ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে নানা হুমকি দিয়ে আসছেন। সাম্প্রতিক সময়ে কথার যুদ্ধে জড়িয়েছে তেহরান ও ওয়াশিংটন। ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, যদি তেহরান পারমাণবিক কর্মসূচিতে সীমা না আনে, তাহলে ‘এমন বোমাবর্ষণ হবে, যা তারা আগে কখনও দেখেনি।’
পশ্চিমা দেশগুলো সন্দেহ করছে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে, যদিও ইরান তা অস্বীকার করে। মধ্যপ্রাচ্য এমনিতেই অস্থির। গাজা যুদ্ধ থামেনি। ইয়েমেনে চলছে সংঘাত। লেবাননেও পুরোপুরি স্বস্তি ফেরেনি। এরমধ্যে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তিক্ততায় আরও বড় পরিসরে সংঘাত বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
শনিবার (১২ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এসব খবর তুলে ধরেছে আরব নিউজ।মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি সম্পর্কে জানা তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো:
মধ্যপ্রাচ্যে কোথায় কোথায় মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে? যুক্তরাষ্ট্র বহু বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে ঘাঁটি পরিচালনা করে আসছে। কাতারের আল উদেইদ বিমানঘাঁটি, যা ১৯৯৬ সালে নির্মিত হয়, বর্তমানে কর্মী সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় ঘাঁটি।যুক্তরাষ্ট্রের সেনা বাহরাইন, কুয়েত, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতেও অবস্থান করছে। বর্তমানে অঞ্চলজুড়ে প্রায় ৩০,০০০ মার্কিন সেনা রয়েছে, যা পূর্বের তুলনায় অনেক কম। ২০১১ সালে আফগানিস্তানে এক সময় এক লাখের বেশি সেনা এবং ২০০৭ সালে ইরাকে এক লাখ ৬০ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন ছিল।যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় প্রায় ২,০০০ সেনা মোতায়েন করেছে, যারা মূলত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ছোট ছোট ঘাঁটিতে অবস্থান করছে। ইরাকে প্রায় ২,৫০০ মার্কিন সেনা রয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকে বাগদাদের ইউনিয়ন থ্রি ঘাঁটিতে অবস্থান করছে।
ট্রাম্প কী ধরনের অতিরিক্ত বাহিনী পাঠিয়েছেন? পেন্টাগন জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অতিরিক্ত বাহিনী মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হয়েছে।
মার্চ মাসে ছয়টি বি-২ বোমারু বিমান মার্কিন-যুক্তরাজ্য ঘাঁটি ডিয়েগো গার্সিয়ায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যে দ্রæত হস্তক্ষেপ করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ বলেছেন,ইরান এই পদক্ষেপকে কীভাবে দেখবে, তা তাদের উপর নির্ভর করছে। পেন্টাগন আরও বিমান ও আকাশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম,যেমন একটি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যাটালিয়ন, পাঠিয়েছে।মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিমানবাহী রণতরী রয়েছে, প্রতিটিতে হাজার হাজার সেনা ও ডজনখানেক বিমান রয়েছে।
কেন মার্কিন সেনা এই অঞ্চলে মোতায়েন?যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন কারণে মধ্যপ্রাচ্যে সেনা মোতায়েন রেখেছে। ইরাকের মতো কিছু দেশে মার্কিন সেনারা দায়েশ (আইএস) এবং স্থানীয় বাহিনীর সঙ্গে লড়ছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান-সমর্থিত যোদ্ধারা মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং মার্কিন বাহিনী পাল্টা জবাব দিয়েছে।
জর্ডানে কয়েকশ মার্কিন প্রশিক্ষক রয়েছে এবং সারা বছর ব্যাপক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোতে মার্কিন সেনা নিরাপত্তা নিশ্চয়তা,প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনে আঞ্চলিক সামরিক অভিযানে সহায়তা করার জন্য মোতায়েন রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথি বাহিনীর ওপর বোমা হামলা চালাচ্ছে।এই ঘাঁটিগুলো হামলার শিকার হয় কি? যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো অত্যন্ত সুরক্ষিত, এবং সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলা প্রতিরোধের জন্য আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। কাতার, বাহরাইন, সৌদি আরব ও কুয়েতের ঘাঁটিগুলো সাধারণত হামলার লক্ষ্য হয় না।তবে ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সেনারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায়ই হামলার শিকার হয়েছে।২০২৩ সাল থেকে ইয়েমেন উপকূলে হুথি গোষ্ঠী শতাধিক হামলা চালিয়েছে,যা তারা গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি হিসেবে উল্লেখ করেছে। এসব হামলার মধ্যে রয়েছে মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। তবে এখন পর্যন্ত কোনো হামলায় মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানা যায়নি।
আপনার মতামত লিখুন :