শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অপরিকল্পিত অ্যাপে কোটি কোটি টাকা গচ্চা

প্রকাশিত: ০৭:২১ এএম, মে ২১, ২০২১

অপরিকল্পিত অ্যাপে কোটি কোটি টাকা গচ্চা

করোনাকালে পরিস্থিতি বিবেচনায় যে যার মতো অ্যাপ বানাচ্ছেন। প্রচার করছেন ঢাকঢোল পিটিয়ে। বলা হচ্ছে- এসবই জনস্বার্থে। কিছুদিন যেতে না যেতেই হারিয়ে যাচ্ছে সে সব অ্যাপ। অ্যাপ তৈরি করতে অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। খরচ করছেন অনেক টাকা। দিনশেষে বেশির ভাগ টাকাই যাচ্ছে জলে। বিশেষ করে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান জনস্বার্থে এক বা একাধিক অ্যাপ তৈরি করতে খরচ করেছেন লাখ থেকে কোটি টাকা। এসব অ্যাপ পরিচালনা করতে আবার বাড়তি লোকবল ও বাড়তি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে তাদের। এসব দিক বিবেচনা করে ও সরকারি অর্থ ব্যয় কমাতে প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা এখন মত দিচ্ছেন জাতীয় কমিটি গঠন করতে। প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শের জন্য এ কমিটি গঠনের কথা বলছেন তারা। প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা মহামারিতে সকল কার্যক্রম শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, সরকারি-বেসরকারি, অফিস-আদালত, এমনকি ব্যক্তিগত দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রেও একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, গত এক বছরেও একহাতে একটি কেন্দ্রীয় বা জাতীয়ভাবে কোনো পরামর্শ ও দিকনির্দেশনামূলক কমিটি গঠন হয়নি। ফলে বাড়ছে প্রযুক্তিগত অসহযোগিতা এবং জটিলতা। করোনার পরীক্ষা ফলাফল কিংবা টিকাদান, সরকারি সুরক্ষা অ্যাপসের জটিলতা সর্বশেষ পুলিশের ইমারজেন্সি পাস প্রাপ্তিতে জটিলতা প্রমাণ করে জাতীয়ভাবে প্রযুক্তিগত পরামর্শক কমিটি কতোটা প্রয়োজন। একেক প্রতিষ্ঠান একেকভাবে নিজেদের চাহিদা ও ইচ্ছা অনুযায়ী প্রযুক্তিগত সার্ভার ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপ এমনকি পেজ তৈরি করছে। এতে অনেক বিষয় অসম্পূর্ণ থাকায় নাগরিক ভোগান্তি কমার বদলে বেড়েই চলেছে। প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টদের অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় কমিটি গঠন করা হলে ভোগান্তি কমতে পারে। কমিটি প্রসঙ্গে প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা জানান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বা একজন সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে ব্যবহারকারীদের প্রতিনিধি, সাংবাদিক প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, প্রযুক্তিবিদ, সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে গঠন করা যেতে পারে। এই জাতীয় কমিটির কাজ হবে বর্তমানে ও ভবিষ্যতে জনস্বার্থে ব্যবহৃত প্রযুক্তিগত সহায়তা পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা। ফলে রাষ্ট্র যেমন নিরাপদ থাকবে জনগণও সঠিক অপর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত ব্যবহার করতে পারবে। সাশ্রয় হবে প্রচুর পরিমাণ অর্থের। