বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১

'ধল্লা ভাঙব্যার নাগছে তল দিয়া খুড়ি খুড়ি'

প্রকাশিত: ০৫:৫৯ এএম, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০

'ধল্লা ভাঙব্যার নাগছে তল দিয়া খুড়ি খুড়ি'

ধরলার কবলে বিলীন হচ্ছে সদর উপজেলার সারডোব গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা। ছবিতে অজানা ভবিষ্যতের দিকেই যেন তাকিয়ে দেখছেন ভাঙনের শিকার এক গৃহবধূ। 'বাড়ি-ঘর সারে তাল পাই নাই। গাছপালা সউগ গেল। ধল্লা ভাঙব্যার নাগছে তল দিয়া খুড়ি খুড়ি। জীবনে এত ভাঙনি দেখি নাই। নদীডা মনে হয় নিকাশ (দম) নেয় না।' কথাগুলো বলছিলেন ধরলা নদীতে ভাঙনের শিকার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব গ্রামের গৃহবধূ ফাতেমা বেগম। ধরলা নদীর পানি বেড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে গ্রামেটি। গত মঙ্গববার (১৫ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩০ মিটার অংশ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে ১০টি গ্রামে। আমনক্ষেতের ৮০ ভাগ পানির নিচে। তিন দিন আগে থেকে ধরলা যেন রুদ্র রূপ নিয়েছে। তীব্র ঘূর্ণিস্রোতে পাড় ভাঙছে ক্রমাগত। সরেজমিনে ওই এলাকায় কথা হয় ভাঙন কবলিতদের সঙ্গে। দুলাল হোসেন এদের একজন। সদ্য ভিটেহারা। বলেন, 'সরকার রাস্তাটা বান্ধব্যার চায়া বান্ধে না। দেখতে দেখতে বান্ধটাই ভাঙি গেইল। এইভাবে দেখতে দেখতে হামার বাড়িঘর দুয়োর সউগ চলি গেইল। ঘর সারেয়া তাল পাই না। মনে হয় সেকেন্ডে একটা করি চাপা চলি যায়।' নৌকায় মালামাল এনে নদীর পারে রাখছেন দুলাল। প্রতিট্রিপ নৌকা ভাড়া ৫০০ টাকা। পরিবারের সদস্যরা টিনের চাল ও মালামাল পাশের একটি খালি জায়গায় জড়ো করছেন। জায়গা-জমি নেই। এরপর কোথায় ডেরা বাঁধবেন জানেন না। একই অবস্থা আলম মিয়া, মজিবর, কেচু মামুদ, মনভোলা, ছবিন মিয়াসহ ২৫টি পরিবারের। একযোগে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। ধার করা জায়গা, বাঁধ ও রাস্তার ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। বৃষ্টির দিনে পড়েছেন চরম দুভোগে। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় নৌকা থেকে টিনের চালা নিয়ে যাচ্ছেন কেচু মিয়া। যাচ্ছেন ফুপার দেয়া জায়গায়। বলেন, 'হঠাৎ পানি বাড়ছে। বাড়িঘর চলি যাইতেছে। কিছু ধরচি। কিছু ভাসি গেইছে। গাছ গাছরা সউগ শ্যাষ।' মনেভোলা মিয়া বলেন, 'হঠাৎ বন্যা দেখা দিয়াছে। ভয়াবহ ভাঙন চলছে। সারডোব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট ভাঙা। মানুষ যায় কোটে।' বাঁধের ওপর ছোট একটি দোকান ছিল মজিবরের। লাগোয়া বাড়ি। দুটোই এখন নদীগর্ভে। বলেন, 'হামার যাবার জাগা নাই। এলা কোটে যামো। খামো কী?' হলোখানা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার বাকিনুর ইসলাম জানান, গত ১৩ জুলাই সারডোব গ্রামের বিকল্প বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি ভেঙে যায়। গৃহহীন হয় ৭৭টি পরিবার। এরপর পানি পুনরায় বাড়ায় গত তিন দিন ধরে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে ভাঙন চরম আকার ধারণ করে। মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে বাঁধ ভেঙে হু হু করে পানি ঢুকে পড়ে। প্লাবিত হতে থাকে ছাট কালুয়া, সারডোব, কাগজীপাড়া, হলোখানা, রাঙামাটি, খোচাবাড়ি, ভাঙামোড়সহ ১০টি গ্রাম। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, সারডোব বাঁধটি রক্ষার জন্য জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবে প্রবল নদীর মূল প্রবাহটি এই বাঁধ ঘেঁষে প্রবাহিত হওয়ায় ৩০ মিটার অংশ ভেঙে যায়। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ময়নুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে পানি বাড়ায় যাত্রাপুর, সারডোব, মোঘলবাসাসহ বিভিন্ন এলাকায় নদ-নদীর ভাঙন তীব্র রূপ নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
Link copied!