শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের দাবি বিরোধী দলগুলোর, সরকারের না

প্রকাশিত: ১১:০৫ এএম, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১

ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের দাবি বিরোধী দলগুলোর, সরকারের না

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে বিতর্ক এড়াতে এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সংবিধানের আলোকে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপি। বিরোধীদলীয় নেতারা বলেছেন- অবাধ, নিরপেক্ষ এবং উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটি গ্রহণযোগ্য আইন প্রণয়ন জরুরি। তবে আইন প্রণয়ন না করে এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন বলে জানিয়েছেন দুজন মন্ত্রী। সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’ বিভিন্ন সরকারের আমলে গঠিত নির্বাচন কমিশন নিয়ে বরাবর বিতর্ক থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো সরকারই নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন করেনি। জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও নির্বাচন কমিশন গঠনে দেশে একটি আইন নেই, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সংবিধানে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি আইন প্রণয়ন করতে হবে। আমরা চাই, সংবিধানের আলোকে আইনের মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক, যে কমিশন দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে। এতে নির্বাচন কমিশন গঠনে স্থায়ী সমাধান হবে। জাপা চেয়ারম্যান বলেন, প্রতি পাঁচ বছর পর রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেন। এতে নানাবিধ সমালোচনার সৃষ্টি হয়। আবার দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কমিশনার নিয়োগ হলে মানুষের ভোটাধিকার লঙ্ঘিত হয়। তাই সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল ও এ বিষয়ে সুশীল সমাজের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে গ্রহণযোগ্য একটি আইন প্রণয়ন করা উচিত। বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, আইনের মাধ্যমে সৎ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে, যে কমিশন নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং উৎসবমুখর করতে পারবে। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন দেশের মানুষকে নির্বাচনের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে সক্ষম হবে। প্রতিনিধি নির্বাচনে দেশবাসী নিজেদের ভূমিকা আরও জোরালো করতে পারবে। তখন গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বাদ পেতে শুরু করবে জনগণ। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ফেব্রুয়ারি মাসে। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তাই সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের জন্য যে নির্দেশনা আছে, সেই নির্দেশনাকে মেনে একটা পরিপূর্ণ আইন করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি সংসদে কথা বলেছেন জানিয়ে চুন্নু বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছি আইনমন্ত্রী যদি এ সংক্রান্ত বিল না আনতে চান, তাহলে আমাকে নির্দেশ দেন। আমি এ বিষয়ে একটা বেসরকারি বিল প্রস্তুত করি।’ বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে পরিষ্কার বলা আছেÑ ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক ৪ জন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। উক্ত বিষয়ে প্রণীত আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনকে এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করবেন।’ তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আইন থাকতেই হবে এবং সেই আইনের ভিত্তিতেই কেবল নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব। নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে আর কোনো অপশন রাখা হয়নি। তবে সরকারি বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নের কোনো উদ্যোগ আপাতত সরকারের নেই। তাই এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিসেম্বরে সার্চ কমিটি গঠন হতে পারে। এবারও ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি হবে, যার প্রধান থাকবেন একজন বিচারপতি। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, নতুন আইন প্রণয়নের কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। তাই এবারও সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। কারণ সার্চ কমিটি গঠনের একটা সিস্টেম রয়েছে। এটা রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমেই করা হয়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, এবারও সার্চ কমিটি গঠনসহ সব রকম গ্রহণযোগ্য পন্থায় নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
Link copied!