শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এক কেজি পেঁয়াজ বীজে লাভ লাখ টাকা

প্রকাশিত: ০৭:১৬ এএম, মে ২৬, ২০২১

এক কেজি পেঁয়াজ বীজে লাভ লাখ টাকা

খুলনায় প্রথমবারের মতো পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ শুরু হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই পেঁয়াজের বীজ সংরক্ষণে সফল হয়েছেন ডুমুরিয়ার তরুণ কৃষক তড়িৎ বিশ্বাস। শুধু বীজ নয়, তিনি পেঁয়াজ ও পেঁয়াজের কলি উৎপাদন করে বিক্রি করেছেন। কৃষি বিভাগের সহায়তায় মাত্র ৫০ শতক জমিতে তিনি এই পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করেন। একইসঙ্গে সংরক্ষণ করা বীজ স্বল্প মুনাফায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বিক্রি করবেন। স্বল্প খরচে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে লাখ টাকা আয় করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পেঁয়াজ বাংলাদেশের একটি অর্থকরী মসলাজাতীয় ফসল। দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই পেঁয়াজের চাষ হয়। জলবায়ুর পরিবর্তন, বৈরী আবহাওয়া এবং বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ ইত্যাদির কারণে বাংলাদেশে পেঁয়াজের জাতীয় গড় ফলন বিশ্বের গড় ফলন অপেক্ষা কম। বর্তমানে দেশে ১.৭৯ লাখ হেক্টর জমিতে ১৭.৩৮ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হচ্ছে (বিবিএস, ২০১৮)। আমাদের দেশে যে পেঁয়াজ উৎপন্ন হয় তা দিয়ে দেশের মোট চাহিদার মাত্রা ৫৭.১৪ শতাংশ মেটানো সম্ভব। ফলে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে। প্রতি বছর চাহিদা পূরণে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে উন্নত জাত, সঠিক সময়ে ও সঠিক মাত্রায় সার, সেচ ও বালাই দমন ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পেঁয়াজের বীজের ফলন বৃদ্ধিসহ মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। সেই আলোকে খুলনায় পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে ঝোঁক দিয়েছে কৃষি বিভাগ। এবারই প্রথম খুলনায় পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করা হয়েছে। তাতে সফলতাও এসেছে। গত বছর পেঁয়াজের বীজের দাম বেশি ছিল। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে এ বছরও দুই হাজার টাকার পেঁয়াজের বীজ ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। কৃষক যদি নিজেরাই বীজ তৈরি করে তাহলে সিন্ডিকেট ভাঙবে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। ডুমুরিয়ার তরুণ চাষি তড়িৎ বিশ্বাস বলেন, কৃষি অফিস থেকে পেঁয়াজের বাল্ব দিয়েছিল। বর্গা নিয়ে ৫০ শতক জমিতে ১৩ মণ বাল্ব লাগিয়েছিলাম। সেখান থেকে ২৩ মণ পেঁয়াজ এবং ২৫ কেজি বীজ উৎপাদন হয়েছে। এ ছাড়া পেঁয়াজের কালি ৩ হাজার টাকার মতো বিক্রি করেছি। বীজগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কৃষি অফিসের সহায়তায় মৌসুমের সময়ে বীজগুলো বিক্রি করা হবে। কৃষি অফিস থেকে বাল্ব দেওয়া হয়েছিল। আর আমি শ্রম ও পরিচর্যা করেছি। তিন মাস পরিচর্যা করে ফসল ঘরে তুলেছি। তিনি আরও বলেন, আমি এবার প্রথম পেঁয়াজের বীজ চাষ করেছি। খুলনায় প্রথম বীজ চাষ করা হয়েছে। চাষ করে খুব ভালো লেগেছে। আগামী বছর বীজ দিয়ে পেঁয়াজ চাষ করার ইচ্ছা আছে। ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোসাদ্দেক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পেঁয়াজ একটি উচ্চ মূল্যের ফসল। বীজের দাম অনেক বেশি ছিল। এ বছর প্রতি কেজি বীজ ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছিল। এ কারণে দরিদ্র কৃষকদের পক্ষে বীজ কিনে পেঁয়াজ উৎপাদন অসম্ভব ছিল। এ কারণে আমরা কৃষক পর্যায়ে ডাল, তেল, মসলার উন্নতমানের বীজ সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তড়িৎ বিশ্বাসকে প্রশিক্ষণ দেওয়া দিই এবং বীজ ও সার প্রদান করি। প্রথমবারের মতো খুলনায় পেঁয়াজের বীজ সংরক্ষণ করা হয়েছে। ৩০ কেজির মতো বীজ হয়েছিল। কিন্তু শুকানোর কারণে কমে ২৫ কেজির মতো রয়েছে। এটি আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন। তার দেখাদেখি আগামীতে আরও কৃষক উৎসাহিত হবে। পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়বে। তিনি আরও বলেন, উৎপাদিত বীজ থেকে এক কেজি সংরক্ষণ করা হবে এবং বাকী বীজ বিক্রি করবে। এক কেজি বীজ ৫০ থেকে ৫২ শতক জমিতে লাগানো যাবে। নভেম্বর মাসে পেঁয়াজ লাগানো হয় এবং এপ্রিলের শেষ পর্যায়ে উঠানো হয়। ৫০ শতক জমিতে পেঁয়াজ, কলি ও বীজ উৎপাদন এবং সংরক্ষণে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ করে এক লাখ টাকা আয় করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি। খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, খুলনার মাটি পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। অল্প-স্বল্প পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এবারই প্রথম পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। এক বিঘা জমিতে বারি-১ জাতের বাল্ব লাগিয়ে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ফরিদপুর থেকে পেঁয়াজের বীজ এনে চাষাবাদ করা হতো। খুলনায় এবার ২৫ কেজি পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এই বীজ কৃষক তড়িৎ বিশ্বাসের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে স্থানীয় চাষিদের মাঝে।
Link copied!