবং আদালতের সব রাষ্ট্রপক্ষ, যার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব সদস্য রয়েছে, আদালতের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে বাধ্য।
ফ্রান্স : ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিস্টোফ লেমোইন বলেন,ফ্রান্স আইসিসির আইন অনুযায়ী কাজ করবে। তবে নেতানিয়াহু দেশে এলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে কি না সে বিষয়ে কিছু না জানিয়ে তিনি বলেন, এটি ‍‍`জটিল আইনগত বিষয়‍‍`।
আয়ারল্যান্ড-প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেছেন,এই পরোয়ানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আয়ারল্যান্ড আইসিসির ভূমিকাকে সম্মান করে।
ইতালি-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেছেন, রোম মিত্রদের সঙ্গে বিবেচনা করবে কীভাবে এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা করা যায় এবং একসঙ্গে কাজ করা যায়। তারা আইসিসির পরোয়ানাকে সম্মান করেন বলে জানান।
জর্ডান-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেছেন,আইসিসির সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে হবে এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।
নরওয়ে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ এইডে বলেন, আইসিসির ম্যান্ডেট ন্যায়সঙ্গতভাবে পালন করা গুরুত্বপূর্ণ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আদালত সর্বোচ্চ ন্যায্যবিচারের মানদন্ডের ভিত্তিতে মামলাটি এগিয়ে নেবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা-এক বিবৃতিতে সরকার আইসিসির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং বলেছে, এটি ফিলিস্তিনে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি তার প্রতিশ্রæতি পুনর্ব্যক্ত করে এবং সমস্ত রাষ্ট্রপক্ষকে রোম সংবিধিতে তাদের বাধ্যবাধকতা অনুসারে কাজ করার আহ্বান জানায়। আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়কে আইনের শাসন সমুন্নত রাখার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
সুইডেন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়া মালমার স্টেনারগার্ড বলেন, সুইডেন ও ইইউ আদালতের গুরুত্বপূর্ণ কাজে সমর্থন করে এবং এর স্বাধীনতা ও অখন্ডতা রক্ষা করে। সুইডিশ আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
সুইজারল্যান্ড-সুইস ফেডারেল অফিস অফ জাস্টিস জানিয়েছে, রোম সংবিধির অধীনে আইসিসিকে সহযোগিতা করতে তারা বাধ্য। তাই নেতানিয়াহু, গ্যালান্ট বা মাসরি যদি সুইজারল্যান্ডে প্রবেশ করে এবং আদালতে প্রত্যর্পণের উদ্যোগ নেয় তবে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
তুর্কি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‍‍`গণহত্যা‍‍` পরিচালনাকারী ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে বিচারের আওতায় আনতে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা একটি আশাব্যঞ্জক ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ফিদান বলেন,গণহত্যার শাস্তি দিতে আন্তর্জাতিক আইন যাতে বাস্তবায়ন করা হয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাব।
যুক্তরাজ্য: ব্রিটেন আইসিসির স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের এক মুখপাত্র। তবে নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যুক্তরাজ্য গ্রহণ করছে কি না, তা স্পষ্ট করেননি।
জাতিসংঘ:নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে জানতে চাইলে মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন,আইসিসির কাজ ও স্বাধীনতাকে সম্মান করেন আন্তোনিও গুতেরেস।

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!