শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইস্টার্ন ব্যাংককে জরিমানা,সরকারী নির্দেশ পালনে অনিহা

প্রকাশিত: ১০:৪৬ এএম, জুলাই ২৮, ২০২১

ইস্টার্ন ব্যাংককে জরিমানা,সরকারী নির্দেশ পালনে অনিহা

ডেইলি খবর ডেস্ক: ইস্টার্ন ব্যাংককে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা অমান্য করেছে অভিজাত দাবিদার ইস্টার্ন ব্যাংক। দুই দফা তাগাদা দিয়েও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রণোদনার ঋণ বিতরণ করেনি পারেনি বেসরকারি খাতের অভিজাত দাবিদার এই ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড। বাংলাদেশ ব্যাংকের তাগাদায় অবহেলা ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রণোদনা ঋণ বিতরণ করতে না পারায় ব্যাংকটিকে আর্থিকভাবে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জরিমানার টাকা জমা দেয়া ও প্রণোদনার ঋণ বিতরণ সম্পন্ন করতে ব্যাংকটিকে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। শাস্তির বিষয়টি মুরব্বী ব্যাংকের একাধিক সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে-করোনা মহামারিতে অর্থনীতিকে সচল রাখতে সব খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা ঋণ ঘোষণা করে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে চাহিদার আলোকে কয়েকটি খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে দেয়া হয়। সর্বশেষ এ বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকায়। এর সিংহভাগই বাস্তবায়ন করা হয় ব্যাংকের মাধ্যমে, যা তদারকি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রান্তিক থেকে শুরু করে বড় আকারের শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণের খাত ও বরাদ্দ নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ঋণ বিতরণে বিভিন্ন হারে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় ব্যাংকগুলোকে। বেসরকারি খাতের ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডকে (ইবিএল) এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ৩৯৫ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। কিন্তু এ ঋণের মধ্যে ইবিএল ক্ষুদ্র ও কুটির খাতে বরাদ্দ দেয়া ঋণের আনুপাতিক হার অনুযায়ী উদ্যোক্তাদের বিতরণ করেনি। এ নিয়ে কয়েক দফায় ইবিএল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেয়া হয় ব্যাংকটিকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠির উত্তর এবং ব্যাখ্যাও দেয় ব্যাংকটি। কিন্তু কারণ দর্শানোর নোটিসে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যান্য ব্যাংক যেখানে নির্দিষ্ট সময়ে লক্ষ্যমাত্রার কাছেই চলে যায়, সেখানে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল অভিজাত দাবিদার ইবিএল। অর্থ থাকার পরও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ থাকা ২০০ কোটি টাকার ঋণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিতরণ করেনি। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ধীরগতিকে গড়িমসি হিসেবে দেখে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া নোটিসের জবাবে ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যাকে ঠুনকো হিসেবেই বিবেচনায় নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি সুশাসন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার প্রতিও অবজ্ঞা হিসেবে মনে করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এজন্য ব্যাংকটির বিরুদ্ধে শাস্তি দেয়ার সুপারিশ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সুপারিশ পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তারা ইবিএলকে আর্থিকভাবে দুই লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেন। শাস্তির বিষয়টি ইবিএলকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন ব্যাংকটিকে শাস্তি দিল ব্যাংলাদেশ ব্যাংকÑএ বিষয়ে মন্তব্য নিতে গত দুই দিন একাধিকবার যোগাযোগ করা হয় ইবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখারের সঙ্গে। তিনি বর্তমানে ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স,বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যানও। আলী রেজা ইফতেখারের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যমে বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। উল্লেখ্য-দেশে করোনা মহামারিতে এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা প্রথম ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। স্বল্প পুঁজি ও ব্যাংকঋণ না থাকায় অনেকেরই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ফেলতে হয়। অথচ অর্থনীতিতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের অবদান অনেক বেশি। এজন্য সরকারও মাত্র চার শতাংশ সুদে জামানত ছাড়া ঋণ মঞ্জুর করে। এ খাতে ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। শুরু থেকেই ব্যাংকগুলোর অনেকেই এ খাতে ঋণ বিতরণে গড়িমসি দেখায়। অনেকেই ঋণ বিতরণ করতে অনাগ্রহী হয়ে ওঠে। ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে যুক্তি তুলে ধরা হয়, এ ঋণে ঝুঁকি বেশি। ঋণের পরিমাণ কম হলেও বেশি আকারের গ্রাহককে সামলাতে হয়। কিন্তু বড়দের বেলায় সেটি হয় না। উপায় না পেয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ক্রেডিট রিস্ক গ্যারান্টি ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ ক্ষুদ্রঋণের অর্থ খেলাপি হলে সরকার সেই হারে ব্যাংকগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেবে। তার পরও ব্যাংকগুলো সেভাবে সাড়া দেয়নি প্রথম দিকে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পর্যবেক্ষণেও উঠে আসে। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয়,প্রণোদনার ঋণ বিতরণে গড়িমসি হলে জরিমানা বা শাস্তির বিধান প্রয়োগ করতে পারবে ব্যাংকগুলোর ওপর। এর আলোকেই ইবিএলকে শাস্তি আওতায় আনল বাংলাদেশ ব্যাংক। উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে ব্যাংকটি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তাদের কাছে রয়েছে ৩০ দশমিক ১৮ শতাংশ,প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ৪৫ দশমিক ২৯ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ। ছয় মাস আগে,অর্থাৎ গত ডিসেম্বর শেষে বিদেশি বিনিয়োাগকারীদের কাছে শেয়ারের ভাগ ছিল তিন দশমিক ১৭ শতাংশ। এই ছয় মাসে তিন দশমিক ৪৪ শতাংশীয় পয়েন্ট শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। অবশিষ্ট ২৩ দশমিক ৯২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।সুত্র-শেয়ারবিজ  
Link copied!