শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার মধ্যেই স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৯:১১ এএম, জুন ৯, ২০২১

করোনার মধ্যেই স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য

করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন হাসপাতালের বরাদ্দ ব্যয়ে দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। দেশে এ মহামারির শুরু থেকেই স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় ও নিয়োগে দুর্নীতি চলছে। পাঁচটি হাসপাতালে ক্রয়, নিয়োগ ও কোয়ারেন্টাইন বাবদ পাঁচ কোটি টাকার দুর্নীতির তথ্য মিলেছে। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে টিআইবি। মহামারির সংকট মোকাবিলায় সমন্বয়হীনতা এবং পরিকল্পনার অভাবের বিষয়টিও তুলে ধরা হয় গবেষণায়। টিআইবির গবেষণায় দেখা যায়, মহামারির সময়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৮৫টি মামলা হয়েছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের হাতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের হেনস্তা ও হয়রানিমূলক মামলার শিকার হওয়ার বিষয়টি তথ্য নিয়ন্ত্রণের বড় প্রমাণ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মহামারি চলাকালে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি দমনের চেয়ে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ নিয়ন্ত্রণেই বেশি তৎপর ছিল সরকার। 'করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা, কভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ' শিরোনামে গবষেণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. জুলকারনাইন। প্রতিবেদনে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কেনাকাটা, নিয়োগ, সেবাদানের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়। দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে গবেষণায় বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের এক বছর তিন মাস পার হলেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি চিকিৎসা সুবিধার সম্প্রসারণ করা হয়নি। বরং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে ফেলে রাখা হয়েছে। ৩০০ আইসিইউ শয্যা, ১৬৬টি ভেন্টিলেটর এবং ৩৩৫টি হাই ফ্লো নেইজল ক্যানুলা এখনও ব্যবহার হচ্ছে না। প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারি মোকাবিলায় বিভিন্ন হাসপাতালের বরাদ্দ ব্যয়ে দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। পাঁচটি হাসপাতালে ক্রয়, নিয়োগ ও কোয়ারেন্টাইন বাবদ ৬২ কোটি তিন লাখ টাকা ব্যয় হলেও তাতে পাঁচ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। মহামারির সময়ে কারিগরি জনবলের ঘাটতি মেটাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগে জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গবেষণায় বলা হয়, টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে জনস্বার্থের চেয়ে ব্যবসায়িক সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কারণে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত টিকা অনুমোদনে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সার্বিকভাবে টিকার প্রাপ্তি, মজুদ ও টিকাদানে সমন্বয়হীনতার কারণে পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহ করা নিয়ে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখের বেশি প্রথম ডোজ টিকাগ্রহীতার দ্বিতীয় ডোজ অনিশ্চিত। প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের অগ্রাধিকার দিয়ে টিকা কার্যক্রমের আওতায় না নিয়ে আসায় সৌদি আরবে কর্মস্থলে ফেরত যাওয়া কর্মীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচের বোঝা মাথায় নিতে হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গত দেড় বছরে স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির যে চিত্র দেখা গেছে, সেগুলোয় গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, এ সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রয় নীতি লঙ্ঘিত হয়েছে। জনবল নিয়োগে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। উপযোগিতা নিশ্চিত না করে করোনা চিকিৎসার জন্য সাময়িকভাবে হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। পরে আবার বন্ধ করা হয়েছে। এতে জনগণের কোটি কোটি টাকার অপচয় হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। সেই বিষয়ে এখন পর্যন্ত বাস্তবসম্মত কোনো রূপরেখা নেই, কীভাবে এই টিকা সংগ্রহ এবং বাস্তবায়ন করা হবে। বরং দেখা যাচ্ছে, সকলের জন্য প্রবেশগম্য উপায়ে টিকাদান কার্যক্রম নিশ্চিত করা যায়নি। ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, এ সময়ে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তথ্য প্রকাশে সরকারকে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে দেখা গেছে। সত্যিকার অর্থে তথ্য নিয়ন্ত্রণের যে প্রবণতা তা আরও ঘনীভূত হয়েছে। তার কিছু দৃষ্টান্তও জনসমক্ষে এসেছে।
Link copied!