শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ‘ডু অর ডাই’

প্রকাশিত: ১০:২৮ এএম, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১

অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ‘ডু অর ডাই’

এক যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকার ফলে বিশেষ করে তৃণমূলে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন বেড়েছে। কোথাও কোথাও একজন কর্মীর বিরুদ্ধেই দায়ের করা হয়েছে কয়েক ডজন মামলা। এবার আন্দোলন জোরদার না করতে পারলে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। ক্ষমতাসীন দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিপীড়ন বাড়বে। তাই এগুলো থেকে রেহাই পেতে এবার ‘ডু অর ডাই’ আন্দোলনে নামার জোর প্রস্তুতি নিতে বলেছেন বিএনপির হাইকমান্ড। বৃহস্পতিবার বিএনপির দ্বিতীয় দফার বৈঠক শেষ হয়েছে। তিন দিনের ওই বৈঠকে অংশ নেন তৃণমূলের অনেক নেতা। সব মিলিয়ে দুই শতাধিক নেতা বৈঠকে অংশ নেন। যেখানে বক্তব্য রাখেন শখানেক নেতা। অন্তত এক ডজন নেতার সঙ্গে কথা হয়। তারাই বৈঠকের ওই বিষয়গুলো জানিয়েছেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফার বৈঠকে অনেকে সুযোগ পেয়ে দীর্ঘক্ষণ বক্তব্য দিয়েছেন। অপ্রাসঙ্গিক ও ইস্যুর বাইরে গিয়ে অগোছালো বক্তব্য রাখেন। কিন্তু এবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য রাখার জন্য সবাইকে চার মিনিট সময় বেঁধে দেন। সেসঙ্গে তিনটি বিষয় ঠিক করে দেন। এর বাইরে কাউকে বক্তব্য না রাখার অনুরোধ জানান। বৈঠকে দিনের সূচনা বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব। আর লন্ডন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে সমাপনী বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নেতাদের কাছ থেকে আন্দোলনের পরামর্শ শুনে তাদের উদ্দেশে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আন্দোলন তো আপনাদের করতে হবে। অন্য কেউ তো আর করে দেবে না। আর মনে রাখবেন, এবারের লড়াই-সংগ্রামে ফাঁকি দিলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে আপনাদের। কারণ আপনারা এলাকায় থাকেন। মামলা-হামলা আরও বাড়বে। দল যেমন দুর্বল হবে, তেমনি বাড়বে নিজেদের অস্তিত্ব সংকট। তাই সময় থাকতে নিষ্ক্রিয়রা সরে যান। দায়িত্ব ছেড়ে দিন। নইলে খুঁজে খুঁজে বের করে অবসরে পাঠানো হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে মুখ না খুলতে দলীয় মহাসচিব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। চার মিনিটে নেতারা যতটুকু পেরেছেন, বলেছেন। একজন সব কথা বলতে না পেরে মঞ্চে বসা দলের নীতিনির্ধারকদের হাতে একটি লিখিত বক্তব্য তুলে দেন। তবে সবার বক্তব্যে ছিল সরকারের কাছে আর কোনো দাবি না জানিয়ে সরাসরি আন্দোলনে যাওয়া। কোনো সংলাপে সময় ক্ষেপণ না করতে। উত্তরের একটি জেলার সভাপতি বলেন, আন্দোলনে যাওয়ার আগে দলের মধ্যে নিষ্ক্রিয়দের চিহ্নিত করতে হবে। আন্দোলনের সময় ঘরে বসে ফেসবুক আর টিভিতে চোখ রাখা নেতাদের সরাতে হবে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরের আন্দোলন সফল করতে হবে। এ জন্য অর্থশক্তি বাড়াতে হবে। ঢাকাকে অচল করতে না পারলে তৃণমূলে জোর দিয়ে লাভ হবে না। ঢাকা ঘিরেই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। প্রয়োজন হলে তৃণমূলের কিছু নেতাকে ঢাকায় নিয়ে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, আন্দোলন ও জোট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তবু কেউ কেউ বিক্ষিপ্তভাবে কথা বলেছেন। জোট নিয়ে সবাই একমত। যারা বিএনপির নেতৃত্বকে মানবে, তারাই জোটে থাকবে। এ ছাড়া কোনো ফ্রন্ট না করার পরামর্শ ছিল। প্রথম দিনের বৈঠকে নেতাদের উপস্থিতি খুবই কম থাকায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে অনেকে অসুস্থ ও শারীরিক সমস্যার কথা জানান। এবার নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীনে না যেতে পরামর্শ দেন নেতারা। সরকারের সঙ্গে আলোচনা কিংবা নতুন ফ্রন্ট গঠনে মনোযোগ না দিয়ে দল পুনর্গঠনে সময় দেওয়ার কথা বলেন। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা সভাপতিরা নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনের পক্ষেই মত দিয়েছেন। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম বলেন, রাজপথের আন্দোলনে নামার আগে দলসহ সবকিছু গুছিয়ে নিতে হবে। বিক্ষিপ্ত আন্দোলন করলে সফলতা পাওয়া যাবে না। আন্দোলন যুগপৎ হতে পারে, তবে নেতৃত্ব বিএনপির হাতে থাকতে হবে। ঢাকার আন্দোলনকে কীভাবে কার্যকর করা যায়- এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে থাকা বরিশালের এক নেতা জানান, বৈঠকে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে পরোক্ষভাবে অভিযোগ করেছেন। অনেক সময় তৃণমূলে চাপ সৃষ্টি করেন। এসব রেষারেষির দ্বন্দ্বে আন্দোলনে বাতি জ্বলে না। বলয়ের কয়েকজন কর্মী নিয়ে ৫ মিনিটের জন্য সড়কে থেকে নেমে যান। পরে এসব অনলাইনে ছেড়ে দেন। এগুলো বন্ধ করতে হবে। মানুষ এসবে হাসাহাসি করে।
Link copied!