শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এখনো বাইরে কেন ঘরে যাও

প্রকাশিত: ১০:০১ এএম, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১

এখনো বাইরে কেন ঘরে যাও

কাবুল দখলের পর মেয়েটি যেন আরও সাহসী। সংবাদের জন্য ঘুরছে প্রদেশ থেকে প্রদেশে। তালেবান যোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। বিভিন্ন বিষয়ে ভাববিনিময় করছেন একেক তালেবানের সঙ্গে। সুযোগ বুঝে জানিয়ে দিল তার মনের কথা-‘কাবুল দখলের গল্প নিয়ে সিনেমা বানাতে চাই।’ মেয়েটির কাছে মনে হয়েছিল তাকে বেশ ভালোভাবেই নিয়েছে তালেবান। কিন্তু কয়েকদিনের মাথায় মেয়েটি দেখে ফেলল ‘মুদ্রার উলটোপিঠ’। স্বমূর্তিতে ফিরেছে তালেবান। ই-মেইলে তালেবানরা তাকে বলল-‘এখনো বাইরে কেন, ঘরে থাক মেয়ে’। তালেবানের হিমশীতল হুমকিতে সম্বিত ফিরে পেয়েছেন সংবাদকর্মী সামা (ছদ্মনাম)। তিনি বুঝতে পেরেছেন মা-নানিদের কাছে গল্প শোনা তালেবান তো এরাই। এই সেই নারীবিদ্বেষী জঙ্গিগোষ্ঠী। আলজাজিরা। ১৫ আগস্ট তালেবানদের কাবুল দখল করার পরের দিনগুলোতে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেছিলেন এই নারী সাংবাদিক। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী ছিল তার-হয়তো নব্বই দশকের তালেবান বাঁক বদলেছে। এবার অনেকটাই অন্যরকম হবে তারা। কিন্তু কয়েকদিনের মাথায়ই ফুটে উঠতে শুরু করল তালেবানের সাবেক পৈশাচিক চেহারা। তবু চিত্রগ্রহণ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু একদিন তালেবানরা তার গাড়ির ড্রাইভারসহ কয়েকজনকে মেরে রক্তাক্ত করায় ভয় পেয়ে যান সামা। বুঝতে পারেন আফগানিস্তানে তার কাজের দিন শেষ হয়ে এসেছে। এখান থেকে তাকে পালাতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি যদি আমার কাজ করতে না পারি, তাহলে আমার মূল্য কী?’ এর পরপরই সামার মতো শত শত নারী সাংবাদিক আফগানিস্তান থেকে কাবুল বিমানবন্দর হয়ে পাড়ি জমিয়েছেন বিভিন্ন দেশে। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানে মুক্ত সংবাদমাধ্যমের অঙ্গীকার করে বিবৃতি দিয়েছে বারবার। সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি দেশ ছেড়ে পালানোর মাত্র দুদিন পর এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবান মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষ হতে হবে। এক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকরা আমাদের কাজের সমালোচনা করতে পারেন, যাতে আমরা উন্নতি করতে পারি।’ কিন্তু স্থানীয় মিডিয়া ওয়াচডগের অনুমান, আগস্টের মাঝামাঝি থেকে দেশটির ২০টি প্রদেশে কমপক্ষে ১৫৩টি মিডিয়া সংস্থা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। তালেবানরা সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমের প্রতি আচরণের জন্য ঘন ঘন সমালোচনার মুখে পড়ে। গণমাধ্যমকর্মীদের যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করা, সাংবাদিকদের আটক করা, এমনকি রাজধানী কাবুলে বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে শারীরিক নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে। মিডিয়াকর্মীদের ওপর তাদের হামলা আন্তর্জাতিক সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচও এক বিবৃতিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে। মহিলা সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালন সেখানে ছিল আরও বেশি হুমকির মুখে। সামার মতো মার্জানা সাদাতও বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানিয়েছেন তার আতঙ্কের কথা। তিনি জানান, ‘আমি বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য ভয়ংকর বার্তা পেয়েছিলাম। বন্ধুরা আমাকে বলল, ‘পালও, তালেবান আসছে।’ সাদাত আরও বলেন, ‘এখানে থাকলে তালেবান নয়, আতঙ্কই আপনাকে হত্যা করবে।’
Link copied!