শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এসবিএসি ব্যাংকেও লুটেরা

প্রকাশিত: ০৮:৫৪ এএম, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১

এসবিএসি ব্যাংকেও লুটেরা

ডেইলি খবর ডেস্ক: এসবিএসি ব্যাংকেও লুটেরা। গ্রাহকের টাকায় সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেনের মালিকানাধীন রূপসা ফিশের নামে ৩৭৪ কোটি টাকার একটি ঋণপত্র খোলা হয়েছিল। পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কোম্পানিটির ঋণপত্র খোলার কথা শতভাগ মার্জিনে। কিন্তু ঋণপত্র খোলা হয়েছিল মাত্র ৫ শতাংশ মার্জিনে। আইনের তোয়াক্কা না করে কিছুদিনের মধ্যে মার্জিনের ওই অর্থ আমজাদ হোসেনকে ফেরতও দেওয়া হয়। শুধু রূপসা ফিশ নয়, আমজাদ হোসেনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর প্রায় প্রতিটিই ‘বড় মাত্রায় ছাড়’ পাচ্ছে এসবিএসি ব্যাংকে।আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে বড় মাত্রায় ছাড়ের চাঞ্চল্যকর তথ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য উপস্থাপন করে শিগগিরই কমিশনে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এছাড়া অনুসন্ধানের স্বার্থে এসবিএসি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওসহ নয় কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে তলব করা হয়েছে। দুদক সূত্রগুলো এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। এদিকে নানা চাপে ৭ সেপ্টেম্বর পর্ষদের কাছে চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে চিঠি দেন আমজাদ হোসেন। পরবর্তী পর্ষদ মিটিংয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। ১৯ আগস্ট দুদকের উপ-পরিচালক মো: গুলশান আনোয়ার প্রধানকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ করে কমিশন। দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, অনুসন্ধানে খুলনা বিল্ডার্স লিমিটেড নামে ঋণ নিয়ে অর্থ আÍসাতের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাস্তবে এ প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই। বিএফআইইউর তদন্ত কমিটিও এ প্রতিষ্ঠানের অসিবতত্ব খুঁজে পায়নি। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে চেয়ারম্যান থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাংক ঋণ অনুমোদন করান এবং তা তুলে আত্মসাৎ করেন। শুধু তাইই নয়, কর্মচারীদের মাধ্যমে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়েও অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে বিএফআইইউর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। দুদক সূত্র জানায়,এসবিএসি ব্যাংকের মতিঝিল শাখার গ্রাক আল আমিন কনস্ট্রাকশনের মালিক মো. মাসুদুর রহমানের নামে মঞ্জুরিকৃত এসওডি ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে লকপুর গ্রæপের কর্মচারী কামরুলের মাধ্যমে নগদ সাড়ে সাত কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। ২০১৯ সালের জুন ও জুলাইয়ে বিভিন্ন সময় ওই অর্থ তোলা হয়। অন্যদিকে ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ও পরিচালক ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন যৌথভাবে আদর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে তিন কোটি টাকার এসওডি ঋণসীমা মঞ্জুর করেন। প্রতিষ্ঠানটির মালিক হিসাবে দেখানো হয়েছে ক্যাপ্টেন মোয়াম্মেমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ই-সিকিউরিটিজের কর্মচারী জহিরুল ইসলামকে। পরে ঋণের অর্থ আমজাদ হোসেনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান খুলনা প্রিন্টং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের অনুকূলে দুই কোটি ও ফারইস্ট সোশ্যাল ফাউন্ডেশনের নামে এক কোটি টাকা পেমেন্ট অর্ডার ইস্যু করা হয়। একইভাবে মতিঝিল শাখার রাফি-মাহি করপোরেশনের মালিক একেএম আসিফ উদ্দিনের অনুকূলে তিন কোটি টাকা এসওডি মঞ্জুর করা হয়। যা পর্যায়ক্রমে ৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা উন্নীত হয়। আর এই আসিফ উদ্দিন হলেন লকপুর গ্রæপের একজন কর্মচারী। ১৬ আগস্ট এসবিএসি ব্যাংকের পর্ষদ সভায় আমজাদ হোসেন ও ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম হোসেন ওই দুটি ঋণের ক্ষেত্রেই নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন। সভায় মোয়াজ্জেম হোসেন এক বছরের মধ্যে ওই অর্থ ফেরত দেবেন বলে স্বীকার করেন। দুর্নীতির প্রমাণ হিসাবে ইতোমধ্যেই এসব তথ্য দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সংগ্রহ করেছেন। শিগগিরই এসব বিষয় উল্লেখ করে কমিশনে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে : আমজাদ হোসেনের ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধানে এসবিএসি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. রফিকুল ইসলামসহ ৯ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। বুধবার দুদক থেকে তলবের চিঠি সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক মো: গুলশান আনোয়ার প্রধান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ২৬ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। তলব করা অপর কর্মকর্তারা হলেন-এসবিএসি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: শওকত আলী, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো: মামুনুর রশীদ মোল্লা, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো: জিয়াউল লতিফ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মো: খালেদ মোশারেফ, ভিপি ও শাখা প্রধান এসএম ইকবাল মেহেদী, এফএভিপি ও অপারেশন ম্যানেজার মোহা. মঞ্জুরুল আলম, সিনিয়র অফিসার বিদ্যুৎ কুমার মন্ডল ও এমটিও তপু কামার সাহা।
Link copied!