মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

আরও ৮ লাশের শরীরে ‘ডোম’ মুন্নার ডিএনএ

প্রকাশিত: ০৬:০৩ এএম, জানুয়ারি ১৭, ২০২১

আরও ৮ লাশের শরীরে ‘ডোম’ মুন্নার ডিএনএ

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের লাশকাটা ঘরে আরও আট তরুণীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। সব তরুণীর দেহে ওই হাসপাতালের ‘ডোম’ মুন্না ভক্তের ডিএনএ আলামত পাওয়া গেছে। কাফরুল এবং মোহাম্মদপুরে মৃত পাঁচ মৃত তরুণীকে ধর্ষণের দায়ে মুন্না এখন কারাবন্দি আছে। এরই মধ্যে ওই পাঁচটি ঘটনা তদন্ত শেষ পর্যায়ে। নতুন আটটি ঘটনার মধ্যে দুটিতে ডিএনএ রিপোর্ট পস্তুত করা হয়েছে। এই দুটি ঘটনা হলো শেরেবাংলানগর এবং আদাবর থানাধীন। অন্য ছয়টি ঘটনায় ডিএনএ আলামত ম্যাচিং করলেও এখনও রিপোর্ট তৈরি হয়নি। শিগগিরই রিপোর্ট প্রস্তুত করা হবে। এর পরই চার্জশিট দেওয়া হবে। চার্জশিটে মুন্নার সঙ্গে সহযোগী আসামি করা হচ্ছে তার মামা ও হাসপাতালের ডোম যতন কুমার লালকে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার সামসুন নাহার জানান, চার্জশিটে যতনকে সহযোগী আসামি করা হলেও তার বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতার সরাসরি অভিযোগ আনা হচ্ছে না। মূলত দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাকে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ওই হাসপাতালের অফিসিয়াল ডোম ও মর্গের ইনচার্জ হলেন যতন কুমার লাল। মুন্না হলো তার ভাগ্নে। মুন্না ওই হাসপাতালের কোনো কর্মচারীও না। ডোম যতনের ভাগ্নে হওয়ার সুবাদে মুন্না চার বছর ধরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গের লাশকাটা ঘরে কাজ করত। যতনই তাকে এই সুযোগ করে দেন। সেই সুবাদে মুন্না মর্গেই থাকত। লাশকাটা ঘরেই ঘুমাত। যেসব মৃত তরুণীকে সে ধর্ষণ করেছে তাদের বয়স অনূর্ধ্ব ২০। ভালো লাশের দিকেই তার নজর ছিল। আত্মহত্যাজনিত কারণে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদেরকেই সে ধর্ষণ করেছে। সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্যান্য কারণে মৃত্যুর পর যেসব লাশ বিকৃত হয়ে যায় তাদের দিকে মুন্নার নজর ছিল না। সিআইডি সূত্র জানায়, লাশকাটা ঘরের চাবি যতনের কাছেই থাকার কথা। সেটা মুন্নার হাতে যাওয়ার কথা না। অথচ মর্গে আসা মরদেহগুলো মুন্না গ্রহণ করত। ময়নাতদন্তের সময় ডাক্তারদের সাহায্য করত। ময়নাতদন্ত শেষে লাশগুলো স্বজনদের বুঝিয়ে দিত। যতন যদি মুন্নাকে লাশকাটা ঘরে থাকার সুযোগ না দিতেন তাহলে হয়তো মুন্না এ ধরনের জঘন্য কাজ করার সুযোগ পেত না। এ কারণেই চার্জশিটে যতনকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম ধরা পড়েছে। গত নভেম্বর মাসে আমরা জানতে পারি গত বছরের ২৯ মার্চ থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচজন মৃত তরুণীকে হাসপাতালের মর্গে ধর্ষণ করা হয়। অপমৃত্যুর ঘটনায় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থেকে হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব সিআইডির ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো হয়। উদ্দেশ্য ছিল মৃত্যুর আগে ওইসব তরুণী ধর্ষিত হয়েছেন কি না তা জানা। এ আলামতের পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল একই ব্যক্তির বলে প্রমাণিত হয়। পরে এ ঘটনায় মুন্নাকে শনাক্ত করা হয়। ওই পাঁচটি ঘটনার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আরও বেশ কয়েকটি ঘটনায় মুন্নার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। যে কারণে চার্জশিট দিতে একটু সময় লাগছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসআই নিউটন কুমার দত্ত বলেন, তরুণী-কিশোরীদের মৃত দেহে পুরুষের শুক্রানুর সন্ধান পাওয়ায় আমরা প্রথমে মনে করি এটা কোনো সিরিয়াল কিলারের কাজ হতে পারে। ধর্ষণের পর ওই তরুণীদের হত্যা করা হতে পারে। অথবা ধর্ষণের অপবাদ সইতে না পেয়ে তারা আত্মহত্যা করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে থানা পুলিশ সন্দেহজনকভাবে কাউকে কাউকে গ্রেফতার করে রিমান্ডেও নিয়েছে। মুন্না শনাক্ত হওয়ার কারণে অনেকেই হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। এসআই বলেন, আদাবর থানায় এক তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনায় তার প্রেমিককে সন্দেহ করা হচ্ছিল। ওই প্রেমিকসহ দুই জনকে গ্রেফতার করে জেলেও পাঠানো হয়। সম্প্রতি পাওয়া ডিএনএ প্রতিবেদনে ওই তরুণীর শরীরে মুন্নার শুক্রাণু পাওয়া যায়। শেরেবাংলানগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, বিষ খেয়ে ১৭ বছর বয়সি এক কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনায় ডিএনএ পরীক্ষায় সম্প্রতি মুন্নার ডিএনএ নমুনার মিল পাওয়া গেছে। আত্মহত্যার ঘটনার বিষয়ে শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। আর মুন্নার ডিএনএ আলামত পাওয়ার বিষয়টি সিআইডিকে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
Link copied!