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সম্প্রতি করোনা সুরক্ষা ‘ট্যাকার নাদে’ একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়। কয়েকদিনে মাত্র ৪ থেকে ৫শ’ গ্রাহক অ্যাপটি ডাউনলোড করেন। এখন ওই অ্যাপের আর কোনো খবর নেই। এটা উদাহরণ। এরকম অসংখ্য অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে করোনাকালে। বেশির ভাগই টিকছে না বেশিদিন। অথচ অ্যাপ তৈরির আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। এজন্য ব্যয় করা হচ্ছে প্রচুর অর্থ। তিনি বলেন, এ ধরনের দাবি আমাদের এসোসিয়েশন থেকে প্রথম তোলা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া একটি চিঠিতেও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিটিআরসি, মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রীদের কাছেও জাতীয় কমিটির কথা বলেছি। কিন্তু তাদের কাছ থেকে এ নিয়ে কোনো ধরনের সাড়া পাইনি। প্রধানমন্ত্রী ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার নির্দেশনা ছাড়া তারা আসলে এ বিষয়ে কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। কমিটি কীভাবে কাজ করবে প্রশ্নে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান অ্যাপ তৈরি করতে চাইবে তারা আগে অ্যাপের একটি রূপরেখা ও পরিকল্পনা জাতীয় কমিটির কাছে উপস্থাপন করবে। কমিটি চুলচেরা বিশ্লেষণ করে অনুমোদন দেবে। এতে জনস্বার্থের বিষয়টি যেমন নিশ্চিত হবে তেমনি অর্থ অপচয়ও কমবে বলে মনে করি। টেলিকম সেক্টরে ১০/১৫টি স্টেক হোল্ডার রয়েছে। তাদেরকে ওই কমিটিতে রাখা যায়। অর্থাৎ প্রয়োজন অনুযায়ী সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা যেতে পারে। একই প্রসঙ্গে প্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, প্রযুক্তি সহায়তার জন্য যদি ‘জানেন’ ও ‘বোঝেন’ এমন ব্যক্তিদের নিয়ে প্রযুক্তি সহায়ক জাতীয় কমিটি গঠন করা যায় তাহলে খুবই ভালো হবে। তবে কমিটিকে ব্যবসাগত কোনো বিষয় না দেখে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো দেখতে হবে। এ ধরনের কমিটি গঠন ও তারা কার্যকর ভূমিকা পালন করলে দেশের ও প্রযুক্তির উন্নয়ন হবে বলে মনে করি। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত এক দশকে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন জীবনেরই অংশ হয়ে গেছে। আইফোনের অ্যাপ স্টোর আর অ্যান্ড্রয়েডের গুগল প্লে চালু হয় ২০০৮ সালে। এখন এই দুই ভার্চ্যুয়াল দোকানে লাখ লাখ অ্যাপের সমাহার। কোনোটি দিয়ে আমরা যোগাযোগ রক্ষা করছি, কোনোটি দিয়ে খুঁজে বের করছি নতুন মানুষ, আবার কোনো অ্যাপ দিয়ে চলছে গান শোনা কিংবা বিদ্যুৎ বিল দেয়ার মতো কাজ। কেবল কথা বলার জন্য মোবাইলফোন আমরা ব্যবহার করছি বটে। তবে স্মার্টফোনে আজকাল এমন অনেক অ্যাপই আছে, যেগুলো কোন অ্যাপে কতো সময় কাটাচ্ছি, তার হিসাব কে রাখে। মানে অ্যাপের জন্য অ্যাপ। প্রযুক্তিবিষয়ক প্রভাবশালী মার্কিন ওয়েবসাইট সিনেট ‘ডিকেড ইন রিভিউ’ নামে বেশ কিছু লেখা প্রকাশ করছে। সেটিরই অংশ হিসেবে একটি জরিপ চালিয়েছে তারা। সেখানে উঠে এসেছে গত এক দশকের সেরা ২৫ অ্যাপের তালিকা। এই অ্যাপগুলো প্রভাব ফেলেছে মানুষের জীবনযাপনে। আর তা পৃথিবীজুড়েই। অ্যাপসগুলোর মধ্যে রয়েছে-ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ফেসবুক, টিন্ডার, গুগল/অ্যাপল ম্যাপস, স্পটিফাই, স্ল্যাক, উবার/লিফট, ভেনমো, অ্যাংরি বার্ডস, ক্যান্ডি ক্রাশ সাগা, পোকেমন গো, ভাইন, ফ্ল্যাপি বার্ড, ফেসবুক মেসেঞ্জার/ হোয়াটসঅ্যাপ, নেটফ্লিক্স, স্ন্যাপচ্যাট, ইউটিউব, গুগল পে/অ্যাপল পে, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট/সিরি/অ্যালেক্সা,আমাজন,স্কাইপে/ফেসটাইম, ফোর্টনাইট, উবার ইটস/ পোস্টমেটস/গ্রাবহাব/ ডোরড্যাশ, গুগল ফটোজ।
Link copied!