শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এরপরও সাকিবকে সঙ্গে রাখতে চায় বিএসইসি

প্রকাশিত: ১১:০৫ এএম, নভেম্বর ১৮, ২০২২

এরপরও সাকিবকে সঙ্গে রাখতে চায় বিএসইসি

ক্রিকেটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার থেকে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও অলরাউন্ডার হতে চান সাকিব আল হাসান। ক্রিকেটের ২২ গজের মতো নতুন মাঠেও এরই মধ্যে আলোচনার পাশাপাশি জন্ম দিয়েছেন নানা সমালোচনার। হোটেল-মোটেল থেকে শুরু করে স্বর্ণসহ নানা খাতে বিনিয়োগ আছে তার। পুঁজিবাজারেও রয়েছে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ। আর সেখানেই একের পর এক নেতিবাচক খবরের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে সাকিবের নাম। কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে বিপুল মুনাফা তুলে নেওয়া একটি চক্রের সঙ্গে ক্রিকেট তারকার সম্পর্ক এখন ‘টক অব দ্য ক্যাপিটাল মার্কেট’। যদিও এসব ঘটনায় সাকিব বা তার প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংসের সরাসরি সম্পৃক্ততা পায়নি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ জন্য নানা আলোচনার পরও শুভেচ্ছা দূত হিসেবে সাকিবকে সঙ্গেই রাখতে চায় পুঁজিবাজারের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে পুঁজিবাজারে আকৃষ্ট করতে ২০১৭ সালে সাকিব আল হাসানকে শুভেচ্ছাদূত মনোনীত করে বিএসইসি। অন্যদিকে দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণায় দুর্নীতি দমন কমিশনও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে একই সম্মান দিয়েছিল। তবে শেয়ারবাজারে কারসাজির সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের সঙ্গে সাকিবের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় সেই সম্মান ফিরিয়ে নেয় দুদক। টেস্টও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দলের অধিনায়ককে আর কোনো কর্মকাণ্ডে আমন্ত্রণ না জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। তবে সাকিবকে নিয়ে এখনই তেমন কিছু কিছু ভাবছে না বিএসইসি। বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি তদন্তে নাম এলেও এর সঙ্গে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা পায়নি কমিশন। সেই সঙ্গে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সঙ্গে দেশের ইমেজ জড়িত থাকায় তাকে নিয়ে নেতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায় না বিএসইসি। কমিশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘সাকিব আল হাসান বাংলাদেশ জাতীয় দলের একজন তারকা ক্রিকেটার। তিনি দেশ ও বিদেশে ক্রিকেট খেলে অর্থ আয় করেন। চাইলেই সেই টাকা বিদেশে রেখে দিতে পারেন। তা না করে সাকিব দেশে বিনিয়োগ করছেন। এ জন্য তাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। কোথায় তাকে আমরা উৎসাহিত করব, তা না করে অনেকে তার বিরুদ্ধে লেগেছে।’ সাকিবকে নিয়ে কমিশনে নতুন কোনো আলোচনা নেই জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাকিবের নামে শেয়ার কেনাবেচা হলেও তিনি নিজে তো আর সরাসরি লেনদেন করেন না। তিনি দেশের জন্য কাজ করছেন। জাতীয় দলে খেলছেন। তাকে একটু মানসিক সাপোর্ট দেওয়া উচিত। কিন্তু আমরা তাকে অহেতুক চাপে রাখছি। গণমাধ্যমসহ সবার উচিত সাকিব আল হাসানের পাশে থাকা।’ জানা গেছে, বিএসইসির শুভেচ্ছাদূতের দায়িত্ব পাওয়ার প্রায় চার বছর পর ২০২১ সালে পুঁজিবাজারে ব্রোকারেজ হাউসের লাইসেন্স পায় সাকিবের প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংস। সাকিব নিজেই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। এ কোম্পানির ৩৩ শতাংশ অংশীদার তিনি। বাকি শেয়ারের মালিক সাকিবের বন্ধু আবুল খায়ের হিরু ও জাভেদ আজিজ মতিন। শেয়ার কারসাজির সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় সামনে এসেছে এ দুজনের নাম। জানা গেছে, বিএসইসির তদন্তে এখন পর্যন্ত ছয়টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে আবুল খায়ের হিরু, তার পরিবারের সদস্য ও প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে। এসব ঘটনায় তাদের বড় অঙ্কের জরিমানাও করা হয়েছে। আর কারসাজির সব ঘটনায় সাকিবের নামে শেয়ার লেনদেনের তথ্য পেয়েছে তদন্তকারীরা। বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের মে ও জুন মাসে কারসাজির মাধ্যমে ফরচুন সুজের শেয়ারের দাম ৯৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। তদন্তকালে সাকিবের নামে দুটি বিও হিসাব থেকে প্রায় ৪০ লাখ শেয়ার লেনেদেনের তথ্য পাওয়া যায়। এশিয়া ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজির তদন্তেও সাকিবের বিও হিসাব থেকে বড় ধরনের লেনদেনের তথ্য উঠে আসে। এ ঘটনায় দেশ আইডিয়াল ট্রাস্ট কো-অপারেটিভকে ৭২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া এনআরবিসি ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, ওয়ান ব্যাংক ও বিডিকম অনলাইনের শেয়ার নিয়ে কারসাজি তদন্তে সাকিবের নামে পরিচালিত বিও হিসাব থেকে বিপুলসংখ্যক শেয়ার লেনদেনের তথ্য পায় পৃথক তদন্ত কমিটি। এ ছয়টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির দায়ে আবুল খায়ের হিরু, তার বাবা আবুল কালাম মাতবর ও অন্য সহযোগীদের বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়। তবে সরাসরি সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় কোনোরকম শাস্তি পাননি সাকিব। বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সাকিব আল হাসান শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত—এমন কোনো প্রমাণ পায়নি বিএসইসি। তালিকাভুক্ত কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি চক্র খুঁজতে গিয়ে তদন্তে তার নাম আসে। তবে চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকায় সাকিব ও তার প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’ এসইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সাকিবের নামে বিও হিসাব পরিচালিত হলেও তিনি নিজে সরাসরি লেনদেন করেন না—নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে। ফলে তার ওপর কারসাজির দায় চাপানো ঠিক নয়। আর এ কারণেই শুভেচ্ছাদূত হিসেবে সাকিবকে রাখা নিয়ে নতুন কোনো চিন্তা করছে না কমিশন। অন্যদিকে এর আগে ২০১৮ সালে সাকিবকে শুভেচ্ছাদূত নিযুক্ত করে চুক্তি করে দুর্নীতি দমন কমিশন। পরের বছরই ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাবের তথ্য আইসিসিকে না জানানোর দায়ে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন তিনি। ওই বছরের ৩ নভেম্বর তাকে দুদকে ডাকা হয়। সেই সময় শুভেচ্ছাদূত ইস্যুতে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। তবে শেয়ারবাজারে কারসাজির সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় সাকিব আল হাসানের নাম আসায় কমিশন বিব্রত। দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী তার সঙ্গে দুদক এখনো চুক্তিবদ্ধ। কিন্তু বিভিন্ন বিষয়ে সাকিব আল হাসান এখন বিতর্কিত। আর বিতর্কিত কারও সঙ্গে দুদক জড়াতে চায় না।’
Link copied!